[এই সাক্ষাৎকারের সকল কিছু কাল্পনিক। কোনো সুস্থ মানুষ কিংবা ভিসি, কারো সঙ্গেই এর কোনো সম্পর্ক নেই।]
শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়ার সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে প্রশ্ন করায় খুব রাগ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জনাব মীজানুর রহমান। মেসের কথা শুনেই তার মাথায় যেন রক্ত উঠে গেছে। কিন্তু কেন? তিনি তো শুধু শুধু রাগ করার পাত্র নন। এর পেছনে নিশ্চই আছে কোনো নিগূঢ় রহস্য।
আমরা তাই ভয়ে ভয়ে মেসেঞ্জারে তার এক ফেক আইডিতে নক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'স্যার আসবো?'
উত্তরে স্যার লিখলেন, 'হ্যাঁ, ভেতরে আসো।'
রিপ্লাই দিয়েই যেন স্যার সম্বিত ফিরে ফেলেন। তারপর গোটা পঞ্চাশেক রাগের ইমো দিয়ে বললেন, 'তুই মিসকিনের বাচ্চা নাকিরে? নক দিয়েছিস মেসেঞ্জারে। এখানে আবার ভেতরে আসা-আসির কি আছে রে?' এটুকু বলেই স্যার নিজের প্রথম রিপ্লাইটা রিমুভ করে দিলেন।
ওসবে অবশ্য আমরা কিছু মনে করলাম না। কথায় আছে, 'গুরুজনের গালিও আশির্বাদ'। তাই আবারো কাঁপা হাতে লিখলাম, 'স্যার আপনার রাগ কমলে কাইন্ডলি একটা নক দিয়েন। আপনার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলাম।'
সাক্ষাৎকারের কথা শুনে স্যার একটু নড়েচড়ে বসলেন। দুটো সেন্টি ইমো পাঠিয়ে কল দিলেন নিজেই। দিয়ে বললেন, 'আসলে মিসকিনের বাচ্চাগুলো আমার মাথা একেবারে খারাপ করে দিয়েছে। কিছু মনে করবেন না।'
- কেন স্যার, শিক্ষার্থীরা আবারো কিছু করেছে নাকি?
- আরে ওই মিসকিনদের কথা বলছি না। আমি আমার বাচ্চাগুলার কথা বলছি। খুব জ্বালায়। ওদের মাও ওদের সামলাতে পারে না।
ওয়ার্ক ফ্রম হোমের এই সময়ে স্যারকে ফ্যামিলি মুডে দেখে আমরা তাই ডিরেক্ট পয়েন্টে চলে গেলাম। বললাম, 'স্যার মেসের ভাড়া নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছে শুনলাম।'
- শুনেছেনই যখন তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন? মিস..
স্যার কথা শেষ করার আগেই এবার আমরা বললাম, 'স্যার আপনি আমাদের গালি দিতে পারেন না। আমরা সাংবাদিক। '
- আরে আপনাকে গালি দিবো কেন। মিসকল মারতেছে কে যেন। এটাই বলতে চাচ্ছিলাম।
- স্যার মেসের ভাড়া নিয়ে আপনার জায়গাটা যদি ক্লিয়ার করতেন তাহলে ভাল হত। আমরা এটাই জানতে চাচ্ছি।
স্যার এবার গলা খাকরে বললেন, 'দেখুন, মেসের ভাড়ার ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই। আর এই মেস শব্দটায় আমার এলার্জি আছে।
- মেসের সাথে আপনার কিসের এত শত্রুতা স্যার?
- মেস মানেই তাস পেটানো। মদ খেয়ে মাতলামি করা একদল বখাটে ছাত্রদের আড্ডা। ছাত্র অবস্থায় আমি এজন্য মেসে থাকতাম না। আমি ফাইভ স্টার হোটেলে থেকে পড়াশোনা করতাম।
এটুকু বলেই স্যার যেন নস্টালজিক হয়ে পড়লেন। তিনি বলতে লাগলেন, 'আমার হোটেলের রুমে কতরকম সুযোগ সুবিধা ছিল! তবে ওসব আমাকে লক্ষ্য থেকে টলাতে পারিনি। আমি শুধু পড়াশোনা করতাম। এ কারণেই আমি লক্ষ্যে পৌছেছি।'
তবে সে সময় 'জীবনের মূল লক্ষ্যটা আসলে যুবলীগের পদ পাওয়া ছিল কিনা', এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে ভুগে স্যার দু মিনিট ব্রেক নেন। তারপর আরও বলেন, 'অন্তত ফোর স্টার হোটেলে থাকলেও জীবনে অনেক কিছু শিখতে পারবে। কিন্তু মেসে থাকলে আসলে জীবনে শিক্ষা অর্জনের সুযোগটাই থাকে না।'
আমরা মুগ্ধ হয়ে স্যারের কথা শুনছিলাম। স্যার তো এমনই হওয়া উচিৎ। তার কথাই তো ঠিক৷ শিক্ষার্থীদের তো মেসে থাকাই ঠিক না। শিক্ষার্থীরা থাকবে ফাইভ স্টার হোটেলে৷ তবেই তো হবে মানুষের মত মানুষ।
আমরা ফোন রাখার আগে শেষ প্রশ্ন করতে যাবো কিন্তু ততক্ষণে আমাদের মেগাবাইট শেষ হয়ে গিয়ে লাইনটা কেটে গেলো।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন