জনাব শেক্সপিয়ার, আপনি ভুল ছিলেন। আপনি বলেছিলেন, ‘নামে কী আসে যায়?’ নামে অনেক কিছু আসে যায়, জনাব।
তিন বেলা পেট পুরে খেতে পারে না, অথচ মা-বাবা আদর করে ছেলের নাম রেখেছে রাজা। মেয়ের নাম রেখেছে রানী।
ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নিয়মিত প্রথম আলো পড়ি। সম্পাদকীয় পাতায় লেখার সাথে কার্টুন থাকে। লেখার মান দ্বিগুণ করে দেয় সেসব কার্টুন। বেশিরভাগ কার্টুনের আর্টিস্ট তুলি। মেয়েটার ট্যালেন্ট দেখে হিংসে হতো! রস+আলোতে লেখা শুরু করার পর জানতে পারলাম উনি পুরুষ! পুরো নাম নিয়াজ মোর্শেদ তুলি।
আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য কিংবা ফুলার রোডের স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য, ভাস্কর হিসেবে দেখতে পাই শামীম শিকদারের নাম। নাম দেখে ঘুনাক্ষরেও ভাবি নাই উনি মহিলা!
পশ্চিমবঙ্গের লেখক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। মহিলা ভেবে থাকলে ঠকলেন! এটা তার ছদ্মনাম। আসল নাম তারাপদ। ইনি পুরুষ।
এসএসসি-এইচএসসিতে বিখ্যাত মহাকাব্য শাহনামা এবং তার রচয়িতা ফেরদৌসী নিয়ে একটা রিঅ্যারেঞ্জ ছিল। নামে মহিলা হলেও এই ভদ্রমহিলা একজন পুরুষ!
নাম নিয়ে ভালো বিপদে পড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপের এক নারী। ওই নারীর নাম কাইইহাহনাহইইকুকাউআহকাহহীহুলীহিহইহকাহহাউনাহইহলেহ। এ ছাড়া ওই নারীর আর কোনো ডাকনাম নেই। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপ এলাকায় যেকোনো লাইসেন্স বা কোনো পরিচয়পত্র তৈরির সময় কম্পিউটারে ৩৪ বর্ণের বেশি বর্ণের নাম লেখার কোনো উপায় নেই। ঝামেলাটা বাধে এখানেই। তাঁর নামে ৩৫টা বর্ণ!
আমার এক বান্ধবীর ঝামেলার কথা শোনেন। প্রেমিকের সাথে গভীর মিলনে আবদ্ধ। চুমুর এক পর্যায়ে বলে ফেলে অন্য ছেলের নাম। ছেলেটা প্রতারক বলে চলে যায়। কোনো দিন ফেরেনি।
তারপর আমার বন্ধুর কথাই ধরেন। সে আমার বোনকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিল। বন্ধু সবদিক থেকে ভালো। এর আগে তাঁর একটা রিলেশন নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছিল। সে যাই হোক। রাজি হয়ে গেলাম। সব ঠিকঠাক। দুই পরিবারের সবাই খুশি।
বিয়ের একদিন আগে বন্ধু জানাল, বিয়েটা সে করতে পারবে না। আমি ভাবলাম বোনের আগের সম্পর্কের কিছু ঘনিষ্ট ছবি দেখে হয়তো বন্ধুর এই সিদ্ধান্ত। বন্ধু বলল, না, দোস্ত। এসব কিছুই না। তোর বোনের নিক নেম। ওইটা মেইন প্রব্লেম। That name....that name reminds me of a cold blooded murderer। এই নাম আমার জীবন এলেমেলো করে দিছে। কোনোভাবেই আমি এই নামের সাথে বসবাস করতে পারব না। স্যরি দোস্ত। পারলে ক্ষমা করে দিস।
জনাব শেক্সপিয়ার, আপনি বলেছিলেন, নামে কী আসে যায়। গোলাপকে যে নামেই ডাকি তা সুগন্ধি বিলাবেই। কিন্তু মানুষের নামের বদলে অনেক বিষয় বদলে যায়, জনাব!
জনাব শেক্সপিয়ার, প্রতিটি দেশের সংখ্যালঘু জনগণ জানে নামে কতকিছু আসে যায়।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন