প্রিয় সহমত ভাই ও শিবব্রত দাদা,
এমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়ে যাওয়ায় আপনাদের প্রতি গভীর সমবেদনা রইলো। আপনাদের অনেকের সঙ্গে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, সিভিল সার্ভিসে, সাংবাদিকতায়, বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে দেখা হয়েছিলো বলে একটা গভীর অনুরাগ রয়ে গেছে। ঐ যে মির্জা গালিব বলেছিলেন, বন্ধুত্বে নাই বা রইলে তবু তো শত্রুতায় ছিলে; তবু তো ছিলে!
আপনাদের অনেকের সঙ্গে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে, অসাম্প্রদায়িক বহুত্ববাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে কমরেড হিসেবে দেখা হয়েছিলো। আমি পড়ালেখা করে পরিশ্রম করে একটা ছিমছাম মধ্যবিত্ত জীবন বেছে নিলাম। কিন্তু আপনারা দ্রুত ধনী হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে শামিল হলেন। খুব দ্রুত 'এলিট' হবার ভুল স্বপ্ন দেখলেন। আসলে এলিটিজম তো থাকে মননে; পড়াশোনায়, সততায়, শিষ্টাচার, নির্লোভ জীবন যাপনে।
আমাকে যারা শৈশব থেকে চেনেন; তারা তো জানেন, শুরু থেকেই একটা সচ্ছল মধ্যবিত্ত জীবন আমার; হীরক নগরীর কোন একটি লোকের চেকনাই কিংবা জেল্লা দেখে আমার মনে হয়নি; আহারে! এই ‘আহারে’ ছিলো আপনাদের মনে। তাই তো শুকনো বাটারবন আর কলা খেতে খেতে আপনারা একদিন ‘দেশটাকে খেয়ে ফেলার’ মনস্থির করেছিলেন।
সভ্যতা কি খুব দ্রুত অর্জন করা যায়। পশ্চিমের মানুষ ঔপনিবেশিককালে ভুল করেছে, শিল্প বিপ্লবের পরে ভুল করেছে, আদিবাসীদের সঙ্গে আচরণে ভুল করেছে। কিন্তু গত ৭৫ বছরে ইতিহাসের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে শরীরের দূষিত রক্ত পরিশোধন করে সভ্যতার চারুপাঠ নিয়েছে।
এই কারণে আজ আপনি যখন দেশের টাকা লুট করে গিয়ে পশ্চিমে গিয়ে উপস্থিত হন; আপনাকে কিন্তু সভ্যতার সমাবেশে মানায় না। কারণ ওদের সভ্যতার শিক্ষা হচ্ছে ‘ভুল থেকে শেখা’; আর আপনাদের শিক্ষা হচ্ছে আপনি থাগস অফ বেঙ্গল; আপনার দাদা ও নানা রুমালে ফাঁস দিয়ে লোককে হত্যা করে সম্পদ লুট করতো; আপনি স্বাধীন বাংলাদেশে ক্ষমতার লাল ফিতার ফাঁসে, হেলমেট পরে হাতুড়ির আঘাতে, পুলিশ প্রদীপের ক্রসফায়ারে মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেন। কিন্তু আপনি নির্ভুল। আপনার অপরাধের কথা বলা যাবে না; আলাপ করতে হবে ১৯৭১ সালের খুনে পাকিস্তানি; ১৯৪৭ সালের আগের খুনে বৃটিশ আর ভিয়েতনাম-ইরাক-আফঘানিস্তানে খুনে আমেরিকার কথা। আপনার মতো অবিমৃষ্যকারী ছাড়া দুনিয়ার কোন দেশের লোক এরকম বর্তমানের অপরাধ ফেলে অতীতের আলাপ করবে বলুন তো। পৃথিবীর কোন সমাজের লোক তো এমন ঘরের পাশ থেকে আঁটি আঁটি শাক তুলে এনে ভাতের পাতের মাছের টুকরা লুকানো শেখেনি শিশুকাল থেকে।
আপনারা ভিলেজ পলিটিক্সের দক্ষতাকেই পলিটিক্স ভাবলেন। তাই কি হয় নাকি! মাত্র ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের গ্রামীণ বুদ্ধি দিয়ে কি এই বিশাল পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডারকে পরাজিত করা যায়? এ যে অসম্ভব। গ্রিসে যখন সক্রেটিস প্লেটো এরিস্টোটল গণতন্ত্র নিয়ে আলাপ করতো; আপনার জেনেটিকস তখন লাল গামছা পরে তেল মেখে সিঁদ কেটে চুরি করে বেড়াতো; কিংবা মাতবরের লেঠেল হয়ে চর দখলে খুনোখুনি করতে যেতো। আপনি তো এমন হবেনই; আপনি হচ্ছেন ‘হাওরে পদ্ম’; আপনি এক লাফ দিয়ে পশ্চিমকে চ্যালেঞ্জ করবেন; তাই কী হয়! আপনার দাদা দা দিয়ে কোপ দিয়ে মানুষ মারতো; আপনি বড় জোর ক্রসফায়ার করা শিখেছেন।
