যেভাবে ফেসবুকে একটি আদর্শ মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্টাল স্ট্যাটাস লিখবেন

১৯৪৯ পঠিত ... ১৫:১৬, জুন ২৪, ২০২০

ফেসবুকে যেসব লেখা যেকোনো সময়ে, যেকোনো ইস্যুতে হিট করার সম্ভাবনা বেশি, তার মধ্যে একেবারে টপে আছে মধ্যবিত্ত জীবন নিয়ে লেখা। যেহেতু ফেসবুকের অধিকাংশ রিডাররাই মধ্যবিত্ত, তাই রিলেটেবল হওয়ার চান্স বেশি থাকে। একটু কায়দামতো লিখতে পারলে, মধ্যবিত্ত স্ট্যাটাস ফেসবুকে কখনোই ফ্লপ করে না। কিন্তু সে কায়দাগুলো কী? যুগে যুগে ফেসবুকে প্রকাশিত একই বক্তব্যওয়ালা হাজারখানেক 'মধ্যবিত্ত স্ট্যাটাস' ঘেটে সেই ব্যাপারেই টিপস দিচ্ছেন eআরকির মধ্যবিত্ত আইডিয়াবাজদের দল (দীর্ঘশ্বাস)।

১# প্রথমেই আপনার পরিচিত একটা মধ্যবিত্তের জীবন দেখুন। এরপর সেখানে থেকে সুখ, হাসি, আনন্দ, ঘোরাফেরা বাদ দিয়ে লেখা শুরু করুন। মধ্যবিত্তের জীবনে যতই ছোট-বড় সুখ থাকুক, লেখায় সেসব আনবেন না। এতে লেখার 'মধ্যবিত্ত পটেনশিয়াল' নষ্ট হয়। খেয়াল রাখবেন, লেখায় যেন মধ্যবিত্তের জীবনচক্র কাজ, খাওয়া, ঘুমানো, অভাব, দীর্ঘশ্বাস আর দুশ্চিন্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

২# মধ্যবিত্ত নিয়ে লেখার ক্ষেত্রে বেশি নজর দিতে হবে বাবার দিকে। একটা ত্যাগী, রাগী বাবা। যিনি নিজের শখ-আহ্লাদকে একেবারেই গুরুত্ব দেন না। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান, নিজে না পরে সন্তানকে পরান। স্বল্প আয় দিয়েও সন্তানের জীবনের প্রয়োজন পূর্ণ করাই যে বাবার জীবনের মূল লক্ষ্য।

৩# মধ্যবিত্ত বাবার পোশাক-আশাক নিয়ে একটু কথা বললে ভালো। তবে মনে রাখবেন, বাবার দুইটার বেশি শার্ট নাই, তার মধ্যে একটার পকেট ছেড়া, ছেড়া সেন্ডো গেঞ্জি, বেল্টের চামড়া উঠে যাওয়া ঘড়ি, ছেড়া জুতা। এক কথায় বাবার সাথে এই কীওয়ার্ডগুলো মেলাতে পারলে লেখা হিট।

৪# মধ্যবিত্ত বাবারা যে কড়া রোদের মধ্যে ঘামে জুবুথুবু হয়ে কয়েক ক্রোশ হেঁটে অফিসে যায় তাও বলবেন। মধ্যবিত্ত বাবাদের রিক্সায় উঠার সুখ কোনভাবেই দেয়া যাবে না। খুব বেশি হলে লেগুনায় ওঠার কথা লেখা যেতে পারে।

৫# মধ্যবিত্ত মায়ের দিকেও লেখায় নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে তিন ধরনের লাইন রাখবেনই, যথা- মধ্যবিত্ত মায়ের শাড়ি কখনো পুরোনো হয় না, মাসের ২০ দিনের পর বাসায় কিছু না থাকলেও মা সব চালিয়ে নেয়, ছেলে-মেয়ের শখ পূরণে নাকফুল, কানের দুল বিক্রি করা মায়ের কথা বললে সবচেয় ভালো।

৬# মাছের মাথাটা, ভালো টুকরোটা, বড় মাংসটা; এইসব বাবা-মা কখনোই খেতে পারবে না। খাবার টেবিলের ছেলমেয়ের পাতে তুলে দিবে। আর নাদান ছেলেমেয়েগুলো সেসব খেতেই থাকবে, খেতেই থাকবে।

৭# ঈদের সিজন না হলেও শপিংয়ের কথা একটুআধটু আনবেন। তবে মনে রাখবেন, বাবা-মা কিছু কিনবে না। মধ্যবিত্ত বাবা-মায়ের নতুন, ভালো জামা পরা পাপ, এমনকি ঈদেও। বাপমায়ের বাজেটের সব টাকা ছেলেমেয়ের খাতে ভর্তুকি হিসেবে দেখাবেন।

৮# মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা শুধু টিউশনি করেই জীবন চালাবে। তাদের দ্বারা আর কোন ক্রিয়েটিভ কাজ করাবেন না। খরচের ভয়ে আড্ডা এড়িয়ে চলা, ভার্সিটির সব ট্যুর মিস দেয়ার মতো জড় পদার্থ তাদের হতেই হবে। তাদের ভার্সিটি চক্র হবে-ক্লাস, টিউশনির বাসা-হল। এর বাইরে তারা যাবে না। তবে মাঝে মাঝে পরীক্ষার ফিস দিতে না পারার গল্প যদি থাকে, সেটা লেখা মাস্ট।

৯# মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়েরা যে বাবা-মাকে গিফট দেয় তা আনতে পারেন। তবে ইমোশন বাড়ানোর জন্য প্রথম চাকরির বেতনের আগে গিফট দেয়াবেন না। প্রথম টিউশনির টাকায় গিফট (মাকে শাড়ি, বাবাকে পাঞ্জাবি টাইপ। প্রেশার কুকার বা ব্লেন্ডার, এইসব গিফট দেয়ানো যাবে না) দেয়ার কথা লিখলে হিট করার চান্স বেশি।

১০# মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি, মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়েদের জীবনের দীর্ঘশ্বাসগুলো লিখবেন। প্রাইসট্যাগ কিংবা মেন্যুতে খাবারের দাম দেখে দীর্ঘশ্বাস, গিটার-ক্যামেরা কিনতে না পারার দীর্ঘশ্বাস, পছন্দের সাবজেক্টে পড়তে না পারার দীর্ঘশ্বাস। কমপক্ষে পাঁচটা দীর্ঘশ্বাস না থাকলে সেটাকে আদর্শ মধ্যবিত্ত স্ট্যাটাস বলা যায় না। লেখার একেবারে শেষ বাক্যে 'তবুও স্বপ্ন দেখে যাওয়া' টাইপ দুঃখমেশানো আশার বাক্য লিখে একটা সেন্টি ইমো দিতে ভুলবেন না।

১৯৪৯ পঠিত ... ১৫:১৬, জুন ২৪, ২০২০

Top