দেশে এখন এসেছে নতুন পরিবহন আইন। সেই আইনের চাপে পড়ে আপনার এখন বাস চালানোই দায়! কেন? কী দোষ আপনার? আপনি কি ঢাকা শহরে বাস চালানোর উপযুক্ত না?
eআরকির গবেষক দল এই জন্য খুঁজে খুঁজে বের করেছে ঢাকা শহরে পাবলিক বাস চালানোর জন্য অবশ্য কর্তব্য দশটি নিয়ম। এই নিয়মগুলা যদি মেনে চলতে পারেন, তাইলে আপনিই ঢাকা শহরে পাবলিক বাস চালানোর উপযুক্ত ড্রাইভার। পৃথিবীর কারও সাধ্য নেই আপনাকে রোখার। আপনিই সেরা, ঢাকার রাজপথে শ্রেষ্ঠ যমরাজ!
১# বাসের কোন চাকা নেই। বাস সাপের মতো পেটের ওপর ভর দিয়ে এঁকেবেকে চলে। কাজেই, বাস কখনও রাস্তা বরাবর সোজাসুজি চালানোর চেষ্টা করবেন না। মনের খুশিতে সারা রাস্তা জুড়ে এঁকিয়ে-বেঁকিয়ে চালাবেন। বাসের যাত্রীরা যা ইচ্ছে বলুক, তাদের হাসি-খুশি রেখে আপনার কী লাভ? মনে রাখবেন, যত হাসি ততো কান্না, বলে গেছেন রাম সন্যা।
২# বাস কোন মানুষ পারাপারের যান নয়। বাস হচ্ছে টাকা রাখার ব্যাংক ভল্ট। যতো মানুষ এতে ভরা যায়, ততোই টাকা। কাজেই, একেবারে ফেটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাসে মানুষ তুলুন। তারপর ছাদে মানুষ তুলুন। তারপর ছাদে ওঠার মইয়ে মানুষ কিছু ঝোলান। তারপর বাম্পারে কিছু মানুষ লটকান। একেবারে শেষে গিয়ে দরজার হাতলে আর পা-দানিতে কিছু মানুষ সাঁটকে দিন। ছাড়ার পরে দমকা হাওয়ায় কিছু মানুষ উড়ে যেতে পারে। সে তো সব মহৎ কাজেই কিছু ঝুঁকি থাকে, ঐ নিয়ে অত মাথাব্যাথা না করলেও আপনার চলবে।
৩# পাশের সংরক্ষিত আসনে মহিলা যাত্রী ওঠার পর অবশ্যই ফস করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেলবেন। মনে রাখবেন, সিগারেটে ফুক ফুক ধোঁয়া টানতে টানতে উদাস দৃষ্টিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন বাস চালক, এই দৃশ্য দেখলে যে কোন বিবাহযোগ্য নারী আপনার প্রেমে হাবুডুবু খেতে বাধ্য!
৪# বাস স্টপেজ? সে আবার কী জিনিস? রাস্তার সাইডে থাকে বলে ঐ জিনিস আপনার কাছে মূল্যহীন। বাস দাঁড় করাতে হবে রাস্তার ঠিক মাঝখানে। হাজার হাজার গাড়ি আপনার পেছনে থমকে থাকবে, হাজার হাজার মানুষ বাসের দিকে ছুটে আসবে শুধু আপনাকেই তসলিম জানাতে। আহ, কেবল সেই সময়টাতেই আপনাকে মনে হবে ঢাকা শহরের সম্রাট। বাস স্টপেজ ব্যাপারটাই তুলে দেয়া উচিৎ।
৫# ওঠার সময় যাত্রী হচ্ছে লক্ষ্মী। রাস্তায় কী, পারলে বাসার দোতলা থেকে ডাকলেও ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যান। তাকে দু’গালে দু’টো চুমো দিয়ে কোলে করে বাসে উঠিয়ে ফেলুন।
নামার সময় ঐ যাত্রীর আর দাম নেই। চলন্ত বাসটা একটু স্লো করে তাকে দৌড়ে নেমে যেতে বলুন। থামাবেন? কেন? আপনি তার শ্বশুর লাগেন নাকি? আহ্লাদ?
৬# আপনি মানুষ, কাজেই আপনি সামাজিক জীব। বাস চালানোর সময় যারা আপনাকে চুপচাপ গাড়ি চালাতে বলে, তারাই হলো আসল অসামাজিক। অবশ্যই আপনার বাস চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলার অধিকার আছে। কেন, পয়সা দেন না আপনি সিমের? মাগনা চালান? নাতো! কাজেই, বাস চালাতে চালাতে আপনার স্ত্রীর খবর নিন, আপনার ওস্তাদের স্ত্রীর বাজার হলো কিনা খবর নিন, ছোট ভাইয়ের বিদেশ যাবার কদ্দূর কী হলো তা নিয়ে দালালের অগ্রগতি তদারক করুন।
আরেকটা কথা, হেলপার একটা বেকুবের জাত। ভাড়া কাটতে গিয়ে, যাত্রীর সাথে যে কোন কথার মধ্যে আপনি ঢুকে যান। মনে রাখবেন, পঞ্চাশ-ষাটটা মানুষের জীবন হাতে রেখে আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন, কাজেই আপনার কথায় ম্যাজিকের মতো কাজ হবে। কথা বলাটাই আপনার মূল কাজ, তার ফাঁকে ফাঁকে আপনি গাড়িটা চালিয়ে নিচ্ছেন মাত্র।
৭# বাসের এই ব্যাপারটাই বিরক্তিকর, হর্ন জিনিসটা চাপতে হয় কেন? বাস যতক্ষণ চালু থাকবে, হর্ন অটোমেটিক বেজেই যাওয়া উচিৎ। এটোবড় একটা জিনিস রাস্তায় চলছে, কেউ যদি নাই-ই বোঝে, দু’বার ঘুরে না-ই তাকায়, তাহলে আর বাস চালানোর স্বার্থকতাই বা কী? সবাই শুধু আপনার হর্নটুকুই শুনলো, কিন্তু অনবরত হর্ন চাপতে চাপতে আপনার হাতে যে কড় পরে যাওয়ার দশা, সেটা আর কেউই দেখলো না। মানুষ খুবই স্বার্থপর!
৮# আপনার বাসকে কেউ ওভারটেক করে চলে যাবে? এই ব্যাপারটা লিখতে গিয়ে তো আমারই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে! শুয়ো… বা… দের এতো বড় সাহস? অন্য কেউ হলে তো গুলি করতো ডাইরেক্ট! আপনার নেহায়েৎ দয়ার শরীর দেখে সেটা করেন না। গাড়িটা খালি হালকা ঘষা লাগিয়ে দেন। আচমকা গাড়ির সামনে একটা ব্রেক কষিয়ে দেন। গায়ে হালকা একটু ধাক্কা লাগান, শিক্ষার জন্য। স্যালুট আপনাকে! আপনার মতো ভদ্র বাসচালককেই খুঁজছে বাংলাদেশ।
৯# ঢাকা শহরটা হচ্ছে বাসের পাল্লা দিয়ে রেসিং কার খেলার জায়গা। আর স্পিডব্রেকার জিনিসটা হচ্ছে মাঝেমধ্যে রাস্তার মাঝেই উড়াল দেয়ার সুযোগ। সে সুযোগ আপনি হেলায় হারাবেন কেন? স্পিডব্রেকার দেখলেই আপনি স্পিড বাড়িয়ে দিন। ধিড়িম করে একটা ঝাঁকি লাগবে বটে। যাত্রীরা একটু হাউকাউ করবে। তা করুক। এরা জাতটাই হাউকাউ করার। ঝাঁকুনি খাওয়ার পরেই ওরা যে উড়াল দেয়ার সুখটা পাবে, সেটা এদের কে বোঝাবে বলেন?
১০# স্কুল-কলেজ-অফিস-হাসপাতাল এলাকায় স্পিড কমানোর ভুলেও চিন্তা করবেন না। মানুষ মরার ভয়? মানুষের তো জন্মই হয়েছে মরার জন্য। সেটা বিছানায় শুয়েই হোক, আর চাকার তলে শুয়েই হোক। ঐ সিনেমার লোকটা যতোই চিল্লাচিল্লি করুক, মনে রাখবেন, আপনাদের কেশাগ্র ছোঁয়ার সাহস এই বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কারোর হয়নি। কাজেই মনের আনন্দ নিয়ে জোরসে চালান। আইন করাই হয় আইন ভাঙার জন্য। সেই সুখ সবাই পাবে, আপনি পাবেন না কেন? কী দোষ আপনার, শুনি?