আপনি পশ্চিমে ঘুরতে গিয়ে কী বুঝতে পেরেছেন, ওখানে কোন কাস্ট সিস্টেম নেই; ওখানে পৈতে পরে কেউ নিজেকে বিশিষ্ট ভাবে না। কখনো আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছেন; শৃগালের মতো ধূর্ত মুখখানা; ভেতরে বিদ্বেষ বিভাজন গিজগিজ করছে; আপনি বড্ড অভিজাত সেজেছেন। আপনি খেয়াল করে দেখবেন; বাংলাদেশের সুরের মানুষ, গানের মানুষ, নদীর মানুষ, কবিতা ও কৃষকতার মানুষ, বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষেরা; আপনাকে পছন্দ করে না।
আপনি তো উগ্র জাতীয়তাবাদ, আভিজাত্যবাদ, এটা ওটা শ্যাঁটা দেখিয়ে বড্ড সুপিরিয়র হয়ে ঘোরেন; কিন্তু আমি তো শৈশব থেকে কেবল ছুঁচোর কেত্তন দেখেছি আপনার ভ্যাড়ভেড়ে কালচারে; আপনাকে সবসময়ই ঊনমানুষ মনে হয়েছে; কেবল মহতের লজ্জা থেকে আপনাকে বলা হয়নি; আপনার ঐ কাতলা মাছের মতো সেলফি দেখে আমার মনে হয়; আমার তো ইচ্ছা করে না ওয়েস্টিনের সুইমিংপুলে ঐ রকম ভেটকি দিতে, চুলে জেল করে ঢাকা ক্লাবে ছবি তুলতে।
আপনি যখন বাটার বন খেয়ে দেশ লুটের পরিকল্পনা করতেন, আমি তখন চুপচাপ ঐ ঢাকা ক্লাবে বসে বন্ধু রুমী নোমানের কবিতার অনুবাদ শুনেছিলাম; কিংবা শেরাটনের সুইমিংপুলের পাশে বসে মাশুক ভাই ও হুমায়ূন রেজার কবিতা শুনতাম, আবার বাটার বন কলাও খেতাম ছোট্ট টং ঘরে। পাঁচতারা হোটেল আর ফুটপাথের হোটেলের আনন্দের মাঝে কোন পার্থক্য তো আজো খুঁজে পাই না। মনের মতো বন্ধু যেখানে থাকবে, সেটাই আনন্দযজ্ঞ।
আপনাদের একটু গ্রাফিক কথা বার্তা বলতে হয়; একটু কর্কশ শোনায়; কারণ আমি আপনার ভালো চাই; আপনার সন্তানের জীবন আমার মতো নির্মল নির্ঝঞ্ঝাট হোক; সেটা চাই মন থেকে। আমি আপনাদের অনেক আগে কমনওয়েলথ আইডিয়া প্রতিযোগিতা করে বাকিং হাম প্যালেস ঘুরে এলাম; লন্ডন ব্রিজের নীচে দাঁড়িয়ে টি এস এলিয়টকে স্মরণ করলাম, মনে হলো ঐ তো ঐখানে শেক্সপিয়ার ছাতা হাতে হেঁটে যাচ্ছেন। তারপর বিলেতে সময়টা দীর্ঘ হতেই ঢাকার জন্য প্রাণ কাঁদলো। মনে হলো গিয়ে দেখি শামসুর রাহমান শ্যামলীতে কেমন আছেন; দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাসপেন্ডার পরে সেন্টার পরে পারু ডার্লিং (সিপিডি)-তে নতুন কী গবেষণা করলেন! সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নতুন কোন ছোট গল্পটা লিখলেন। আমাদের একটা সুন্দর জগত আছে বুঝলেন; যেখানে দার্শনিক রাজারা রাজত্ব করেন।
এই যে আপনারা যে বঙ্গবন্ধুর ছবিটা ঝুলিয়ে দেশ লুট করলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেন, উনার অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে মনে হয়; উনি আপনাদের মতো উন্নয়নের বেহুদা ঢোল বাদকদের নিয়ে উপহাস করছেন। পেশীবহুল পাণ্ডাদের দিকে বিতৃষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলছেন, ‘এই যে যারা আমার আদর্শিক সৈনিক সেজেছে; এদের অপকর্মেই আমার দ্বিতীয় মৃত্যু হবে।‘
কিন্তু আপনারা তো দুধের মাছি; আপনার জীন জানে কী করে সরকারি দল হয়ে হাডুডু খেলে লুটপাট করতে হয়; সরকারি সার্কিট হাউজ ও গাড়ি নিয়ে আয়েশ করতে হয়। সুতরাং আপনাদের মতো সাবহিউম্যানদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে দার্শনিক রাজা শেখ মুজিবকে আমরা বিস্মৃত হতে দেবো তা তো নয়। আপনারা মাকড়সার মতো অনেক করে দলীয় বিষ খেতে থাকুন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফুল থেকে; আমরা তা থেকে মধুই নেবো।
আপনারা হচ্ছেন ঠগীর নাতি; সুতরাং ফেসবুকে এসে দেশের মালিকানা দাবি করলে কি হবে! সম্প্রতি আয়নার দিকে তাকিয়েছেন কী! গত পনেরো বছরে গায়ে গতরে উন্নয়নের গোশত লেগে আর মুখমণ্ডলে পাপিয়া রেণু মেখে যে চকচকে ভাব এসেছিলো; তা কিন্তু নেই। সেই পুনর্মূষিকো-ভব গল্প যেন; ইঁদুর থেকে দেশ লুট করে পশ্চিমে সম্পদের পাহাড়; এখন পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা পেয়ে আবার ইঁদুরের মতো চেহারা। অবাক লাগে, আরে আবার এর চেহারা সেই স্কুল কলেজ ইউনিভার্সির মতো পাংশু দেখাচ্ছে কেন!
