নিয়মিত বাইক শেয়ার অ্যাপ ব্যবহার করলে আপনি যে ৮ প্রকারের চালক দেখতে পাবেন

৩৭৭৮ পঠিত ... ১৬:৩৯, এপ্রিল ০১, ২০১৮

কয়েকমাস ধরে নিয়মিত মোটো সার্ভিস ব্যবহার করছি আমি। কখনো পাঠাও, কখনো উবার- যখন যে প্রোমো দেয় আরকি! বাইক রাইডারদেরকে সংক্ষেপে আমি ডাকি রাইডু। এই কয়েক মাসে নানা ধরণের রাইডুর বাইকে ভ্রমণের সৌভাগ্য মতান্তরে দূর্ভাগ্য হয়েছে আমার। নানা রাইডু নানা ঘটনা। সেদিন এক রাইডু এলো। সহজ একটা ঠিকানা তিনবারের চেষ্টায় চেনাতে হলো তাকে। পূর্ব অভিজ্ঞতার জের ধরে প্রথমেই আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'ভাই স্টার্ট দিছেন?' রাইডু বাইকে কষে কিক মেরে স্টার্ট দিয়ে বলল, 'জ্বি ভাই, দিছি।' বুঝলাম এই লোক নতুন। 'বাইকের কথা বলি নাই, অ্যাপ স্টার্ট দিসেন?' আবার বললাম আমি। 'ওহহো, সরি ভাই। আসলে আজকেই আমার ফার্স্ট রাইড তো...হেহেহে...'

ভদ্রলোক হাসলেও আমার মুখে হাসি এলো না। শক্ত হয়ে বসে ভাবা শুরু করলাম, পঙ্গুতে যাবো নাকি ট্রমায়?(শেষ পর্যন্ত অবশ্য কোনোমতে সিএ ভবনে গিয়েছিলেন, সে আরেক ইতিহাস)
বাইক সার্ভিসের এই রাইডারদের যদি শ্রেণিবিভাগ করা হয়, বেশ কয়েটা ভাগ পাওয়া যাবে-

 

১# কিপটা রাইডার

এরা শুরুতেই নিজে থেকে ফোন দেয় না। অপেক্ষা করে। গ্রাহক ত্যাক্ত হয়ে ফোন দিলে তারপর আসে। এরা জানে, ঠ্যাকাটা গ্রাহকেরই, ফলে সে ফোন দেবেই। তবে গ্রাহকও যদি ধৈর্যশীল এবং প্যাচনশীল(যেকোনো বিষয় প্যাচাইতে অভ্যস্ত) হয়, তখন এক সময় ধৈর্য্যের বেড়িবাঁধ ভেঙে নিজেই কল দেয় রাইডু।

 

২# বিরক্ত রাইডার

অত্যন্ত অনাগ্রহের সঙ্গে 'হ্যালো' বলে কথা শুরু করে এই শ্রেণির রাইডাররা। গ্রাহকের লোকেশন শুনে তাদের বিরক্তি আরও বেড়ে যায়, 'ও, আপনি আবার সনির ওইখানে...আমি আচ্ছা, থাকেন।' এদের কথা শুনে আপনার মনে হবে একটা লোক দুপুরে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে ঘুমাচ্ছিল, আপনি জোর করে তাকে উঠিয়ে বলছেন 'চল ব্যাটা কারওয়ান বাজার।' বিরক্ত গোত্রের রাইডাররা অনেক সময় মুখে না বলে চোখের ইশারায় আপনাকে বসতে বলবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা মুখ দিয়ে 'ৎচ্চা', 'ধুর', 'হুর' টাইপের একটা শব্দ করে বিরক্তিও প্রকাশ করবে, যেমন - সামনে রিকশা আসলে, সিগনালে আটকালে, বাস ব্রেক করলে, ব্রেক না করলে, ইত্যাদি।

 

