eআরকি ট্রাভেল গাইড: ঢাকা থেকে কিছু দূরেই ঘুরে আসুন মিরপুর (প্রথম পর্ব)

৪১৯৬ পঠিত ... ১৩:৪৩, অক্টোবর ৩০, ২০১৮

ছুটিতে যারা ছুটে যেতে চান ঢাকার বাইরে, পেতে চান একটু অ্যাডভেঞ্চার, তাদের জন্যই আজকের এই ট্রাভেল গাইড। ব্যস্ত জীবনে একদিন বা দু’দিনের ছুটি নিয়ে চলে যেতে পারেন ঢাকা থেকে একটু দূরেই, ঢাকার রাজধানী হিসাবে খ্যাত, ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বর্ণাঢ্য মিরপুরে। তবে অ্যাডভেঞ্চারের পরিপূর্ণ স্বাদ পেতে একদিন বা দু’দিনের ছুটি নিয়ে না যাওয়াই ভালো, সম্ভব হলে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে যাবেন।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে উবার/পাঠাও কিংবা যেকোনো ধরনের রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমেই যেতে পারবেন। তবে বিষয়টা তত সহজ না, কারণ তাদের কেউ মিরপুর যেতে চাইবে না। সত্যি বলতে কি,  বুদ্ধি আছে এমন ড্রাইভারই মিরপুর যেতে রাজি হবে না। এজন্য আপনাকে বারবার রাইড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে পাঠিয়ে মিনিমাম তিন ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হবে। এর মধ্যে অসহায় কাউকে না কাউকে পেয়েই যাবেন যে নিতান্তই পেটের দায়ে কিংবা মিরপুরের নাগরিক হওয়ার দায়ে মিরপুর যেতে চাইবে।

যদি রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের কাউকেই রাজি করাতে না পারেন বা না চান, তবে বিকল্প যানবাহন হিসেবে আছে আছে সিএনজি। তবে সে ক্ষেত্রেও ৫০টা সিএনজিকে জিজ্ঞেস করে ‘যামু না’ শুনতে হতে পারে। কেউ কেউ ‘যামু না’ বলার ঝামেলাতেও না গিয়ে কিছু না বলেই ইগ্নোর করে চলে যেতে পারে। যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়েন তাহলে বুঝবেন, আপনার ‘মিরপুর অ্যাডভেঞ্চার’ অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। একটা অ্যাডভেঞ্চারের ঘ্রাণ আমরা পাচ্ছি, পাঠকরা পাচ্ছেন না?

Mirpur-4

এরপর মনের শান্তির জন্য আরো দশ বিশটা সিএনজিওয়ালাকে রিকোয়েস্ট করতে পারেন। তবে এর বেশি রিকোয়েস্ট করার দরকার নেই। মিরপুর যাবেন বলে যে সমাজে আপনার কেনো মানসম্মান নাই, নিশ্চয়ই এমনটা নয়। মনে রাখবেন, মিরপুরের বাস পৃথিবীর সকল রুটেই দুই একটা করে আছে। মিরপুরগামী যেকোনো বাসে উঠে যাবেন। চলন্ত বাসে উঠতে হলে বাসের গেট লক্ষ্য করে যদি শরীরটা ছুড়ে দিতে পারেন, হেল্পার ক্যাচ করে নেবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। থেমে থাকা বাসে উঠতে হলে ১৫-২০ জনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাসে ঢুকতে হবে, সেক্ষেত্রে আগে থেকে দক্ষতা না থাকলে প্রয়োজনে অ্যাডভেঞ্চারের আগেই প্র্যাকটিস করে নিন।  

 

সাথে যা যা নেবেন

বাড়ির সবচে ছোট ব্যাগটায় একটা টিশার্ট আর আরেকটা শর্টস ভরে ফেলুন। যদি লুঙ্গি থাকে তবে লুঙ্গিও নিতে পারেন। আর সম্ভব হলে আপনি নিজেও স্যান্ডেল, শর্টস আর টিশার্ট পরে আসবেন। এছাড়া সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন, দেয়াশলাই, ফার্স্ট এইড, খাবার স্যালাইন, শুকনো খাবার আর গামছা রাখবেন। পৌঁছতে ক’দিন লাগে, বলা তো যায় না। তাই পূর্বপ্রস্তুতি রাখা ভালো।

 

পথে যা যা আছে

আপনি যদি ফার্মগেট হয়ে আসেন তবে আপনার মিরপুর শুরু হবে মূলত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। রাস্তার দু’পাশে দেখবেন ঘন ইটের স্তুপ। মাঝাখানে বিশাল বিশাল পিলার দাড় করানো। বাসের জানালা থেকে উঁকি দিয়ে দেখে নিতে পারেন মেট্রোরেলের দেয়াল। হালকা করে চোখটা বন্ধ করে ভেতরে কী হচ্ছে সেটাও ভেবে নিতে পারেন। এই বিষয়টা কবিতার মতো, যে যেমন ভাবে তারটাই ঠিক।

 

ভাবার কাজ শেষ হলে এইবার পিলার নিয়ে কিছুক্ষণ গবেষণা করতে পারেন। ভাববেন না, আপনার হাতে অনেক সময়। জ্যাম ছুটতে দেরি আছে। এই সময়টি কাজে লাগানোর জন্য পাশের যাত্রীর সাথে মেতে উঠতে পারেন তাদের লোকাল আলোচনায়। তাদের লোকাল আলোচনাগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় আলোচনাগুলো হলো- ‘মেট্রোরেলের কাজ কবে শেষ হবে? মিরপুরের উন্নয়ন, এলাকাবাসীর দুই নয়নের জল, পিলারগুলা এতো বড় ট্রেনের ভার বহন করতে পারবে তো? মেট্রোরেল উপর দিয়া যাবে নাকি নিচে দিয়া যাবে? উপর দিয়া ওভারব্রিজের উপর দিয়া নাকি ওভারব্রিজের নিচে দিয়া?’

