ভাটের আলাপ নয়, কল্যাণরাষ্ট্র ডেলিভার করুন

১২১ পঠিত ... ১৬:৩৭, আগস্ট ৩১, ২০২৪

22 (14)

আওয়ামী লীগ গত পনের বছরে শিখিয়েছে; অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান,ভোটাধিকার, মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্র শাসনে আপনার কেবল প্রয়োজন একটি ইজম বা মতবাদ। আওয়ামী লীগের ইতিহাসের আধ্যাত্মিক গুরু মুনতাসির মামুন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ইজম উদ্ভাবন করেছেন, স্বাধীনতার পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি। আওয়ামী লীগ তার ন্যারেটিভ বা বয়ান তৈরির পেছনে যত শক্তি খরচ করেছে; দেশের কল্যাণে তা করেনি।

বাংলাদেশে শিক্ষিত জ্ঞানী-গুনী শ্রেণীটি কেবল শিক্ষকতা, গবেষণা, সাংবাদিকতা, সংস্কৃতি চর্চা, জ্ঞান চর্চার মতো আনন্দময় কাজে কখনোই তৃপ্ত থাকতে পারেন না। তাই তো পকেটে সিভি নিয়ে তারা রাজনৈতিক দলের আশেপাশে ঘুর ঘুর করেন। অনেক সময় গুনী মানুষের কাছে দলীয় লোকেরা গিয়ে প্রেম নিবেদন করে তাকে প্রেমে ফাঁসিয়ে প্রজ্ঞা ও যশের শ্লীলতাহানি করেন।

বাংলাদেশের সমান বয়স আমার; বুদ্ধি হবার পর থেকে দেখছি; সরকারগুলো বুদ্ধিজীবীদের মাঝ থেকে কিছু লোককে গল্প দাদু হিসেবে নিয়োগ দেন। কিছু লোককে রুদালি হিসেবে নিয়োগ দেন। এদের কাজ প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের লালসালুর মাজারে ইজম বা মতবাদের ভাটের গল্প করা; আর এর মধ্যে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা দেশপ্রেমিক মানুষদের জন্য অশ্রুপাত করা।

ফলে গভর্ন্যান্স বা সুশাসনের ব্যাপারটা আলোচিত হয় কমই। কেউ কংক্রিট কোন প্ল্যান দিতে পারেন না; কি করে সিস্টেমটাকে দুর্নীতিমুক্ত করা যায়; কি করে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিতসা-শিক্ষা এই মৌলিক অধিকার পূরণের ব্যবস্থা রাষ্ট্র করতে পারে।

লাল সালুর মাজার দুটোর খাদেম বুদ্ধিজীবীরা খুব নতুন কোন মতবাদ নিয়ে আসতে পারে; তা কিন্তু নয়। একটি মাজার বৃটিশ আমলে কলকাতাকেন্দ্রিক বেঙ্গল রেনেসাঁর মতবাদ নিয়ে আসে। যেখানে বেঙ্গল নাম দিয়ে আসলে কট্টর হিন্দুত্ববাদের প্রাধান্য থাকে। আরেকটি মাজার পাকিস্তান আমলে ঢাকা কেন্দ্রিক মুসলিম রেনেসাঁর মতবাদ নিয়ে আসে যা শেষ্পর্যন্ত কট্টর ইসলামপন্থা। এই দুটি রেনেসাঁ ভারত নামের একটি কট্টর হিন্দুত্ববাদী অকল্যাণ রাষ্ট্রের পরিণতি এনেছে; আর পাকিস্তান নামের একটি কট্টর ইসলামপন্থী অকল্যাণ রাষ্ট্রের পরিণতি এনেছে।

লালসালুর মাজার দুটির আসল কাজ রাষ্ট্রকে খাদেমদের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠনের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। বুদ্ধিজীবীদের তারা রাখে স্যুডো দর্শন ও সংস্কৃতি আলোচনা দিয়ে সাধারণ মানুষকে কনফিউজড করে রাখার কাজে।

লক্ষ করেছি, এই বুদ্ধিজীবীরা শৈশবে সারাংশ অনুশীলন না করে কেবল ভাবসম্প্রসারণ শিখেছিলো। আর এরা কথার জাল এতো ছড়িয়ে দেয় যে তা গুটিয়ে আনতে পারে না। হিন্দু পুরোহিতরা সংস্কৃতি শ্লোক বলে যেভাবে কিছুই বুঝতে না পারা অডিয়েন্সের সম্ভ্রম আদায় করে, মুসলিম মওলানারা আরবি সুরা বলে যেভাবে কিছুই বুঝতে না পারা অডিয়েন্সের সম্ভ্রম আদায় করে; এই বুদ্ধিজীবীরা ঠিক তেমনি অসংলগ্ন আলাপের মধ্যে কিছু কঠিন রেফারেন্স ঢুকিয়ে তাক লাগিয়ে দেয়।

এসব থেকে সাধারণ মানুষের মাছ-মাংসের স্বাধীনতা আসে না, শিক্ষা-লাভের সুযোগ আসে না, অসুখ হলে ওষুধ আসে না, পরিধেয় আসে না, বাসস্থান আসে না। কিন্তু এইসব ভাট বকে বুদ্ধিজীবীর বেতন, সরকারি গাড়ি, বাসস্থান, ছেলেমেয়েকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানোর সুযোগ, এভারকেয়ারে স্বাস্থ্যসেবা, টেবিল ভর্তি খাবার, জবরজঙ্গ নক্সী পাঞ্জাবি, প্লট,পদক, পদবী এসে যায়।

পৃথিবীর সবচেয়ে সফল কল্যাণরাষ্ট্র জার্মানির জনগণের রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি বিকাশে যেসব বুদ্ধিজীবী কাজ করেছেন, তারা কেউ নিজে একটি পদ পাবার জন্য লালায়িত ছিলেন না। যেকারণে তারা সামাজিক সাম্য চিন্তা ও সম্পদের সুষম বণ্টনের কৌশলকে সামাজিক গণতন্ত্রের মাঝে অনুবাদ করতে পেরেছেন।

জার্মানির রাজনৈতিক দল সামাজিক গণতন্ত্রী দল ও খ্রিস্টিয় গণতন্ত্রী দল নিজস্ব ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দলীয় কর্মীদের বেসরকারি কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। খোকন বা মামুনকে চাঁদাবাজির লাইসেন্স দিয়ে বলে না, যা ব্যাটা কিছু করে খা।

জার্মানির সরকারি অফিসে জমি নিবন্ধন, পাসপোর্ট বা পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে গিয়ে কাউকে দালাল ধরতে হয় না। কাউকে স্যার স্যার করে মুখে ফেনা তুলতে হয় না। অনলাইনে সব কাজ হয়ে যায়। চা-মিষ্টি খাবার জন্য কাউকে পয়সা দিতে হয় না। ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত সরকারি অফিস।

জার্মানির স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী। এক ধরনের নগর সরকার চালু রয়েছে। ফলে সবাইকে কাজের জন্য রাজধানী বার্লিনে দৌড়াতে হয় না।

জার্মানির শিক্ষা-ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সেবা সর্বত্র পদায়ন হয় যোগ্যতার ভিত্তিতে। আর নির্বাচনী ব্যবস্থা এতো সুষ্ঠু যে প্রার্থীদের টাকা দিয়ে মনোনয়ন বা ভোট কিছুই কিনতে হয় না। ক্ষমতার পালাবদলে ধররে, মাররে, কাটরের মতো কোন আদিম দৃশ্য সৃষ্টি হয় না।

জার্মানিতে আলাদা করে প্রগতিশীল, ধর্মপন্থী এইসব বিভাজন তৈরি করে ভ্যাজর ভ্যাজর নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যীশুর পূজা বা খ্রিস্টান ধর্মের সম্মেলন হয় না। কারো ধর্ম পালনের প্রয়োজন হলে সে চার্চে যায়।

বাংলাদেশে অসততা ঢাকতে মুজিব কোট পরে দেশপ্রেম অথবা টুপি পরে  ধর্মপ্রেম জাহির করতে হয়। দেশ ডাকাতির ছলাকলা যখন দেশপ্রেম ও ধর্মপ্রেম; তখন যে কোনো জনযুদ্ধ বা জন অভ্যুত্থানের পর শুরু হয়, জনগণকে স্বপ্ন দেখানো। পরিবর্তনের কাজল রেখা শহীদেরা কবরে ঘুমিয়ে থাকে; আর কাঁকন দাসীরা পরিবর্তনের সুফল কুড়ায়। প্রতিটি রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়ে দাঁড়ায় গুটিকয়ের ভাগ্য পরিবর্তনের লাইসেন্স। দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে কখনোই কোন জন যুদ্ধ বা জন অভ্যুত্থান কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি।

সেই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমরা কোন চর্বিত চর্বন মতবাদের বয়ান শুনতে চাই না। আমরা চাই একটি সুশৃখল রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা; যা কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে পাঁচ বছরের মধ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছাইগাদা থেকে মাত্র পাঁচ বছরে জার্মানি একটি সুশৃংখল রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলো। সুতরাং পারলে কিছু ডেলিভার করুন। আধ্যাত্মিকতা আমরা রুমী-রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের মাঝে খুঁজে নেব। কে কোন সংস্কৃতি চর্চা করবে, কোন পোশাক পরবে এগুলো ব্যক্তির ইচ্ছার স্বাধীনতা; সেখানে রাষ্ট্রের ঠিক করে দেয়া বা চাপিয়ে দেবার অধিকার নাই।

রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে দারিদ্র্যের অগমে দুর্গমে বিশীর্ণ মানুষের থালায় জুঁই ফুলের মতো সাদা ভাত, রোগশয্যার পাশে বন্ধু ডাক্তার, শিশুর সামনে দ্বিতীয় জন্ম দিতে সক্ষম শিক্ষক পিতা, বসবাসযোগ্য গৃহকোণ, মানবিক পরিধেয়; আর নাগরিক হিসেবে মর্যাদা।

১২১ পঠিত ... ১৬:৩৭, আগস্ট ৩১, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top