৩# অস্থির রাইডার

একটা বিশাল রাইডারগোষ্ঠী এই শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত। এরা খুবই অস্থির। তাদের ধারণা বাইক জিনিসটা 'একবার চাবি মাইরা দিসে ছাইড়া' টাইপ। থামা যাবে না। অলিগলি, চিপাচাপা দিয়ে যে কোনো মূল্যে বেরিয়ে যেতে হবে। দূরে সিগনাল দেখে প্রায়ই বাইক নিয়ে আচমকা গলিতে ঢুকে যায় এই রাইডাররা। সেখানে মুরগিওয়ালা, কিংবা স্থানীয় মাছ বাজার বা কোচিংয়ে পড়তে আসা বাচ্চাদের মায়েদের জটলায় দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে বাইক। তখন আপনার কানে ভেসে আসবে রাইডারের অমর বাণী 'এই গলিটা সব সময় খালি থাকে, আজকে জ্যাম কিসের?'

 

৪# হতাশ বাইকার

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাটা যে শেষ হয়ে গেছে - এই কথা দিয়ে শুরু হয় হতাশ রাইডারদের কথা। পর্যায়ক্রমে তা ছুঁয়ে যায় রাজনৈতিক পরিস্থিকি, চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট, আমদানিকৃত গাড়ির শুল্ক, শিক্ষাব্যবস্থা, ক্রিকেটের পরাজয়...সবশেষে পাঠাও উবারে যে আউল ফাউল লোকজন রাইডার হয়ে যাচ্ছে এই বিষয়ে আলোকপাত করে আলোচনা ক্লোজ করেন এই গোত্রের রাইডাররা।

 

৫# হর্নি রাইডার

এই গোত্রের রাইডাররা হর্ন দেন। কারণে দেন, অকারণে দেন, এমনকি যখন বাইক সিগনালে থেমে থাকে হর্ন দেন তখনও। আসলে তারা চেক করে দেখেন হর্নটা ঠিক আছে কিনা, কারণ যে পরিমাণ হর্ন দিয়েছেন, বিকল হয়ে যেতেই পারে। তাছাড়া চেক করাটা জরুরীও, সিগনাল ছাড়ার উদযাপনটা হর্ন দিয়েই তো করতে হবে।

 

৬# 'কী করি আমি' টাইপ রাইডার

এই রাইডাররা সব সময় অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দ্বিধায় ভোগেন। তাদের দ্বিধাও নানা রকম। প্রথমত তারা বুঝতেই পারেন না কোন রাস্তা দিয়ে যাবেন। 'তাইলে ভাই অমুক রাস্তা দিয়েই যাই, কী বলেন?' টাইপ বক্তব্য দিয়ে নিজেদের কনফিউশনের সূচনা করেন তারা। কিছুদূর গিয়েই তাদের মনে পড়ে 'নাহ, ওদিকে জ্যাম হবে।' ঘুরে আবার আগের রাস্তায় আসেন তারা। তারপর গিয়ে দেখেন সামনে চীনের প্রাচীরের মতো নিরেট জ্যাম। তখন এক চিপা গলি দিয়ে বের হতে গিয়ে আবিষ্কার করেন ঘুরে আবার আগের জায়গাতেই চলে এসেছেন তিনি।

 

৭# আলাপি রাইডার

এই রাইডাররা কথা বলতে খুব পছন্দ করেন। 'ভাই কি রেগুলার বাইক সার্ভিস নেন' অথবা 'ভাই কি স্টুডেন্ট' টাইপ প্রশ্ন দিয়ে কথা শুরু করেন তারা। তারপর আর কী! বাইক চলুক আর না চলুক, কথা চলবেই। মাঝে মাঝে তারা যাত্রীর দিকে তাকিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন। এ সময় তাদের মুখে হাসি থাকলেও যাত্রীর মুখ শুকিয়ে যায় বলে আমার ধারণা্।

 

৮# গালিবাজ রাইডার

এদের কথা আর কী বলবো, কিছু হলেই *** ট্রাফিক! ওই ***** রিকশা! একেবারে ********!

৩৭৭৮ পঠিত ... ১৬:৩৯, এপ্রিল ০১, ২০১৮

Top