প্রেমিক হতে গিয়ে টিটু ভাই যেভাবে আঙ্কেল হয়ে গেলেন

৯৩৬ পঠিত ... ১৭:২১, জুলাই ২৮, ২০২২

Titu-vai

নতুন বাসায় ওঠার কয়েকদিন পরই টিটু ভাই ঘোষণা দিলেন, তিনি তিনতলার মেয়েটির প্রেমে পড়েছেন। প্রেমের গভীরতা বুঝাতে আমাদের সবাইকে ডেকে টিটু ভাই বললেন, ‘এতোদিনে আমি সত্যিকারের প্রেমে পড়লাম।’

টিটু ভাইর সত্যিকারের প্রেমে পড়া এই প্রথম না। আমাদের হিসেব মতে এর আগে ১৩বার সত্যিকারের প্রেমে পড়েছেন তিনি। আমরা কয়েকজন চুপ থাকলেও মারুফ চুপ থাকলো না। টিটু ভাইয়ের মুখের উপর বলে ওঠলো, ‘ভাই, এর আগে সাথির বেলায়ও আপনি সতিকারের প্রেমে পড়েছেন।‘

: তখন তো বেডা মজা করছিলাম।

: তাহলে বাড্ডার বাসার নাদিয়া? তখনও আপনি সত্যিকারের প্রেমে পড়েছেন।

: হ্যাঁ। সেটা পড়ছিলাম। কিন্তু নাদিয়া তো আমার সাথে প্রেমে করেনি। প্রেম করলে সত্যিকারের প্রেমই হতো।

: তাহলে রিক্তার ব্যাপারে কী বলবেন?

: দেখ, রিক্তার সাথে আমার প্রেম একমাসের মাথায় ব্রেকাপ হয়ে গেছে। ওটা একটা অসম্পূর্ণ প্রেম। সত্য কখনো অসম্পূর্ণ থাকতে পারে না। ফলে ওটা সত্যিকারের প্রেমের কোটা থেকে বাদ পড়ছে। কোটা এখন খালি আছে।

মারুফ আরও কয়েকজনের নাম বলতে যাবে। টিটু ভাই থামিয়ে দিলেন। বললেন, ‘শোন বেডা। মানুষ যখনই প্রেমে পড়ে সেটাই সত্যিকারের প্রেম।

টিটু ভাই মেয়েটির ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া শুরু করলেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেলো, মেয়ের নাম রিতু। থাকে বড় বোনের সাথে। বড় বোনের সাথেই কলেজে যায়। রিতুকে কলেজে দিয়ে বড় বোন অফিসে যায়।

রিতু নাম জানার পরই টিটু ভাই নিজের এই প্রেমকে স্বর্গীয় প্রেম হিসেবে ঘোষণা দিলেন। সাথে বেশ শক্ত যুক্তিও ছিলো। টিটু ভাই জানালেন, ‘ওর নাম শুরু হয় ই-কার দিয়ে শেষ হয় উ: কার দিয়ে, আমার নামের বেলায়ও সেম। স্বররগীয় প্রেম ছাড়া এমন মিল অসম্ভব।‘

মেয়েরা বাসা থেকে বের হলে টিটু ভাইও বাসা থেকে বের হয়। মেয়ের বড়বোনকে সালাম দেয়। বাসার গেটে সালাম দেয়া শেষ করে শর্টকার্ট পথ ধরে টিটু ভাই তাদের আগেই মোড়ের দোকানে চলে যায়। সেখানে গিয়ে মেয়ের বড়বোনকে আবার সালাম দেয়।

এরমধ্যে রিতুর সাথে চোখাচোখি হয়। টিটু ভাই রিতু দিকে তাকিয়ে হাসে। চুল ঠিক করে। হাত দিয়ে চুল ঠিক করার বাহানায় হাতের মাসল দেখায়। মাঝে মাঝে রিতুও টিটু ভাইর দিকে তাকিয়ে হাসে।   

টিটু ভাই ঠিক করলেন, একটু ভিন্ন পথে হাঁটবেন। মেয়েকে না পটিয়ে আগে মেয়ের বোনকে পটাবেন। মেয়ের বোনের কাছে যথেস্ট ভালো ছেলে ইমেজ তৈরি করে এরপর সরাসরি রিতুকে বিয়ের প্রস্তাব দিবেন। এরমধ্যে যদি মেয়ের সাথে প্রেম হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে মেয়ের বোনও আর দ্বিমত করবে না।

টিটু ভাইয়ের ডেডিকেশন বেড়ে যায়। মেয়ের বোন বাজার করতে গেলে টিটু ভাই ওনাকে ফলো করেন। মাঝে মাঝে যেয়ে গিয়ে মেয়ের বোনকে বলেন, আপু, এই মাছ নিয়ে না। পঁচা হবে। ওই মাছ নেন। ভালো মাছ। আমরাও নিয়েছি। খেতে বেশ সুস্বাদু। টমেটো দিয়ে ঝোল করলে একদম অমৃত। কখনো কখনো ওনার বাজারের থলি নিজে বহন করে নিয়ে আসেন।

এরমধ্যে রিতুর সাথেও টিটু ভাইয়ের চোখে চোখে প্রেম চলতে থাকে। চোখে চোখে নাকি টিটু ভাই রিতুকে প্রপোজ করেছেন। রিতু নাকি চোখে চোখেই রাজি হয়ে গেছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে টিটু ভাই বলেন, আমি ওকে দুইবার চোখের পলক ফেলে প্রপোজ করছিলাম। রিতু মুচকি হাসি দিয়ে তিনবার পলক পেলে আমাকে আই লাভ ইউ বলেছে।

এক সকালে দেখি তিনটি বিশাল বিশাল বাজারের ব্যাগ নিয়ে রিতু ও তার বড় বোন নিচতলায় দাঁড়িয়ে আছে। দারোয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে। দারোয়ান এসে তুলে দিবে। কিন্তু সাথে সরাসরি দেখা করা ও কথা বলার এই সুযোগ টিটু ভাই মিস করতে চাননি। যেচে গিয়েই আপুকে বললেন, ‘আপু, চলেন আমরাই তুলে দেই।‘

: আরে না লাগবে না। দারোয়ান আসলেই তুলে দিবে!

: কী যে বলেন আপু, আমরা আছি কী করতে! একই বিল্ডিঙ্গে থাকি। এটুক হেল্প তো করতেই পারি।

আপু আর দ্বিমত করলেন না। অনিচ্ছা স্বত্বেও আমরা তিনটি বাজারের ব্যাগ নিয়ে ৩ তলায় উঠি। আপু চা অফার করার সাথে সাথেই টিটু ভাই রাজি হয়ে গেলো।  

আমরা বসে আছি। আপু চা নিয়ে আসলেন। সাথে আসলেন রিতু। আপু পরিচয় করিয়ে দিলেন।

: ও আমার মেয়ে রিতু। আমি আর ও: ই বাসায় থাকি। আপনাদের ভাই চট্টগ্রাম থেকে। এই সপ্তাহেই আসবেন। তখন বাসায় আইসেন। গল্প করা যাবে।  

রিতুকে বললেন, ‘এনারা তোমার নিচতলার আঙ্কেল। নতুন উঠেছে।‘

টিটু ভাইয়ের প্রাথমিক অনুসন্ধানে হালকা একটু ভুল ছিলো। উনি রিতুর বোন ছিলেন না, ছিলেন রিতুর মা।

 

 

 

 

৯৩৬ পঠিত ... ১৭:২১, জুলাই ২৮, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top