একটি লেগরোস্ট এবং একটি সহমত ভাই

৩৭৭ পঠিত ... ১৬:৪৩, মে ১১, ২০২৩

sohomot-vai (1)

অফিস থেকে বের হতেই শাওনের ফোন, ধরবো কী ধরবো না ঠিক করতে পারছিলাম না, কারণ ধরলেই এখন ট্রিটের জন্য হাউকাউ শুরু করবে। নতুন চাকরিতে ঢোকার খবর শোনার পর থেকেই মাথা একদম খেয়ে নিচ্ছে। শাওন আমার ছোটবেলার বন্ধু, ছোটবেলা মানে খুবই ছোটবেলা একদম পাশাপাশি বাসায় থাকতাম আমরা। এরপর একসাথে স্কুল কলেজ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকলাম। ফার্স্ট ইয়ার পর্যন্ত আমাদের সার্কেল একসাথে থাকলেও সেকেন্ড ইয়ার থেকে শাওন আস্তে আস্তে নিয়মিত সা-সপ এবং সিঙ্গারা খাওয়া শুরু করে দিলো এবং নিয়মিত সহমত ভাইদের সাথে উঠতে বসতে শুরু করে। আমি আবার রাজনীতি নিয়ে অতটা সচেতন না। আমি আমার মতো কোনোরকমের টেনেটুনে ক্লাশ এসাইনমেন্ট এসব শেষ করে চাকরি-বাকরিতে ঢুকে গেলাম এবং কয়েকবছরের মধ্যে দুইটা কোম্পানি চেঞ্জ করে অবশেষে সদ্য জয়েন করা নতুন এই কোম্পানিতে এসে মনের মতো পজিশন পেয়েছি। শাওন অবশ্য এখনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়নি তবে আমার থেকে ভালোই আছে। সহমত ভাইদের আগে পিছে চলা শাওন এখন নিজেই একজন পরিপূর্ণ সহমত ভাই। মাঝেমধ্যে ছুটিছাটায় ক্যাম্পাসে গেলেই বন্ধুর দলবল আর দাপট দেখে খুব গর্ব হয়, পাশাপাশি ক্যাম্পাসে আসা নতুন ছাত্রদের গেস্টরুমে নিয়ে আদর সোহাগ করার ব্যাপারেও তার বিশেষ দক্ষতা আছে। বেশ কয়েক জাতীয় পত্রিকাগুলোতে এই আদর সোহাগ সংক্রান্ত নিউজও এসেছে বন্ধুর আমার।  

সে যাই হোক এখন ঘটনা হচ্ছে নতুন চাকরি পাওয়া উপলক্ষ্যে বন্ধুর দাবি, স্টারের লেগরোস্ট খাওয়া হবে। ফোনটা ধরার সাথে সাথেই ‘চ’ বর্গীয় একটা গালি দিয়ে শাওন বললো ‘কই আছোস ক? আইতাসি আমি আজকাই লেগরোস্ট খামু।‘ বললাম ‘আমি তো ধানমন্ডি।’ ভাবলাম আসতে পারবে না, বললো ‘স্টারে গিয়া ব, আমি দশ মিনিটের মধ্যে আইতাছি, আজকা যদি না খাওয়াও চান্দু তোমার লগে আমার সম্পর্ক শেষ।’ বাঁচার কোনো উপায়ন্তর না দেখে স্টারে গিয়ে বসলাম, ঠিক দশ মিনিটের মাথাতেই হাসিমুখে বন্ধু হাজির, অর্ডার দিয়ে পুরনো দিনের কথা বলতে বলতেই চোখের সামনে হাজির একদম তুলতুলে লেগরোস্ট আর সাথে প্লেইন পোলাও। স্টারের এই লেগরোস্টকে আসলে বেহেশতি খানার সাথে তুলনা করলে খুব একটা ভুল কিছু বলা হবে না, ভাত বলেন কিংবা পোলাও অথবা নান যেকোনো সাথে খুব সুন্দরভাবে মানিয়ে যায় এই দারুণ খাবারটা। তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে পোলাওয়ের সাথে বেশি পছন্দ। সাদা পোলাওয়ের রোস্টের ঝোল মাখিয়ে খাসির রানের তুলতুলে মাংস মুখে গেলেই মনে হয় ‘সার্থক জীবন আমার জন্মেছি এই দেশে।’

দুইবন্ধু মিলে দশমিনিটেই গ্রোগ্রাসে খেয়ে পুরো টেবিল খালি করে ফেললাম। হাত ধুয়ে এসে চায়ের অর্ডার দেওয়ার সময় দেখি শাওন ওয়েটারের সাথে কি যেন ফিসফিস করে বলছে। ওয়েটার চলে যাওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম ‘ঘটনা কী?’ শাওনের কথা শুনে আমার চক্ষু চড়কগাছ। ব্যাটা বলে কিনা লেগরোস্টের হাড্ডিটা ভালোমতো ধুয়ে নিয়ে আসতে, পরে নাকি কাজে লাগবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘কী করবি এইটা দিয়া।’ শাওনের জবাব ‘আরে ব্যাটা জিনিসটা খাসা, সেই মজবুত, একটু পরিস্কার কইরা নিলেই গেস্টরুমে নয়া মুরগিগুলারে এইটা দিয়া পিটাইতে পারুম আর নতুন নতুন ধরনের পানিশমেন্টও ট্রাই করা যাইবো।’ আমি আর কথা না বাড়িয়ে চা খেয়ে বিল নিয়ে আসতে বললাম। বিল দিয়ে বের হতে হতে শাওনের থেকে বিদায় নিয়ে বাসে উঠে মনে মনে ভাবলাম, জীবনে কিছুই করা হলো না, কী বোরিং জীবন শালার! শাওনের মতো সহমত ভাই হইতে পারলে লেগরোস্টের হাড্ডিটারেও ক্যামনে কাজে লাগানো যায় সেই বুদ্ধি অন্তত মাথায় থাকতো।

৩৭৭ পঠিত ... ১৬:৪৩, মে ১১, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top