করোনা বিশ্বকে থামিয়ে দিলেও বাংলাদেশকে থামাতে পারবে না: চাইনিজ বিশেষজ্ঞ দলের কাল্পনিক রিপোর্ট

৬৬৭ পঠিত ... ২১:৪০, জুন ২৮, ২০২০

বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে চীন থেকে একদল গবেষক আসে বাংলাদেশে। পর্যবেক্ষণ শেষে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে গবেষকদলের হতাশা ও অসন্তুষ্টির খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা গেলেও, সরকার থেকে জানা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন খবর। সরকারের ভাষ্যমতে, চীনা গবেষক দল বাংলাদেশের করোনা সতর্কতা ও করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। সরকারের নানান পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসাও নাকি তারা করেছেন।

আমরা আমজনতা, সরকারের কথায় আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস অবিচল আছে (!)। সে বিশ্বাস থেকেই চীনা গবেষকদলের সন্তুষ্টির কারণগুলো জানতে আমরা কল্পনায় তাদের একটি সাক্ষাৎকার নিই। কাল্পনিক সাক্ষাতকারেও পাওয়া গেলো সরকারি বক্তব্যের মতোই একরকম সুর। চাইনিজ ভাষায় দেয়া এই সাক্ষাৎকারকে eআরকির সিঙ্গাপুর, কানাডা ও লস অ্যাঞ্জেলসের পাঠকদের সুবিধার্থে বাংলায় তর্জমা করে দেয়া হলো (আমাদের প্রতিবেদক নিজেই চাইনিজ না জানায় পুরাটাই বানিয়ে লিখেছে, এমন অভিযোগও রয়েছে‌)... 

