আমি হিমুও না, মিসির আলিও না : হুমায়ূন আহমেদ

৩১০৭৩ পঠিত ... ১৫:৩৩, জুলাই ১৯, ২০১৬

২০০১ সালের শেষ দিককার কথা। আমি তখন প্রথম আলোর ফিচার বিভাগের প্রদায়ক। এক সন্ধ্যায় বিখ্যাত আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন ভাই বললেন, ‘নুহাশ পল্লী যাচ্ছি। সিমু, যাবা নাকি?’ তিনি তখন প্রথম আলোয় কাজ করেন। আমি মামুন ভাইকে বললাম, ‘হ্যাঁ, যাওয়া যায়। কখন যাবেন?’ মামুন ভাই বললেন, ‘এখুনি যাচ্ছি। গেলে চলো।’ আমি এক কাপড়েই সহকর্মী নওরোজ ইমতিয়াজ এবং মামুন ভাইয়ের সঙ্গে নুহাশ পল্লীর দিকে রওনা দিলাম। যদিও এর আগে দুই-তিনবার নুহাশ পল্লীতে অফিসের কাজে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু এবার শুধুই বেড়ানো আর আড্ডা দেওয়ার জন্য যাওয়া। মনে আছে, সেবার মামুনভাইসহ গভীর রাতে গিয়ে পৌঁছেছিলাম নুহাশ পল্লী। সে রাতে আর দেখা হয়নি হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে। পরদিনও না। তিনি শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সন্ধ্যায় খাওয়াদাওয়ার পর বসল আড্ডা। আমি মুগ্ধ শ্রোতা। আলাপ এক পর্যায়ে গিয়ে পড়ল জ্যোতির্বিজ্ঞানে। মূল আড্ডা থেকে সরে গিয়ে তিনি আমাকে উনার লেখার রুমে ডেকে নিয়ে গেলেন। তিনি তাঁর টেলিস্কোপ দেখালেন, যেটা নক্ষত্রের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও ঘোরে। আমি মুগ্ধ সেই টেলিস্কোপ দেখে। কথায় কথায় এল সাপ্তাহিক রম্য ক্রোড়পত্র আলপিন প্রসঙ্গ। তিনি আলপিন মনোযোগ দিয়ে পড়েন বলে দাবি করলেন। তখনই আমার মাথায় এল, আরে, উনার তো একটা পিনসাক্ষাত্কার করে নেওয়া যায়! তিনিও রাজি হলেন। সেখানে বসেই তাত্ক্ষণিকভাবে প্রশ্ন বানিয়ে নেওয়া হলো এই সাক্ষাত্কার। এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম আলোর রম্য ক্রোড়পত্র আলপিনের ১০ ডিসেম্বর, ২০০১ সংখ্যায়।

সাক্ষাৎকার গ্রহণের আগে এক আড্ডায় হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমি (ডানে) ও আমার সহকর্মী নওরোজ ইমতিয়াজ। ছবি তুলেছিলেন নাসির আলী মামুন

 

হলুদ পাঞ্জাবির পকেট ছাড়া হিমু ফোন করে প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, ‘হ্যালো, এটা কি রেলওয়ে বুকিং?’ আর মিসির আলি টেপরেকর্ডার ছাড়াই ক্যাসেট হাতে নিয়ে মহা আনন্দে গান শোনেন। এসবের মাঝখানে হুমায়ূন আহমেদ মানুষটা আসলে—

আমি হিমুও না, মিসির আলিও না। তবে আমাকে চয়েস দেওয়া হলে জোরগলায় বলতে পারি, আমি মিসির আলি হতে চাইব।



কাক এবং কবির সংখ্যা দেশে অসংখ্য। কিন্তু প্রচুর গদ্য পড়া ছাড়াও একজন ভালো গদ্যকার হওয়ার জন্য যা করা উচিত—

প্রচুর কবিতা পড়তে হবে এবং কলমটা এমনভাবে হাতে রাখবে যেন মনে হয় মানুষটার আসলে ছয়টা আঙুল। একটা আঙুল কলম।



লোকসমাজে প্রচলিত আছে—ব্যর্থ কবিরাই নাকি ঔপন্যাসিক হয়। আপনার মন্তব্য কী?

এই প্রচলিত কথা ঔপন্যাসিকদের ছোট করার কিংবা মজা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। গদ্য আমাদের মুখের ভাষা আর কবিতা হলো মনের। দুটোই কঠিন। একটায় ব্যর্থ হয়ে অন্যটা হওয়া যায় না।

 

‘জীবনটা ব্যর্থ হয়ে গেল’—এ রকম বাণী দিয়ে অনেকে হতাশা ব্যক্ত করে থাকেন। কোন কাজটি না করার ফলে একজন মানুষের জীবন ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে বলে আপনার ধারণা?

পৃথিবীতে এমন কোনো কাজ নেই যা না করলে মানুষের জীবন ব্যর্থ হয়। জীবন এতই বড় ব্যাপার যে একে ব্যর্থ করা খুবই কঠিন।



‘আমার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ, তাঁর লেখা আমার অসম্ভব ভালো লাগে’—কারও মুখ থেকে এ রকম বাণী নিঃসৃত হলে তখন আপনি জাগতিক কোন বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেন?

প্রথম যেদিন এই কথাটি শুনি, তখন যেমন ভালো লেগেছিল, আজও সে রকমই ভালো লাগে। যেদিন লাগবে না, সেদিন আমার মনের একটি কোমল অংশের মৃত্যু হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। আমি চাই না, ওই দিনটি আসুক।



আপনি একাধারে ম্যাজিশিয়ান, গল্পকার, গীতিকার, নাট্যকার, পরিচালক, কবি। ভবিষ্যতে আরও কী হওয়ার পরিকল্পনা আপনার মাথায় আছে?

আপাতত আর তো কিছু মাথায় আসছে না। দেখা যাক।



যে প্রশ্নটি আপনাকে অবশ্যই করা উচিত বলে মনে করেন?

আমাকে কোনো প্রশ্ন করাই উচিত নয়। আমি নিরিবিলি থাকতে চাই।



দুয়ে দুয়ে চার হয়—এটা একটা লজিক। আর মিসির আলি কাজ করেন লজিক নিয়ে। মিসির আলির সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আপনার মতে পৃথিবীর সেরা লজিক হলো—

লজিক হলো অঙ্ক। অঙ্কে সেরা বলে আলাদা কিছু নেই।



‘মানুষ বড়ই বিচিত্র’—কেন বিচিত্র মনে হয় মানুষকে?

মানুষ সম্পূর্ণ বিপরীত দুই স্রোত নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারে। এটা আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়।



‘আকাশ ভেঙে জ্যোত্স্না নেমেছে। বিলু মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে। দেখতে দেখতে...

সে ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। তার মন খারাপ হতে শুরু করেছে। অথচ মন খারাপ হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। বরং তার মন আনন্দে পূর্ণ হওয়া উচিত—এই প্রথম সে শহরের বাইরে এসে জ্যোত্স্না দেখছে।

৩১০৭৩ পঠিত ... ১৫:৩৩, জুলাই ১৯, ২০১৬

আরও

 

পাঠকের মন্তব্য ( ১ )

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top