মুক্তি পেল বহুল প্রতিক্ষিত সিনেমা রেহানা মারিয়াম নূর। কান চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরে আসা এই সিনেমা নিয়ে বাংলাদেশি দর্শকদের আগ্রহের কমতি নেই। সবাই সিনেমা দেখছেন, নিজেদের প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করছেন। এমন নানামুখি প্রতিক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে eআরকি ১০ ধরণের সম্ভাব্য দর্শক প্রতিক্রিয়া ভেবেছে পাঠকদের জন্য। দেখুন তো, প্রতিক্রিয়াগুলো আপনারও চোখে পড়েছে কী না? আর হ্যাঁ, হলে গিয়ে অবশ্যই রেহানা মারিয়ান নূর দেখুন, বাংলা সিনেমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করুন।
১. হলে গিয়ে দেশের সিনেমা দেখুন আন্দোলনের সদস্য
এটি বাংলাদেশের ছবি, সাদ এই বাংলার ছেলে, বাঁধন এই বাংলার মেয়ে, আমি এই বাংলার দর্শক। আমাদের হয়তো সত্যজিৎ নেই, আছে একজন সাদ, গরীবের সত্যজিৎ। আমাদের হয়তো মেরিলিন মনরো নেই, আছে আজমেরি হক বাঁধন, গরীবের . . .না তিনি কোনো ভাবেই গরীবের না। হলে গিয়ে বাংলাদেশের সিনেমা দেখুন, এই সিনেমা আমার আপনার সাদ-বাঁধন সবার।
২. স্রোতের বিপরীতে দর্শক
অতিরিক্ত হাইপ, কানে গেলেই কি ভালো সিনেমা হয়ে যায়? পুরষ্কারই কি সব? আমরাও সিনেমা কম বুঝি না। পুরো টাকাটাই জলে গেলো। এরচে রেহানা আপার হোটেলে রুটি আর হাঁসের মাংস খাইলে ভালো হইতো।
৩.‘কিছুই বলার নাই’ দর্শক
দেখে আসলাম রেহানা মরিয়ম নূর! উফ কী সিনেমা কী আর বলবো। এমনি এমনি তো কানে যায় নাই। বাঁধন আপুর অভিনয় নিয়ে আর কী বলবো, উনি সবসময় জোশ। সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্যামেরা যেভাবে কাঁপলো! উফ কী আর বলবো। আর মেকিং নিয়ে তো কিছুই বলার নেই। জোশ! জোশ! জোশ! কিছুই বলার নেই।
৪. আর্টকালচার নিয়ে চিন্তিত দর্শক
বাংলাদেশের মানুষ সিনেমার আর বোঝে কী? তারা তো কুরওসোয়া, কিম-কিদুক, জাফর পানাহি এদের চিনেই না। আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদকে স্বাগতম, এই অশিক্ষিত দেশে সিনেমার কবি এসেছেন তিনি। এবং তার কাছে বাংলাদেশের প্রতিটি পরিচালকের শেখা উচিৎ কীভাবে টাকা ছাড়া শুধু মাত্র সিনেমার প্রতি একাগ্রতা আর নিষ্ঠা দিয়ে সিনেমা বানাতে হয়। অবশ্য সবাই এইরকম সিনেমার সাথে রিলেট করতে পারবে না। টিকটক দেখে যারা ঘুম থেকে উঠে আর হিরো আলম দেখে ঘুমাইতে যায় তারা এসব সিনেমার কী বুঝবে? রুচির দুর্ভিক্ষ তো আগে থেকেই চলছে...(অনেক মোটা একটা দীর্ঘশ্বাস)
৫.সন্দেহপ্রবণ দর্শক
সিনেমা ভালো, তবে এতটাও ভালো না। সিনগুলা চেনা চেনা লাগে, আগে কই যেনো দেখছি। আর কাহিনীও তো কমন। মনে হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় হাইপটা একটু বেশিই ৷ শেষকথা, মোটামুটি একটা সিনেমা..
৬. নারীবাদি দর্শক
‘রেহানা মারিয়াম নূর’ কেবল একটি সিনেমা নয়, এটি একটি দলিল। যে দলিল বোঝার ক্ষমতা এই দেশের পুরুষদের নেই। নারীদের এই সিনেমা এতোবার দেখা উচিত যে, যেন সিনেমার প্রযোজক -পরিচালক পুরুষ দর্শকের অভাববোধ না করে। কারণ দেশের পুরুষদের জন্য এই সিনেমা নয়, এটি বিদেশী পুরুষদের জন্য। এটি ধারণ করার ক্ষমতা এই দেশের পুরুষদের নাই..এমনকি এটির নায়িকাকেও ধারন করার ক্ষমতা তাদের নাই।
৭. আবেগী দর্শক
সিনেমাটা দেখে জাস্ট হুহুহু করে কেঁদে ফেলেছি। সাদ ভাই, বাঁধন আপুকে স্যালুট। এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে ছারখার, তবুও রেহানা মাথা নোয়াবার নয়।
৮. ট্রেডিশনাল দর্শক
এই সিনেমা কানে যায় কী করে? এরচে আমাদের মেরিল প্রথম আলো পুরুষ্কার ভালো। পুরা সিনেমাতে বাঁধনের কোনো নাচ নাই। একটা হাসপাতাল আছে অথচ সেইখানে কোনো মারামারি নাই। আর বুইড়া ক্যামেরাম্যান ক্যান নিছে বুঝলাম না। সারাক্ষণ ক্যামেরা কাঁপাকাঁপি করছে।
৯. পরিচালক সমিতি দর্শক
সিনেমা আমরাও বুঝি। বিশ্বব্যাপী পুরস্কারের যে রাজনীতি আর ধরপাকড় তা নিয়ে কথা বলতে চাই না। সাদ নামের একটা ছেলে কী একটা ছবি বানিয়েছে, তা নিয়ে এতো হৈচৈ। কই আমরাও তো সিনেমা বানাই। আর সাদকে নিয়ে যে এতো আলোচনা, সে তো আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিরই কেউ না। ভাবতে অবাক লাগে, আমাদের সমিতির সদস্য না হয়েও তার ছবি কি করে হলে মুক্তি পেলো!
১০.বিনোদন সাংবাদিক দর্শক
অসাধারণ, মনোমুগ্ধকর, চমৎকার। সিনেমাটা তো প্রিমিয়ারেই দেখেছি, স্বয়ং সাদ আর বাঁধন থেকে মাত্র তিন সারি পরে বসে। বুঝেন, কী অবস্থা। শো শেষে সেলফি তুলতে বললে মাত্র পাঁচবার বলার পরপরই দুজনই রাজি হয়ে গেলেন। কী অমায়িক, বুঝছেন?