হিন্দু-মুসলিম বিভাজন: দেশডাকাতির ফন্দি

১৫৮ পঠিত ... ০৪:১৩, আগস্ট ০৭, ২০২৪

WhatsApp Image 2024-08-06 at 16.11.02_2cdf7093

বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে মানুষের একটাই ধর্ম; তা হচ্ছে উদয়াস্ত পরিশ্রম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই জনপদে সামষ্টিক প্রার্থনা ক্ষরা ও বন্যা থেকে ফসল রক্ষার জন্য। পাল যুগ, সেন যুগ, সুলতানী আমল, নবাবী আমলের বাংলাদেশ সম্পন্ন কৃষক ও কারিগরের সম্প্রীতিময় জীবনের ইতিহাস। এখানে প্রতিটি ধর্ম শান্তি ও সাম্যের বারতা নিয়ে এসেছে।

বৃটিশ শাসকেরা নবাব ও মুঘলদের সরিয়ে ক্ষমতায় আসার কারণে তাদের কাজই ছিলো নবাবী আমল ও মুঘল আমলকে দুঃশাসন বলে একটি ন্যারেটিভ তৈরি করা। বাংলা-আরবি-ফার্সি শিক্ষাকে অশিক্ষার তকমা দিয়ে তারা প্রচলন করে ইংরেজি শিক্ষা।

বৃটিশেরা প্রথম কলকাতায় রাজধানী স্থাপনের কারণে সেখানে দ্রুত ইংরেজি শিক্ষা ও আর্য স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়ে।

ইংরেজি শিক্ষা ও আর্যস্বপ্নে বিভোর স্থানীয়দের তারা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। লর্ড কর্ণওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদারি লাভ করে স্থানীয় কোলাবরেটরেরা। বৃটিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে হত্যা করা এক কোটি মানুষকে। ভেঙ্গে দেয়া হয় ঢাকা আড়ং। সম্পন্ন কৃষক ও কারিগর সমাজকে দ্রুত দরিদ্র ও সম্বলহীন করে ফেলা হয়।

কলকাতায় বৃটিশেরা লোভ দেখায়, যে-ই হিন্দু-মুসলমান বিভাজনে রাজি হবে, তাকেই পুরস্কৃত করা হবে। যে-ই নবাবী ও মুঘল আমলকে অন্ধকার যুগ বলে ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠায় রাজি হবে; তাকেই উচ্চ মর্যাদায় আসীন করা হবে।

বাংলাদেশের হিন্দু ও মুসলমান কৃষক ও কারিগরকে সিসটেটিক ক্লিনসিং করে ও দুঃস্থ করে দিয়ে একে "অনগ্রসর জনপদ"-এর তকমা দেয়া হয়। বৃটিশেরা বুদ্ধি করে হিন্দু প্রশাসক নিয়োগ করে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়; মুসলিম প্রশাসক নিয়োগ করে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়। প্রশাসকের বর্বরতা ও জমিদারের শোষণের ফলাফল হিন্দু-মুসলমান চিরস্থায়ী বিভাজন। এই বিভাজন কয়েক প্রজন্মের পারস্পরিক বিদ্বেষে ডিএনএ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কৃষক প্রজা আন্দোলনের মাধ্যমে জমিদারি প্রথা তথা বৃটিশ উপনিবেশ উৎখাতের লড়াই শুরু করে। হিন্দু-মুসলমান উভয় কৃষক লক্ষ্য করে, জমিদারেরা সম্পদ লুণ্ঠন করে কলকাতায় সেকেন্ড হোম নির্মাণ করছে; ছেলেমেয়েকে পূর্ববঙ্গে না রেখে কলকাতায় ইংরেজি শিক্ষার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।  

বৃটিশ যাবার আগে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন কাজে লাগিয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটো রাষ্ট্র তৈরি করে। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর পূর্ববঙ্গে ডিএনএ-র হিন্দু-মুসলমান বিভাজনকে কাজে লাগায় পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক ধাঁচের ইসলামি ক্ষমতা-কাঠামো। ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন হলেও সেখানে ডিএনএ-র হিন্দু মুসলমান বিভাজন সক্রিয় থাকে ক্ষমতা কাঠামোতে লুকিয়ে থাকা হিন্দুত্ববাদের খেলায়। পূর্ববঙ্গকে ঘিরে পাকিস্তান ও ভারত দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। এটা আসলে ইসলামপন্থা ও হিন্দুত্ববাদের ভাগ-বাটোয়ারার দ্বন্দ্ব। এর সঙ্গে ধর্মগুলোর সম্পর্ক খুবই কম।

রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাঝ দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু ডিএনএ-র হিন্দু-মুসলমান বিভাজন সক্রিয় থাকে। আপনি ফেসবুকে পোস্ট ও কমেন্টে চোখ রাখলে দেখবেন, কট্টর ইসলামি ডিএনএ এসে হিন্দুদের মা-লা-উ-ন বলে গালি দেয়; আর কট্টর হিন্দুত্ববাদী ডিএনএ এসে মুসলমানদের ছাগু বলে গালি দেয়।

এই বিভাজন ও বিদ্বেষের বেনিফিশিয়ারি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তারা দেশ ডাকাতি করে এই বিভাজন জিইয়ে রেখে। আওয়ামী লীগ হিন্দু প্রশাসক, পান্ডা, বুদ্ধিজীবী লেলিয়ে  দিয়ে শায়েস্তা করে দরিদ্র মুসলমানদের। বিএনপি মুসলমান প্রশাসক, পান্ডা ও বুদ্ধিজীবী লেলিয়ে দিয়ে শায়েস্তা করে হিন্দুদের। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে  দাড়ি টুপি দেখলেই জঙ্গি বলে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে হিন্দু বাড়ি ও মন্দিরে হামলা ঘটানো হয়।

বাংলাদেশের কৃষক পরিবারের ছেলেরা বৃটিশ হিন্দু ও মুসলমান জমিদার সেজে সাধারণ হিন্দু ও মুসলমান নির্যাতন করে নিজেদের আধিপত্য জানান দেয়। এরা নিজেদের রুলিং এলিট মনে করে। ফেয়ার এন্ড লাভলি মেখে নিও রুলিং এলিট হিন্দু ও মুসলমান ভ্রান্ত আর্যস্বপ্নে অন্ধ হয়ে থাকে। এই কারণে ভি আইপি কালচারের নিকৃষ্টতম প্রদর্শন করে এরা। ক্ষমতায় থাকলে চর্বি জমায়, মুখ চকচক করে, ক্ষমতাচ্যুত হলে চেহারা হয়ে যায় রবার্ট মুগাবে কিংবা গাদ্দাফির মতো।

দেশ ডাকাতি করে বিদেশে পাচারের এই যে পুনরাবৃত্তিকর বিভাজনের খেলা যাতে সাধারণ মানুষ ধরতে না পারে; সেজন্য ১৭৫৬ সাল থেকে আজ অবধি সাধারণ মানুষকে পুষ্টিহীন করে রাখার খেলাটি খেলে চলেছে এই দুই রকমের ডাকাত দল।

কেউ আমাকে একবার বোকা বানালে সেটা তার জন্য লজ্জার। কেউ আমাকে দুইবার বা বারবার বোকা বানালে, সেটা আমার জন্য ভীষণ লজ্জার।

১৫৮ পঠিত ... ০৪:১৩, আগস্ট ০৭, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top