তবে এইসব আলোচনায় মেতে উঠতে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আলোচনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ কোন মত সেটা আগে দেখে নিন। তাদের যে মত, আপনারও সেই মত। বোকার মতো নিজের মতামত ব্যক্ত করে বাকি যাত্রাপথকে হুমকির মুখে ফেলবেন না।

এতোক্ষণে আপনার হালকা ঘুম এসে যাবার কথা। ঘুমের মধ্যে যদি টের পান বাস পাহাড়ি রাস্তা ধরে চলছে, তবে বুঝে নেবেন বাস তখন আগারগাঁও আইডিবি ভবন অতিক্রম করেছে। ট্রাভেলারদের নতুন ধরনের অ্যাডভেঞ্চার দেয়ার জন্য মিরপুরের রাস্তায় করা হয়েছে বিশাল বিশাল আকারের গর্ত। এজন্য পৃথিবীর বাঘা বাঘা সব ট্রাভেলাররা মিরপুরকে ঢাকার বান্দরবান বলে থাকেন। তবে ট্রাভেলারদের আরেক গ্রুপ মিরপুরকে ‘ঢাকার কক্সবাজার’ বলতেই বেশি সাচ্ছ্বন্দবোধ করেন। আপনার যদি ভাগ্য ভালো হয় তাহলে যাত্রাপথে অন্তত দুই মিনিট বৃষ্টি পেতে পারেন। ব্যস, তাতেই আপনি দেখা পাবেন মনোরম এক মহাসমুদ্রের। বৃষ্টি আর জোছনাকে মাথায় রেখে আসলে পুরো ট্যুরটা আপনার জন্য বিশেষ উপভোগ্য হবে।

যদি বৃষ্টি না পান, তাহলেও ক্ষতি নেই। যদি আপনার যাত্রার সময় হয় বিকেল তবে আপনি বিশেষ ভাগ্যবান। হঠাৎ সামনে তাকিয়ে কুয়াশা মোড়ানো মিরপুরকে মনে হতে পারে দার্জেলিং মনে হতে পারে। কিন্তু একটু দম বন্ধ দম বন্ধ লাগলে বুঝবেন যাদেরকে কুয়াশা ভেবে আপনি ক্যামেরা বের করেছেন ছবি তুলতে ওরা আসলে ধুলাবালি। কপালে থাকলে মিরপুরের অন্যতম স্পেশাল ফিচার ‘মরুভূমির বালি ঝড়’ও দেখে ফেলতে পারেন।

 

সমুদ্রে নামবেন?

যেতে সব মিলিয়ে তিন ঘন্টা লাগলেও যদি মিরপুরের সমুদ্র পেয়ে যান, তবে সেটা ৬-৭ ঘন্টাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের কাজ হলো স্যান্ডেলটা বগলে নিয়ে হাঁটা শুরু করা। হাঁটলেই দেখবেন হাজার হাজার পর্যটক একসাথে বগলে স্যান্ডেল নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসী একজন খুঁজে বের করে তার ফলোয়ার হয়ে যেতে হবে। ভাইয়ে যেভাবে যায় আপনিও সেভাবে যাবেন ভাইয়ের পিছু পিছু। গর্তে পড়লে আগে ভাই পড়বে আর ভাই পড়লে আপনি অন্য একটা ভাই খুঁজে বের করে তাকে ফলো করা শুরু করবেন।

ট্রাভেলারদের মধ্যে কেউ কেউ গর্তে পড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তাকে উঠতে হেল্প করতে পারেন অথবা ভিডিও করে ফেসবুকেও দিতে পারেন। গর্তে পড়ে যাওয়া ভিডিওর ভিউ বেশি হয়। ছোট ছোট ঢেউ আপনার পায়ে এসে লাগবে। উপরে মেট্রোরেলের কাজ, নিচে হাতের কাছে সমুদ্র। চাইলে কিছু ছবিও তুলে নিতে পারেন।

 

যেখানে প্রথমবার থামবেন

এইভাবে ঘন্টা দুয়েক হাঁটার পর, আপনি যদি গর্তে পড়ে আহত না হয়ে যান তবে ততক্ষণে আপনি পৌঁছে যাবেন মিরপুরের রাজধানী মিরপুর দশ নম্বরে। অনেকক্ষণ হলো যাত্রা। এইবার খাওয়ার পালা। আশেপাশে অনেক খাবার থাকবে। যেটা ভালো লাগে সেটা খাবেন। মিরপুর স্টেডিয়ামে যদি খেলা চলে তবে খেলাও দেখতে পারেন। নইলে এবার আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন দিকে যাবেন? নাকি অর্ধেক দেখেই মানে মানে কেটে পড়বেন বাড়িতে? পরের পর্বে এই বিষয়ে জানা যাবে।

 

সতর্কতা

মিরপুরে গিয়ে চিপসের প্যাকেট, বিরিয়ানির প্যাকেট, ক্যান, জুসের বোতল, কনডম, কনডমের প্যাকেট, ককসিট, সসের বোতল ইত্যাদি রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাবেন। মনে রাখবেন পর্যটন এলাকা পরিষ্কার রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। (চলবে)

 

মিরপুর নিয়ে আর পড়ুন-

৪১৯৬ পঠিত ... ১৩:৪৩, অক্টোবর ৩০, ২০১৮

Top