মাজার ভাঙ্গা লীগ

২৭০ পঠিত ... ১৬:৫৬, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪

44

হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনকালটি কেটেছে স্বপ্রণোদিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ম্যানেজারদের নৈরাজ্য সয়ে। জুলাই বিপ্লবের অনেক রক্ত-ত্যাগের মাধ্যমে সেই চেতনার ফ্রাংকেনস্টাইন সরানোর পর বাজারে এখন স্বপ্রণোদিত ইসলামি চেতনার ম্যানেজারদের আস্ফালন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্ষমতা হারানো হিন্দুত্ববাদী চেতনার নানারুপে ফিরে আসার ছলাকলা চলছে।

গড় আইকিউ ৭৪ হলে; মাথার খুলির আকার ছোটো হয়। ছোটো ঐ খুলির মধ্যে কতৃত্ববাদের ভূত থাকে। তখন চামচিকাদের মাতবরি করে বেড়ানোর লোভ হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, হিন্দুত্ববাদী চেতনা, ইসলামি চেতনার লোকেদের দলীয় টাকায় বসে খেয়ে অনেক চর্বি হয়; তখন সেই চর্বি গলাতে তারা নেমে পড়ে ম্যানেজারি করতে।

হিন্দুত্ববাদী চেতনা সমর্থিত আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালটিতে বাংলাদেশে ইসলামি চেতনার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। শেখ হাসিনা যখন লিপ সার্ভিস দিলেন, দেশ এখন থেকে মদিনা সনদের অধীনে চলবে; ওলামা লীগ তখন ঘন হয়ে এল। শেখ হাসিনা যখন লিপ সার্ভিস দিলেন, ইসলাম ধর্মের অবমাননা সহ্য করা হবে না; তখন ৫৭ ধারা হয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ব্লাসফেমি ল জায়গা করে নিলো। হেফাজতের মোল্লা শফি ফতোয়া দিলেন, নাস্তিক কতল করা ওয়াজিব। এর কিছুদিন পরেই মোল্লা শফি ঢাকায় শোকরানা মেহেফিলে শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দিয়ে খাসজমি ও নগদ টাকা হাসিল করলেন।

যেহেতু শেখ হাসিনা দিল্লির প্রণব মুখার্জি ও নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে সুবে বাংলাদেশের দেওয়ানী লাভ করেছিলেন; ফলে হিন্দুত্ববাদীরা মাথায় উঠে নাচতে শুরু করল। রবার্ট মুগাবের মতো বলশালী হিন্দুত্ববাদীরা নিজেদের আর্যজ্ঞান করে মুসলমানদের ‘রাজাকার’ তকমা দিয়ে পাকিস্তানে চলে যেতে আদেশ দিতে থাকল। আর দাড়ি-টুপি পরা কোনো লোককে ভাতের হোটেলের হাওরে পদ্ম পুলিশ ধরে নিয়ে এলে, জঙ্গিটারে নিয়া অস্ত্র উদ্ধারে যাও বলে আঁকুপাঁকু করতে শুরু করল আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি মামা ও খালারা।

শেখ হাসিনা এই যে নিজ হাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, হিন্দুত্ববাদী চেতনা ও ইসলামি চেতনার খিঁচুড়ি রান্না করলেন; তাতে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক পরিবেশে ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের পালে হাওয়া লাগল, মন্থরারা বলে উঠল, ঐ দ্যাকো বাংলাদেশে আমরাই মৌলবাদ ঠেকিয়ে রেখেছি। হিন্দু পুলিশ দিয়ে মুসলমান জনতাকে নির্যাতন করে হাসিনা তখন বৃটিশের ডিভাইড অ্যান্ড রুলের আনন্দ নিতেন। মোদির পার্টনার ডোনাল্ড ট্রাম্প অবয়বের অমিত শাহ বাংলাদেশের মানুষকে উঁইপোকা বলে প্রবল আনন্দ পেল।

ওলামা লীগ ও হেফাজত শেখ হাসিনার আমলে ক্ষমতাকাঠামোর কলাটা মূলোটা খেয়েই মোটাতাজা হয়েছে। এমনকি অলস আওয়ামী লীগ নেতার ঠিকাদারির কাজ ও ব্যবসা বাণিজ্য জামায়াতের লোকেরা দেখাশোনা করত। কারণ লীগ নেতার তখন নিপুণ প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন। ফলে কট্টর ইসলামপন্থা ক্ষমতার আবেশেই ছিল।

এখন আওয়ামী লীগের পতনের পর; তাকে ফিরিয়ে আনতে সংখ্যালঘু লীগ, ডাকাত লীগ, আনসার লীগ, রিকশা লীগ, সেইন্ট মার্টিনস লীগ হয়ে মাজার ভাঙ্গা লীগ সবই আসলে অন্তর্বতীকালীন সরকারের পতন ঘটিয়ে প্রতিবিপ্লবের দিবাস্বপ্ন। আয়না ঘরে অপ্রকৃতিস্থ একাত্তরের মাস্টামাইন্ড গোলাম আযম পুত্রের অনভিপ্রেত জাতীয় সংগীত বিতর্ক সৃষ্টি; আর সেই অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সম্বল করে ২০২৪-এর মাস্টারমাইন্ড হাসিনার ক্ষমতাঘর হারানোতে অপ্রকৃতিস্থ পালক পুত্র-কন্যারা প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠার অভিনয়ে জাতীয় সংগীত লীগ; সংস্কৃতির দধীচি; সবই ক্ষমতা হারানোকে এখনও বিশ্বাস করতে না পেরে কুঁদে বেড়ান। পরাজয় মেনে নিয়ে কান্দন ও আহাজারি বাদ দিয়ে নিজ নিজ কাজে মনোযোগ দেওয়া উচিত এই কংস মামাদের।

হাসিনা পুলিশ বাহিনীটিকে দলীয় বাহিনী করে যাওয়ায়; বিপুল সংখ্যক পুলিশ লীগ কাজে যোগ না দেওয়ায়; দেশের শান্তি শৃংখলা রক্ষায় যে সংকট দৃশ্যমান; সেই সুযোগে মাজার ভেঙে, খুলনায় কথিত অবমাননার আদিম অভিযোগ তুলে হিন্দু কিশোরকে নির্যাতন; চট্টগ্রামে মাদ্রাসার জানালা দিয়ে গণেশের মূর্তিতে পানি ঢেলে দেওয়া; কট্টর ইসলামপন্থীদের আধিপত্য বিস্তারের এরকম সব নৈরাজ্য দৃশ্যমান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কঠোরভাবে দমন করতে হবে এইসব অপচেষ্টা।

কট্টর ইসলামপন্থীদের একটা বিষয় খুব স্পষ্ট করে বোঝা উচিত, খোদ সৌদি আরবেই ইসলামের যুগোপযোগী সংস্কার চলছে। খোদার দয়ার ঐশ্বর্য্যমণ্ডিত ধনী সৌদি আরব যেখানে নারীর ক্ষমতায়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চা, সংগীত-চলচ্চিত্র জগতে সক্রিয় হয়েছে; সেখানে বাংলাদেশের আমাদের মতো গরিব মিসকিনেরা ওদের চেয়ে বেশি মুসলমান হয়ে গেলে ব্যাপারটা একেবারেই বেমানান দেখাবে।

 

২৭০ পঠিত ... ১৬:৫৬, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top