eআরকি: কেমন আছেন আপনারা?
চীনা গবেষক দল: আপাতত হোম কোয়ারেন্টিনে আছি। কয়েকজন অসুস্থ!
: কী বলেন! করোনা নাতো?
: হতে পারে। বাট সবার করোনা না। বেশিরভাগই উচ্চ রক্তচাপ, হতাশায় ভুগছে, বাংলাদেশ থেকে আসার পর কেউ কেউ নানাবিধ ফোবিয়ায়ও ভুগছে।
: উচ্চ রক্তচাপ, ফোবিয়া এসব কেন?
: বাংলাদেশের করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের নমুনা দেখে নিজেদেরকে অসহায় মনে হচ্ছে অনেকের। অনেকে জীবনে এমন মিরাকল না দেখায় এটাকে প্যারানরমাল ভেবে কিছুক্ষণ পর পরই মূর্ছা যাচ্ছে।
: সে প্রসঙ্গেই আসছিলাম, জাস্ট ভদ্রতা করে হেলথের খবর নেয়া... বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কেমন দেখলেন?
: ভালো।
: কোনটা ভালো? মানে করোনা ছড়াইছে ভালোমতো নাকি নিয়ন্ত্রণের অবস্থা ভালো?
: একটু বিশ্লেষণ করে যদি বলি, আমরা শুরুতে হতাশ হয়েছিলাম। কারোরই মুখে মাস্ক নেই। সবাই গলায় বা থুতনিতে মাস্ক পরে আছে। কেউ কেউ মাস্ক পরেছে, তবে তারা আবার মাস্ক খুলে অন্যের সাথে সিগারেট শেয়ার করছে। মানুষজন মাস্ক ট্রায়ালও দেয় দেখলাম, একজনের ট্রায়াল দেয়া মাস্ক এরপর আরো অনেকে ট্রায়াল দিচ্ছে। এইসব দেখেই আমরা প্রথমে হতাশ ও অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম।
: পরবর্তীতে হতাশা কীভাবে কাটলো?
: কয়েকদিন বাংলাদেশে থাকায় আমরা বাঙালিদের ব্যাপারে কিছু তথ্য জানতে পারি। এই যেমন বাঙালির হাঁচি-কাশি থুতনি দিয়ে বের হয়। সো ভয়ের কিছু নেই। এমনই নানান ব্যাপার...
: করোনা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ভূমিকাকে কীভাবে মূল্যায়িত করবেন?
: এ ব্যাপারে সরকারি পর্যায়ের একজন মোটিভেশনাল স্পিকারের মতো আমিও বলতে চাই, 'লেটস ফেইস ইট'! এই লাইনটাই নাকি বাংলাদেশের করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র। করোনাকে ভয় না পেয়ে তাকে ফেস করার সাহস দেখালেই সমস্যার সমাধান হবে। এতে দুইটা উপকার। প্রথমত করোনাভাইরাস ভয়ে আক্রমণ করবে না, দ্বিতীয়ত, আক্রমণ করলেও দেশ হের্ড ইমুনিটির দিকে যাবে।
: কী বলেন! আপনারা এই কথা বিশ্বাস করলেন?
: আরেহ ভাই। বিশ্বাস করবো না? কথায় তো লজিক আছে। আমরা এই যে এত কষ্ট করে সংক্রমণ এক লাখের নিচে রাখলাম, এর কোনো দরকার ছিল না। সবাইকে আক্রান্ত করায়ে ফেলতে পারলে এতদিন আমরা হার্ড ইমিউনিটির দিকে চলে যেতাম, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দরকারই হতো না!
: আর কী কী পদক্ষেপে আপনারা খুশি হয়েছেন?
: ৪টা ওয়েবসাইটের পেছনে ১০ কোটি টাকা খরচের পদক্ষেপ করোনাভাইরাসকে অনেকটাই কুপোকাত করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসকে এমন গুরুত্ব পৃথিবীর কোন সরকার দেয়নি। বেশি গুরুত্ব পেয়ে সম্ভবত করোনাভাইরাস বাংলাদেশের উপর সন্তুষ্ট, সংক্রমণ কম করছে।
: বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেমন দেখলেন?
: দেখিইনি। শুনেছি। তারা দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। লকডাউন দিয়ে তা কার্যকর করার জন্য নিজেরাও কেউ অফিসে যায়নি। জানেনই তো, উপদেশের চেয়ে দৃষ্টান্ত ভালো। যারা এমন আদর্শ সেট করতে পারে, নিশ্চয়ই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এমন দক্ষ হাতই প্রয়োজন।
: সংক্রমণ কমিয়ে রাখতে টেস্ট কম করার স্ট্রেটেজি কেমন লাগলো?
: টেস্ট আসলে ঠিকই আছে। করোনা এমনও কোনো ভাইরাস না যে এত টেস্ট করতে হবে, দেখেন না আমরা কত দুর কন্ট্রোল করে ফেললাম! আসলে করোনাই সুবিধা করতে পারছে না। দিনের বেলায় আছে আপনাদের লকডাউন, রাতের বেলা আছে অনলাইন সভা, সেমিনার, লাইভ। ওইসব দেখে দেখে করোনা লেজি হয়ে গেছে। সংক্রমণ করার কথাই ভুলে যাচ্ছে। যাও একটু আধটু সংক্রমণ হচ্ছে ওইগুলা আসলে থার্ড পার্টি অ্যাপ দ্বারা।
: অন্যান্য দেশের পদক্ষেপ বিবেচনায় বাংলাদেশে ইউনিক কী দেখলেন?
: করোনা যে সভ্যতাকে থামিয়ে দিতে পারবে না, এই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও পাইনি। অর্থনীতি সচল রাখায় কিছু পেশার মানুষের ডেডিকেশন বিস্ময় জাগিয়েছে। চোরেরা থেমে নেই, প্রয়োজনে লকডাউনের বেড়া চুরি করছে। চাল চুরিতো আছেই। দূর্নীতিবাজরাও নিষ্ঠার সাথেই কাজ করছে। ইন্টারেস্টিং লেগেছে টেস্ট না করেই রেজাল্ট দেয়াটা।
: করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ডেডিকেশন আপনাদের মুগ্ধ করেছে?
: অবশ্যই মাহবুবুল আলম হানিফ। সংক্রমণ ঝুঁকি থাকা সত্বেও বাংলাদেশের মতো নিরাপদ দেশ ছেড়ে কানাডা গিয়েছেন, শুধুমাত্র দেশের মানুষকে রক্ষায় কিছু টিপস আনার জন্য।
: করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ থেকে কী কী নিতে চায় চীন?
: জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পুরো টিমকে আমরা নিতে চাইবো। আশা করছি তাদেরকে দিয়ে ২ দিনের মধ্যেই চীনের সবাইকে টেস্ট করা সম্ভব হবে। সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় এরচেয়ে ভালো কোন অপশন আমাদের নেই।

৬৬৭ পঠিত ... ২১:৪০, জুন ২৮, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top