আসলে হয় কী, সারাক্ষণ যারা বিদ্বেষের কারবার করে, সারাক্ষণ ‘আমরা বনাম ওরা’-র ঘোঁট পাকায়, জীনগত কলতলার খিস্তি করে, পাকস্থলীকেন্দ্রিক স্থূল জীবন যাপন করে, নারীলোলুপতা যার মনোজগতে, যে খুনী ও অনুতাপহীন, যে খুনের সমর্থক নরভোজি; তার মুখমণ্ডলে সেভেন ডেডলি সিনসের বলি রেখা পড়তে থাকে। কিছুদিন পর নিজেকে দেখে নিজেই চমকে উঠবেন।
নাই নাই এ আঁধার পথ থেকে ফেরার পথ নাই; এখন আপনি মরিয়া হয়ে উঠবেন জানি; রবার্ট মুগাবের মতো বুক ফুলিয়ে থাকবেন, জুতা খেয়ে জুতা চুরি করবেন। গত পনেরো বছরে যেহেতু মানুষের মাংসের স্বাদ লেগেছে আপনার নখে ও দাঁতে; আপনি এখন চারিদিকে ‘হাউ মাউ খাউ মানুষের গন্ধ পাউ’ বলে দলান্ধ রাক্ষস হয়ে ঘুরবেন।
দুর্ভাগ্য আপনার; আপনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রুচির সঙ্গে বেমানান, গণতন্ত্র খুন করে ও এর দাফন করে আপনি একাত্তরের খুনেদের প্রেতায়িত আত্মা, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের বিপক্ষে আপনি ঘৃণ্য কোলাবরেটর, আপনি গুজরাটের কসাই মোদীর মালা পরে গেরুয়া প্রগতিশীল; ওয়ার্ল্ড লিবেরেলিজমের উদার বাগানে আপনার প্রবেশ নিষিদ্ধ। আপনি আর মানুষের পদবাচ্য নন। আপনি অন্ধ অক্ষম লোম ওঠা হিংস্র প্রাণী; আকবর আলী আপনাদের ঐ লুটপাটের অর্থনীতিকে শুয়োরের বাচ্চার অর্থনীতি বলেছেন।
সৃষ্টিকর্তা আপনাদের দড়ি ঢিলা করে দিয়েছেন; আপনারা এখন একশো বছর বাঁচবেন; যাতে এ দেশের মানুষ হাসপাতালের বিছানায় আপনার কংকালসার দেহ দেখে, মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখে।
অক্সিমিটারে রেড রেড সিগন্যাল আপনাকে শেষ শিক্ষা দেবে; নিঃশ্বাস নিতে না পারার কষ্ট, হৃদপিণ্ডের ধমণীতে রক্ত প্রবাহ আটকে যাওয়ার যন্ত্রণার দুঃসহ কষ্ট, ভেন্টিলেটরে মৃত্যুদণ্ডের ফাঁস নিয়ে অস্ফুট স্বরে কিছু বলতে চেষ্টা করার হাসফাঁস। শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক জোট আপনার লাশের শেষকৃত্যের অপেক্ষা করবে, বেনজির পুলিশেরা আপনার লাশকে গার্ড অফ অনার দেয়ার জন্য অপেক্ষা করবে, ফেসবুকে দলান্ধ নরভোজির কান্নায় বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাতম উঠবে; আপনি শুধু অক্সিজেন খুঁজবেন; আহা অক্সিজেন তুমিই শেষ পর্যন্ত প্রতিশোধ নেবে; আজকের এই বাংলাদেশ হত্যার!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন