গরু একটি গৃহপালিত প্রাণি, তার দুইটি চোখ, দুইটি কান, একটি নাক, একটি মুখ, চারটি পা ও একটি লেজ আছে। এই বাক্য যেমনটা সত্যি, তেমনি গরু দুধ দেয়, সেটিও তেমনই সত্যি। কিন্তু হাজার বছর ধরে মানুষকে দুধ সাপ্লাই দিয়ে গেলেও হুট করে দুধ দিতে আপত্তি জানিয়েছে কিছু গরু। এতদিন ধরে নিঃস্বার্থভাবে দুধ দিয়ে যাওয়াটা ভুল হয়েছে, এমন কথাবার্তার জাবরও কেটেছেন কয়েকজন।
গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) ভৈরবের জগনাথপুর এলাকার বিনি বাজারে হঠাৎ পরিদর্শনে যান সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীন। ইউএনও পুলিশ নিয়ে ওই বাজারে গেলে এক দুধ বিক্রেতা তার বালতিভর্তি দুধ রাস্তায় রেখেই দৌঁড়ে পালিয়ে যান। এ সময় তার দৌঁড় দেখে পাশের আরও তিনজন দুধ বিক্রেতা একইভাবে দৌঁড়ে পালিয়ে যান। বালতির দুধ পরীক্ষা করে দেখতে পাওয়া যায়, প্রতি লিটার দুধে ৭০০ গ্রাম করে পানি আছে এবং বাকি ৩০০ গ্রামেও মেশানো হয়েছে চক পাউডার আর ময়দা। পুরো দুধেই ভেজাল।
এই খবর ছড়িয়ে পৌঁছে যায় ঐ এলাকার গরুদের মধ্যেও। খবরটি শুনে কিছু গরু শোকে-দুঃখে কিছুক্ষণের জন্য জাবর কাটতে ভুলে যান। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে হাম্বা-হাম্বা ডাকতে থাকেন। গরুদের এমন বিক্ষোভের খবর পেয়েই আমাদের প্রতিবেদক ছুটে যান গরুদের সেই চারণভূমিতে।
গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এক গরু আমাদের প্রতিবেদককে দেখে প্রথমে কিছুক্ষণ 'হুস-হুস' শব্দ করেন। এরপর জোরে একবার হাম্বাআআআআ ডাক ছাড়ার পর তিনি বলেন, 'দেখছেন, সারাটা দিন মাঠে দাঁড়িয়ে ঘাস খাই। শুধু কি খাওয়া শেষ হলেই শেষ? এরপর দিনভর রাতভর জাবর কাটি। এ সব কি চক পাউডার আর ময়দার জন্য?'
এ পর্যন্ত বলার পর জনাব গরু ক্ষুব্ধ হয়ে লেজ নাড়াতে থাকেন। দুয়েকজন গরু বিমর্ষ হয়ে এদিক ওদিক হেঁটে চলে যান।
রাগ-ক্ষোভ কিছুক্ষণ ধরে জাবর কেটে গিলে ফেলার পর তিনি জানান, 'হাজার বছর ধরে আমরা, আমাদের পূর্বপুরুষরা (নাকি পূর্বনারী?) দুধ দিয়ে আসছি। গরু দুধ দেয়, এটাই তো আমাদের অন্যতম এক পরিচয়। নিজেদের বাছুরদের যা খাওয়ানোর কথা এতদিন ধরে তা আমরা মানুষকে খাইয়ে আসছি। গরুর দুধের নামে চক পাউডার আর ময়দা মেশানো পানি বিক্রি হবে জানলে কোনোদিন দুধ দিতাম না, সব আমার বাছুরদেরকেই খাওয়াতাম!'
এ সময় এক পাশে গরুটির বাছুরকে বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
কিন্তু গরু ভাই, সরি, আপা, চক পাউডার ময়দা তো আর গরুরা মেশায়নি। আপনারা মন খারাপ করছেন কেন, এমন প্রশ্ন করা হলে আরেক গরু 'হাম্বাআআআআ' বলে শিঙ দিয়ে গুতো মারার ভঙ্গি করে তেড়ে আসেন। কাছাকাছি এসে নিজেকে হামলা সামলে নিয়ে বলেন, 'এইটা তো আপনি জানেন, আমি জানি। কিন্তু যেই কাস্টমার গরুর দুধ ভেবে এইসব ভেজাল জিনিস কিনছে, সে তো গরুরেই গাইল্লাবে, ঠিক কিনা বলেন?'
পাশ থেকে শত শত গরু সহমতসূচক 'হাম্বা' ধ্বনি তুলে একাত্মতা প্রকাশ করেন। গরু আরও যোগ করেন, 'আমরা আর দুধ দেবো না। যান, আপনাদের চক পাউডার আর ময়দা মেশানো পানি খাইয়াই থাকেন।'
হতাশ হয়ে আমাদের প্রতিবেদক মাঠের পাশেই একটি টং দোকানে রঙ চা খেতে বসে পড়েন। দুধের বদলে আবার চক পাউডার মেশানো পানি থাকে কিনা সেই টেনশনে তিনি দুধ চা খেতে চাননি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন