লেখা: নাহিদ আশরাফ উদয়
ভুঁড়িটা বেড়ে গেছে জন্য ডায়েটে আছি, রাতে মেপে মেপে দেড় কাপের বেশি ভাত নেই না।
আম্মা আমার থেকে এক ডিগ্রী উপ্রে, ভাত মাপার জন্য দোকান থেকে আলাদা কাপ কিনে এনেছেন। তবে কাপের যে সাইজ গামলা বললে ভুল হয় না।
আম্মাকে বললাম, ‘এইটা কাপ না, ছোট আকৃতির বালতি। দোকানদার তোমাকে ভুজংভাজাং দিয়ে গছায়া দিছে, ফেরত দিয়া আসো... আর কালারটাও দেখো মেদমেদা কালার।‘
‘তুই বুঝোস বেশি! মেদমেদা রঙ দেইখাই তো আনছি.. যেন মনে থাকে এইটা দিয়ে তোর ভাত মাপা হইবো।‘
নিয়ম করে দুপুর, রাত্র দুইবেলাই এই কাপ মেপে ভাত, তরকারি দেয়। ডায়েটের আগে সাধারণত আধা প্লেট ভাত খাওয়া হতো। এখন এই গামলা দিয়ে এক প্লেটের একটু বেশিই খাওয়া হয়। ফলাফল স্বরূপ ১৫ দিনে সাড়ে তিন পাউন্ড বাড়িয়ে ফেলছি। দিন দিন আমার ভুড়ি গামলা কাপের চেয়েও বড় হয়ে যাচ্ছে।
এরমধ্যে অন্য যন্ত্রণা হলো, আম্মা কাপটা সাজিয়ে রেখেছেন একদম শোকেসের সামনে। বাসায় কেউ আসলে তাকে কাপ দেখিয়ে হাসি মুখে বলে, ‘আমার ছেলে ডায়েট করতাছে।‘
মানুষজন একবার তাকায় আমার ভুঁড়ির দিকে আরেকবার কাপের দিকে। আমি পড়ি বিরাট লজ্জায়।
আমি আম্মাকে বললাম, ‘আম্মা আমার ডায়েট শেষ, এই কাপ তুমি উঠায়া রাইখা দাও।‘
আম্মা ধমক দিয়ে বলে, ‘চুপ! তোর ভুঁড়ির দিকে দেখছিস? ডায়েট করতে হবে।‘
মনে মনে দোয়া করি, ‘আল্লাহ কাপটা ভাইঙ্গা ফেলো। এই বিপদ থেকে মুক্তি পাইতে হবে। যতদিন আম্মার হাতে এই কাপ ততোদিন পথ হারাবে না ভুঁড়ি আমার।‘
অবশেষে আল্লাহ আমার দোয়া শুনলো। এক দুপুরে কাপটা আম্মার হাত থেকেই ভেঙে গেলো। আম্মা মন খারাপ করে ফেললেন।
আম্মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, ‘মন খারাপ কইরো না। কাপ ভাংতেই পারে ব্যাপার না। আমার ডায়েট এমনিতেও শেষ। ডেইলি এক্সারসাইজ করি, কিছুদিনের মধ্যেই ভুড়ি কমবে।‘
সেদিন রাতে খাওয়ার জন্য হাসি মুখে ডায়নিং টেবিলে আসলাম। এসে দেখি.. ওমা! সেই আগের ম্যাদমেদা রঙের কাপ!
আম্মা হাসতে হাসতে বললেন, ‘কী ভাবছিস একটা করে কাপ কিনছি নাকি, পুরো ৫টা কাপ আরো আছে। চিন্তা করিস না, তুই ভাত খা.. তোরে ডায়েট আমি করায়াই ছাড়বো।‘
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন