(নাদিয়া সুলতানার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা থেকে)
১৯৫০ সালের ঘটনা। কয়েকজন সাহিত্যিক মিলে ঠিক করলেন ‘পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ’নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাবেন। তারা সবাই চাইলেন, কাজী মোতাহার হোসেনকে তাদের সভাপতি করতে।
সরদার জয়েন উদ্দীনসহ কয়েকজন গেলেন তার কাছে। সংগঠনের সভাপতি হতে রাজি হলেন কাজী মোতাহার হোসেন।
সেই সংগঠনেরই কোনো একটা পদে সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন, প্রখ্যাত সাহিত্যিক আলাউদ্দিন আল আজাদ। বামাচরণ চক্রবর্তী রোডে সেদিন বিকেল পাঁচটায় সভা হবে। সবাই এসেছেন পাঁচটায়, কিন্তু দেখা নেই আলাউদ্দিন আল আজাদের। সবার মধ্যেই বেশ বিরক্তির ভাব।
আলাউদ্দিন আল আজাদের দেখা মিলল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। এদিকে, কাজী মোতাহার হোসেনও ভীষণ বিরক্ত তার উপর দেরীতে আসার কারণে। তবুও তিনি বিরক্তির ভাব লুকিয়ে রাখলেন। গলা খাদে নামিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন, ‘কী আজাদ, আজ এত বিলম্ব যে?’
আলাউদ্দিন আল আজাদ হেসে বললেন, ‘কেন স্যার, ঠিকই তো আছে। আমি তো ঠিক ছ’টায়ই এসেছি। সভা তো এখনই শুরু হওয়ার কথা।’
এ কথা শুনে কাজী মোতাহার হোসেন বললেন, ‘তাহলে একটা গল্প শোনাই সবাইকে।’
কাজী মোতাহার হোসেন তার গল্পটা শুরু করলেন…
এক জ্যোতিষ এক লোকের হাতের রেখা দেখে বলেছিল, ‘আপনার ভাগ্য সুপ্রসন্ন। কাশীতে আপনার মৃত্যু হবে।’ অতএব, পাপের কোনো হিসাব হবে না, সোজা স্বর্গলাভ। এ রকম জেনে সেই ভদ্রলোক একাধারে পাপ করে যেতে থাকল।
একদিন খুনের দায়ে সেই লোকের ফাঁসির আদেশ হলো। জজ সাহেব তার শেষ ইচ্ছা জানতে চাইলেন। হতবিহ্বল সেই আসামি জ্যোতিষের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন, শেষবারের মতো।
জ্যোতিষকে নিয়ে আসা হলো। লোকটি জ্যোতিষকে দেখেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। বললেন, ‘এই কি তবে আমার কাশীতে মৃত্যু? আজ যে আমি ফাঁসিতে যাচ্ছি!’
জ্যোতিষ হেসে জবাব দিলো, ‘সব ঠিক আছে বাবা। কেবল “ক”এর মাথাটা একটু ফাঁক হয়ে গেছে।’
বলেই কাজী মোতাহার হোসেন আলাউদ্দিন আল আজাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'তোমারও সব ঠিকই আছে, কেবল ৫ এর মাথাটা…’
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন