শিশির ভাবীকে ফলো করে মোটিভেট করার পরই মেসি হ্যাটট্রিক করলো: আন্তোনেলা রোকুজ্জো

১৯২৯ পঠিত ... ২২:৩৯, অক্টোবর ১২, ২০১৭

কিটোর যে মাঠে আর্জেন্টিনা জেতেনি গত ১৬ বছরে, সে মাঠেই মেসি হ্যাটট্রিক করে দেশকে বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পাইয়ে দিলেন। সব আলো তাঁর দিকে। সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে মেসি আজ আলোড়ন। আমরা জানি, প্রত্যেক সফল পুরুষের পেছনে একজন নারীর অবদান (মোটিভেশন!) আছে। আমাদের সাকিব আল হাসানও শিশির ভাবীর মোটিভেশনেই সেঞ্চুরি মেরেছিলেন। অথচ সংবাদমাধ্যম শুধু মেসিকে নিয়ে পড়ে আছে। মেসির এমন জ্বলে ওঠার পেছনের মোটিভেশনটি খুঁজে বের করতেই বাংলাদেশ বিমানের এক বিশেষ ফ্লাইটে আমরা চলে গেলাম মেসির স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জোর কাছে। 

ভাবীর ভীষণ ব্যস্ত শিডিউল। অনেক কায়দা-কানুন করে তাঁর সাক্ষাৎ পাচ্ছি। বড় বড় মিডিয়াও পাচ্ছে না। 'বাংলাদেশি' এবং আর্জেন্টিনার সাপোর্টার বলতেই তিনি রাজি হয়েছেন। তবে শর্ত একটাই, দুই/তিনটার বেশি প্রশ্ন করা যাবে না। 

আমরা এখন মেসির বাড়ির দরজার সামনে। প্রথম ধাক্কাটা এখানেই গেলাম। দরজার দুই পাশে দেখি রোনালদোর ছবি! এ কী কান্ড! বস আমার দিকে তাকিয়ে কড়া দৃষ্টিতে সুয়ারেজ লুক দিল। মালয়েশিয়ার মতো আর্জেন্টিনাতেও 'সেকেন্ড হোম' প্রকল্প শুরু হলো নাকি? তবে কি এটা রোনালদোর সেকেন্ড হোম? দারোয়ান জানাল, না, আপনারা ঠিক কিক করেছেন। এটাই মেসি স্যারের বাড়ি। 

আমরা ব্রাজিল-জার্মানির ঐতিহাসিক ম্যাচের দর্শকের মতো অবস্থায় পড়লাম। কিঞ্চিৎ বিব্রত, আর কি! মেসির বাড়ির দরজার রোনালদোর ছবি কেন? 

দারোয়ান বিষয়টা ক্লিয়ার করলেন। বললেন আসলে এটা এই বাড়ির বিশেষ দরজা। রোকুজ্জো ম্যাম স্যারের সাথে রাগ করে এই দরজা দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান। মেসি স্যার যদি শোনেন ম্যাম এই দরজা দিয়ে বের হয়েছেন তাহলে বোঝেন কেস জটিল, ম্যামের রাগ ভাঙানোর জন্য সোজা শ্বশুরবাড়ি দৌড় দেন। বুঝেনই তো! 

মেসিপত্নী দরজা খুলে স্বাগত জানালেন। আমরা ড্রইংরুমে বসলাম। কিন্তু একি! রোকুজ্জে চোখের সামনে স্মার্টফোন ধরে আছেন তো আছেনই! ব্যাপারটা সম্পর্কে জানতে চাইতেই রোকু ভাবী হেসে ফেললেন- 

আন্তোনেলা রোকুজ্জো : আসলে কালকের খেলার পর ফেসবুকে না থেকে কি উপায় আছে? ফেসবুকে সমানে বাংলাদেশি সমর্থকদের অ্যাড দিচ্ছি। ওদের উল্লাস দেখে মনে হচ্ছে, যেন ও বিশ্বকাপটাই জিতে গেছে। এমন মোটিভেশনময় হোমপেজ ও ম্যাচের আগে দেখলে তো আমাকে মোটিভেশন দিতে হতো না, বাংলাদেশি সমর্থকদের মোটিভেশনেই কাজ হয়ে যেত!

: মোটিভেশন? মানে শিশির ভাবীর মতো আপনিও কী?

: ওমা! বউয়ের ধাক্কা ছাড়া অমন দাপুটে অতিমানবীয় হ্যাটট্রিক হয় নাকি? তোমাদের সাকিবের তো সেঞ্চুরি করতেও বউয়ের মোটিভেশন লাগে। আর এই যে তোমাদের ভাই একাই একটা টিমকে বিশ্বকাপে নিয়ে গেল, এমনি এমনিই নাকি! ও কত পারে জানা আছে আমার! 

: ইয়ে, না মাঠে কতটুকু পারেন আমরা তো ততটুকুই জানি, মাঠের কথাই হোক। তা কী বলেছিলেন ভাবী? 

: আমি আসলে বুঝছিলাম না কী করবো। পেরুর সঙ্গে ম্যাচের পর ও এত হতাশ হয়ে গেলো। খাওয়া দাওয়া নাই। প্র্যাকটিসেও যায় না। শেভ না করতে করতে কী অবস্থা করেছে দেখেছোই তো, সব তো বিশ্বকাপের টেনশনেই! পরে ভাবলাম, শিশিরের কথায় যদি সাকিব সেঞ্চুরি করে ফেলতে পারে, তাহলে আমি কম কী! আমাকেও এগোতে হবে! 

: আপনিও তাই করলেন? 

: আহহা! আগে শোন তো। মেসি তো ভরসা ছেড়েই দিয়েছিল। সারাদিন দরজা বন্ধ করে একা একা থাকে। ছেলেমেয়েদের পড়াতে বসানোর নাম নেই। মেয়েটার পরদিন অংক পরীক্ষা, বললাম ওকে একটু সাতের ঘরের নামতাটা শেখাও। কিন্তু কিসের কি! মাঝেমাঝে ইউটিউবে দেখলাম বাংলাদেশের একজনের মোটিভেশনাল স্পিচ দেখে। কিছুতেই কিছু হয় না। 

: এরপর? 

: আমি বেশি কিছু করি নি, জাস্ট বললাম, বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা না খেললে আমি কিন্তু রাত জেগে জেগে পর্তুগালের সব খেলা দেখবো, এইবার পর্তুগালকেই সাপোর্ট দেবো। 

: এতেই কাজ হয়ে গেলো? 

: হবে না আবার? এই কথা শুনে সেই যে প্র্যাকটিস করতে বেরোলো, ম্যাচ জিতেই বাসায় ফিরেছে! 

: দারুণ ব্যাপার। ধন্যবাদ ভাবী, আপনার এই মোটিভেশন না থাকলে আমাদের দেশে ঘরে ঘরে একদম ব্লু হোয়েল নেমে আসতো! 

ভাবীকে ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে দরজার এ পাশে চলে এসেছি। পেছনে থেকে ভাবীর ডাক। 

: তোমাদেরকে তো নাস্তা অফার করতেই ভুলে গেছি। বসো। নাস্তা খাও। নুডলসের হ্যাটট্রিক ভুনা। মোটিভেশনের পাশাপাশি শিশিরের কাছ থেকে রেসিপিটাও শিখে নিয়েছি কিনা...

১৯২৯ পঠিত ... ২২:৩৯, অক্টোবর ১২, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top