হিন্দু-মুসলমান কুঁচকুঁচানি থেকে বেরিয়ে আসুন

২৯৪ পঠিত ... ১৬:১৮, আগস্ট ১০, ২০২৪

11

বাংলাদেশে ২ শতাংশ মুসলমান মনে করে অখণ্ড পাকিস্তান ভালো ছিল; ২ শতাংশ হিন্দু মনে করে অখণ্ড ভারত ভালো ছিল। এরা আদর্শিকভাবে ১৯৭১ সালের পরাজয় ও ১৯৪৭ সালের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। যেহেতু এরা সংখ্যায় খুব কম, তাই ২ শতাংশ মুসলমান বিএনপির কোলে বসে হিন্দু ও ভারত বিদ্বেষ প্রচার করে। ২ শতাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের কোলে বসে মুসলমান ও পাকিস্তান বিদ্বেষ প্রচার করে। সারাদিন এদের কাজ একটাই; তা হচ্ছে বিদ্বেষ প্রচার। ফলে এরা চোখে পড়ে বেশি।

বিএনপি ক্ষমতা থেকে চলে গেলে ঐ ২ শতাংশ মুসলমান যারা জামায়াত নামে পরিচিত তারা প্রথম রুদ্ররোষের মুখে পড়ে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে ঐ ২ শতাংশ হিন্দু যারা বিজেপির সমর্থক তারা প্রথম রুদ্ররোষের মুখে পড়ে।

যেহেতু ঐ দুই শতাংশ মুসলমান ও হিন্দু ধর্মীয় চিহ্ন যুক্ত পোশাক পরে; ফলে ক্ষমতা পরিবর্তনের ঝড়-ঝাপটায় অন্যান্য ধর্মপ্রাণ - ধর্মীয় পোশাকযুক্ত নিরীহ মানুষও হামলার মুখে পড়ে। কারণ ২ শতাংশ কট্টর মুসলমানের বিদ্বেষ প্রচার ইসলাম ধর্মের প্রতি নেতিবাচকতা তৈরি করে জনসমাজে। একইভাবে ২ শতাংশ কট্টর হিন্দুর বিদ্বেষ প্রচার হিন্দু ধর্মের প্রতি নেতিবাচকতা তৈরি করে জনসমাজে।

ফেসবুকে খেয়াল করবেন, ২ শতাংশ কট্টর মুসলমান এমনভাবে কথা বলে, যেন ইসলাম ধর্ম তাদের বাপের সম্পত্তি; তাদেরকে কে যেন ইসলামি চেতনা শিক্ষা দেবার দায়িত্ব দিয়েছে। আর ২ শতাংশ কট্টর হিন্দু এমনভাবে কথা বলে যেন, বাঙালি সংস্কৃতি তাদের বাপের সম্পত্তি; তাদেরকে কে যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিক্ষা দেবার দায়িত্ব দিয়েছে।

এই ২ শতাংশ কট্টর মুসলমানের ডিএনএ-তে বৃটিশ আমলে হিন্দু জমিদারদের দ্বারা নিঃগৃহীত হবার স্মৃতি আছে। কট্টর ২ শতাংশ হিন্দুর স্মৃতিতে পাকিস্তান আমলে মুসলমান জমিদারদের দ্বারা নিঃগৃহীত হবার স্মৃতি আছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব মানুষের ডিএনএ-তে শাসকদের দ্বারা নিঃগৃহীত হবার স্মৃতি আছে। কিন্তু তারা ঐ তিক্ততার স্মৃতি লালন বা চর্চা করে না। কিন্তু কট্টর ইসলামপন্থী ও কট্টর হিন্দুত্ববাদী তার ডিএনএ স্মৃতির যাবতীয় তিক্ত স্মৃতি চর্চা করে; ফলে তারা কখনোই ইতিহাসের ট্রমা থেকে বের হতে পারে না।

ইতিহাসের ট্রমা থেকে বের হতে না পারায় জায়নিস্টদের উস্কানিতে ইজরায়েল রাষ্ট্রটি প্যালেস্টাইনে গণহত্যা শুরু করেছে। এই একই ব্যাপার ঘটেছে কট্টরপন্থী মুসলমান ও কট্টরপন্থী হিন্দুদের ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশে বসে কট্টর ইসলামপন্থীরা ভারতের শাসকগোষ্ঠীর আচার-আচরণ দেখে, সমগ্র ভারতকে মূল্যায়ন করে। কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের পাকিস্তান সম্পর্কে ধারণা সেখানকার শাসকদের আচার-আচরণ দেখে। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের সবচেয়ে খারাপ লোকগুলো ক্ষমতা-কাঠামোতে উঠে আসে; যাদের ডিএনএ-তে রক্তের নেশা।

অথচ ভারত ও পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাধারণ মানুষের মতো। সেখানকার জেন জি'রা হুবহু বাংলাদেশের জেন'জিদের মতো; এইসব ধর্ম বর্ণ গোত্রের পার্থক্য তাদের মনোজগতে নেই। ওদের পৃথিবী আনন্দময় এক পৃথিবী। এরা চিন্তার জগতে এত এগিয়ে গেছে যে দেশগুলোর ক্ষমতা-কাঠামো তাদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে অনেকখানি। এই জেনজি'রাই পাকিস্তানে তৃতীয় রাজনৈতিক দল তেহেরিক-ই-ইনসাফ, ভারতে আম-আদমি পার্টিকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায়িত করেছে। এইদল দুটি দেখবেন কোনো রকমের ধর্মীয় বিদ্বেষ চর্চা করে না। এরা এক অর্থে বিশ্বনাগরিক; রাষ্ট্রীয় সীমান্তরেখাকে এরা ইন্টারনেটের ইরেজার দিয়ে মুছে দিয়েছে।

কেউ যদি একবিংশের পৃথিবীতে সমসাময়িক মানুষ হিসেবে বসবাস করতে চায়; তবে তাকে বিদ্বেষ চর্চার তিক্ত নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি ও বৈষম্য। এই দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই এখন অগ্রাধিকার।

কাজেই শতাব্দী পুরো হিন্দু-মুসলমান কুঁচকুঁচানি থেকে বেরিয়ে মানুষ আত্মপরিচয় উদযাপনই একবিংশের জীবন-চর্যা। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে রংপুরে শহীদ সাঈদ আর সিলেটে শহীদ রুদ্রের রক্তের আহবান হচ্ছে ধর্মীয়-সম্প্রীতি।  

২৯৪ পঠিত ... ১৬:১৮, আগস্ট ১০, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top