স্ট্যারি নাইট কেক, টিশার্ট ও গয়নাগাটির রয়্যালিটি দাবি করলেন ভ্যান গগ

১৫৫৮ পঠিত ... ২২:০৩, মার্চ ৩০, ২০১৯

সর্বকালের সর্বসেরা চিত্রশিল্পীদের একজন ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। তার আঁকা সানফ্লাওয়ারস, আইরিসেস, হুইটফিল্ড উইথ ক্রোজ, বিভিন্ন অবস্থার সেলফ পোর্ট্রেট থেকে শুরু করে আরও অসংখ্য ছবি বিখ্যাত হয়েছে বিশ্বজুড়ে। তবে সব ছবিকে ছাপিয়ে গেছে ১৮৮৯ সালে আঁকা ‘স্ট্যারি নাইট’ ছবিটি। ভিঞ্চির আঁকা ‘মোনালিসা’র পর সম্ভবত এটিই সবচেয়ে পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত চিত্রকর্ম। গত বেশ কিছু বছর ধরে স্ট্যারি নাইট ছবিটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে টিশার্ট, গলার টাই, সানগ্লাস, মানিব্যাগ, ফুলদানি, শাড়ি, লুঙি, গামছা, পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে অন্তর্বাসেও। স্ট্যারি নাইটের এই এতো এতো ব্যবহারে ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী নতুন করে জনপ্রিয়তা পাওয়া ভ্যান গগের একটি সাক্ষাৎকারকি নিতে eআরকির শিল্প গবেষণা ইউনিট উড়ে চলে ফ্রান্সের পথে।

প্যারিসের এক কোণে ভ্যান গগের সেই বিখ্যাত ‘দ্য ইয়েলো হাউজ’এর সামনে। হলদে বাড়ির সবুজ দরজায় কড়া নেড়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর খুব সন্তপর্ণে দরজা খুলে উঁকি দিলেন সানগ্লাস চোখের এক বৃদ্ধ। ‘কী চাই?’। কিছুটা বিস্মিত হলেও, সেসব প্রকাশ না করে জানতে চাইলাম ‘ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। আর্টিস্ট। লোকে উনাকে কানকাটা গগ বলেও ডাকে!’ ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে বৃদ্ধ লোকটি চিৎকার করে উঠলেন, ‘আমাকে কানকাটা গগ বইলা ডাকে কোন হারামজাদা?’ তখনই আমাদের তাড়িয়ে দিতে তোড়জোড় শুরু করে দিলেন বৃদ্ধটি। চোখের সানগ্লাস বারবার খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছিল। আবার বাঁ হাত দিয়ে সানগ্লাস ঠিক করে নিচ্ছিলেন। আমাদের আর বুঝতে বাকি থাকল না, ইনিই সেই মহান ভ্যান গগ। স্যরি-টরি বলে নানান প্রশংসামূলক কথা খরচ করে অবশেষে তার মন গলানো গেল। বিশ্বের অন্যতম সুখী দেশ থেকে এসেছি শুনে কিছুটা গাইগুই করলেও বাড়ির ভিতরে নিয়ে বসালেন। কিছুটা সহজ হয়ে জিজ্ঞাস করলাম ‘কেমন দিন কাটাচ্ছেন আপনি?’

ভ্যান গগ (ডান হাত কানের কাছে নিয়ে): অ্যা! কী বললেন? কী কাটার কথা বলছিলেন? কান! সে তো কেটেছি দেড়শ বছর হয়ে গেল।

বুঝতে পারলাম শুনতে হয়ত ঝামেলা হয় উনার। তখন গলার স্বর খানিকটা উঁচুতে নিয়ে ভুল শোধরানো হল।

ভ্যান গগ: দিনও কেটে যাচ্ছে। ইদানিং মামলা মোকদ্দমা নিয়ে বেশ ক্যাচালে আছি। বারবার প্যারিসে যাইতে হয়।

eআরকি: এই বয়সে এসে কী নিয়ে মামলায় জড়িয়ে গেলেন?

ভ্যান গগ: আরে শালারা রয়্যালিটি দেয় না। এতো এতো টাকার ব্যবসা করে ফেলতেছে আমার আঁকা ছবি দিয়ে। একটা টাকাও দিতেছে না। এইজন্য মামলা!

eআরকি: টাকা কেন দিচ্ছে না? এখন তো বাজারে আপনার খুব কদর। স্ট্যারি নাইট দিয়ে তো টিস্যুও বানিয়ে ফেলেছে এখন।

ভ্যান গগ: সেটাই তো! ওরা সব বানাচ্ছে। ফেসবুকে ঢুকলে স্ট্যারি নাইটের গিটার, মগ, চুলের ফিতা এইসবের বিজ্ঞাপনে থাকা যায় না। স্ক্রল করলেই দেখি স্ট্যারি নাইট। সেইদিন তো দেখলাম রেজারেও স্ট্যারি নাইট ছবিটা। এইসব পেইজে অনেক ম্যাসেজ দিছি, টাকার জন্য। রিপ্লাই দেয় না। দিলাম কেস করে!

eআরকি: রিপ্লাই দেয় না দেখেই কেস করে দিবেন? এ কেমন কথা?

ভ্যান গগ: আরে, এডমিনগুলা সব বেয়াদব। আমি একজন সিনিয়র সিটিজেন। আমার সাথে কিনা বেয়াদবি করে? টাকা না দিক, অন্তত শুভেচ্ছা উপহার তো পাঠাইতে পারে। তারও কোন খোঁজ নাই। শুধু এক ইয়ারফোন কোম্পানি আমাকে এক সেট ইয়ারফোন পাঠাইছিল। ভেবে দেখো, কেমন আস্পর্ধা তাদের! স্পিকারের বদলে ইয়ারফোন পাঠাইছে। আমার সাথেও eআরকি!

eআরকি: কিন্তু তরুণদের মাঝে আপনার এখনের জনপ্রিয়তাকে কীভাবে দেখছেন?

ভ্যান গগ: ফেসবুকে দেখি ছেলেমেয়েরা খুব এটা সেটার ছবি পোস্ট করে। মেয়েদের দেখি স্ট্যারি নাইট প্রিন্ট শাড়ি পরে জীবনানন্দের কবিতা ক্যাপশনে দিয়ে এস্থেটিক ছবি পোস্ট করতে। আমার মন খারাপ হয়। আজ মারিয়া বেঁচে থাকলে ওকেও আমি শাড়ি কিনে দিতাম। কিন্তু এসবের যা দাম! এতো টাকা পাই কোথায়? এত টাকা পাই কই?

eআরকি: দুঃখজনক!

ভ্যান গগ: হ্যাঁ! দুঃখজনক তো বটেই। গিটার, টাই, মগ, প্লেট, পাঞ্জাবি কোনটাই কিনতে পারলাম না। পরে একদিন আইফেল টাওয়ারের নিচে এক হকারের কাছ থেকে সস্তায় সানগ্লাসটা কিনে নিলাম। তাও দশ ইউরো চলে গেল। হকার অবশ্য বলেছিল, এটা সরাসরি গুলিস্তান থেকে ইমপোর্ট হইছে। ঐ ভরসাতেই কিনেছি। কেনার পর মনে পড়লো, সানগ্লাস কিনে হুদাই পয়সা নষ্ট করলাম, আমি তো এটা পরতে পারবো না! কিনে যখন ফেলেছিই, নানান সিস্টেম করে পরতে হচ্ছে।

eআরকি: আপনার বন্ধু পল গগ্যাঁর প্রতি আপনার ক্ষোভ কি এখনো আছে? তিনি অভিযোগ করেছিলেন, আপনি নাকি তাকে রেজর নিয়ে তাড়া করেছিলেন! এরপর কি তিনি আর আসেননি?

ভ্যান গগ: এইসব মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি কেন ওকে তাড়া করব? সব ষড়যন্ত্র।

eআরকি: কিন্তু আপনি কান কেটেছিলেন কেন?

ভ্যান গগ: চারপাশে এতো কথা। কথা শুনলেই বিষণ্ণতা। হলুদ রঙ তো অনেকদিন খেলাম তাও, কাজ হচ্ছিল না। তখন ভাবলাম, একটা কান কেটে ফেলি। কথা কম শুনলে বিষণ্ণতাও কমবে। আবার ব্যান্ডেজ পরে আরেকটা ক্যুল এন্ড এস্থেটিক সেলফ পোর্ট্রেট একে ফেলা যাবে। তখন তো সেলফি তোলার জন্য ফ্রন্ট ক্যামেরা ছিল না। ফটোশপও ছিল না। কী করব বলো?

eআরকি: আপনার ছবি নিয়ে প্রচুর মিমও বানানো হচ্ছে। সেসব দেখে কেমন লাগে?

ভ্যান গগ: হ্যাঁ, মিমও দেখি। আর ভাবি, আমি ছবি না আঁকলে এরা মিম বানাইত কই থেকে?

আরও বেশ কিছুক্ষণ শিল্প সাহিত্য এবং সমাজ নিয়ে আলাপচারিতা করে এবং অনেক কষ্টে হলুদ রঙ খাওয়ার অফার এড়িয়ে শেষ হয় এই ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকারকি। বাইরে বেরিয়ে এগিয়ে দিয়ে যান তিনি। ততক্ষণে আকাশে স্ট্যারি স্ট্যারি নাইট। আকাশের দিকে তাকিয়ে 'সেই তারা ভরা রাতে' গানের একটু শিস বাজিয়ে আক্ষেপের সুরে বললেন ‘ঈশ্বরও রয়্যালিটি দিল না!’

১৫৫৮ পঠিত ... ২২:০৩, মার্চ ৩০, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top