ঢাকার রাস্তায় বিদ্যুতের চাষ করতেই রাস্তা খোড়া হচ্ছে : কাল্পনিক সাক্ষাৎকারে ডেসকো কর্মকর্তা

১০৮০ পঠিত ... ২০:৪৫, জানুয়ারি ২২, ২০১৯

সাধারণত কেউ শৃঙ্খলা বা নিয়মের বাইরে চলে গেলে তাকে বলা হয় লাইনে আসতে। কিন্তু লাইনই যদি বেলাইন হয়ে গিয়ে হারিয়ে যায়, তবে ব্যাপারটি মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। এ রকম হারানো লাইনের খোঁজ করতে গিয়ে ডিপিডিসি ও ডেসকো প্রায়ই ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা খনন করে থাকে। বারিধারা, তেজগাঁওয়ের কিছু নতুন নির্মিত রাস্তা, যেগুলোর নির্মাণকাল ১ বছরও হয়নি, সেগুলোও এই হারানো লাইনের খোঁজে কাটা হচ্ছে। রাস্তা খোঁড়া ঢাকায় কোন নতুন কিছু না হলেও, গতকাল উত্তর ঢাকার সাবেক মেয়র আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নতুন করে এই বিষয়টি আলোচনায় আসে।

বারিধারা জে ব্লকের যে রাস্তাটি কাটতে শুরু করেছে ডেসকো/ডিপিডিসি

লাইনের খোঁজেই নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্যে এই খোঁড়াখুঁড়ি? প্রশ্ন জাগে eআরকি আন্ডারগ্রাউন্ড দলের মনে। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই তারা একদিন রওনা দেয় ডেসকোর অফিসে। খনন করা নানা দৈর্ঘ্য প্রস্থের পরিখা পাড়ি দিয়ে ডেসকোর অফিসে পৌছানোর পর লবিতে কিছুক্ষণ বসার পর দেখা মিলে ডেসকোর একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সাথে। সদ্য খোঁড়া একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে তিনি আমাদের নিয়ে যান তার অফিসে। সেখানে তার সাথে শুরু হয় আমাদের এই কাল্পনিক কথোপকথন।

eআরকি : কেমন আছেন?

ডেসকো : ভালো মন্দ মিলিয়েই আছি। মাটির নিচে ভালোই থাকি। উপরে আসলে ঝামেলা যাতনা শুরু হয়।

eআরকি : মাটির নিচে কেন? আর সেখানে ভালোই বা থাকেন কেন?

ডেসকো : আরে ভাই, আমাদের মেইন লাইন তো সব মাটির নিচেই। সেগুলা দেখাশোনা করতে হবে না! আর শান্তির কথা বললেন, ঢাকার রাস্তায় কোন শান্তি আছে? হর্ন, ধুলা, জলাবদ্ধতা- কত রকমের সমস্যা! মাটির নিচে তো এগুলার কিছুই নাই। একদিন তো এই মাটির নিচেই যাবো, সেটার প্র্যাকটিসটাও হয়ে যায় বলতে পারেন।

eআরকি : এর জন্যেই কি রাস্তা কেটে আপনারা লাইন খুঁজেন?

ডেসকো : আমাদের লাইনগুলা ঘন ঘন বেলাইনে চলে যায়। সেগুলাকে লাইনে আনতেই মাঝে মধ্যে একটু কাটাকাটি করা লাগে।

eআরকি : কিছু রাস্তার তো নির্মাণের সময় ১ বছরেরও কম। সেগুলো না কেটে আপনারা একটা ডাটাবেজ করলেই পারেন। তাহলে তো কষ্ট করে আপনাদের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করতে হয় না।

ডেসকো : কষ্ট আর কি! কী যে বলেন। ভালোর জন্য যদি বারবার খুড়তে হয়, তাহলে নাহয় খুড়লাম। বারবার খোঁড়াখুঁড়ি করা তো রাস্তার জন্যই ভালো।  

eআরকি : সেটা কেমন?

ডেসকো : কৃষিজমি বারবার খোঁড়াখুঁড়ি করা হয় কেন? উর্বরতা বাড়ানোর জন্য। আমরাও সেরকম রাস্তার উর্বরতা বাড়াচ্ছি। এতে রাস্তার নিচে বিদ্যুতের চাষ করতে সুবিধা।

eআরকি : আপনার রাস্তায় বিদ্যুতের চাষ করছেন?

ডেসকো : হ্যাঁ, অবশ্যই। রাস্তা যত উর্বর হবে, রাস্তার নিচের লাইনে বিদ্যুতের পরিবহনও ভালো হবে। আমরা তো বিদ্যুৎ শুধু উৎপাদনই করি তা না, বিদ্যুতের চাষও করি!

eআরকি : অসাধারণ ব্যাপার! কিন্তু খোঁড়াখুঁড়ি বাদ দিয়ে মনে করেন রাস্তায় সার দিয়ে কি রাস্তার বিদ্যুৎ-উর্বরতা বাড়ানো যায় না? সার হিসেবে মনে করেন ইলেকট্রিক চার্জ দেয়া হলো…

ডেসকো : সেটা তো করাই যায়। তবে সার কীটনাশক এসব তো পরিবেশের জন্য বিশেষ উপকারী না। আমরা একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে বিদ্যুৎ চাষ করতে পছন্দ করি। এর কিছু সুবিধাও আছে। এই মনে করেন, গতবছর মিরপুরের এক রাস্তা খুড়ে ভরাট করার পর দেখা গেলো, রাস্তার নিচে আমাদের এক কর্মকর্তার মোবাইল রয়ে গেছে, সেজন্য আবার খুড়লাম। এরপর ভরাট করার পর দেখা গেলো রয়ে গেছে আরেকজনের চশমা, সেজন্য আরও একবার…

eআরকি : এখন ওই রাস্তার বর্তমান অবস্থা কী?

ডেসকো : এখনো কী কারণে যেন খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। কারো কিছু হারিয়েছে মে বি, এতগুলা রাস্তায় একসাথে খোঁড়াখুঁড়ি চলে, কোনটা কেন চলছে অত কি মনে থাকে নাকি ভাই!

এই পর্যায়ে ডেসকো কর্মকর্তার বাসা থেকে ফোন এলো, গিন্নি লাঞ্চ করার জন্য ডাকছেন। তিনি দ্রুত মাটি খুড়ে মাটির নিচে নিজের বাসার দিকে লাইনওয়ালা সুড়ঙ্গে ঢুকে গেলেন। আমরাও অফিস থেকে বের হওয়ার জন্য মাটি খুড়তে শুরু করলাম। পুরো রাস্তা যেহেতু খোঁড়া, মাটির নিচ দিয়ে যাওয়াই উত্তম...

১০৮০ পঠিত ... ২০:৪৫, জানুয়ারি ২২, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top