আমার বেয়াদব বিবেক

৪৮৪ পঠিত ... ১৬:৪৪, এপ্রিল ০৬, ২০২২

Beyadib-bibek

আমার বিবেক প্রায়ই আমার সাথে কথা বলে। ইদানিং ওর একটু মেজাজ খারাপ থাকে। গালিগালাজ করে। একদিনের ঘটনা বলি৷  

অফিসে যাচ্ছি। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম৷ গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে প্রেস ক্লাবের রাস্তা বন্ধ৷ এরপর আবার মৎস ভবন থেকে শাহবাগের রাস্তা বন্ধ৷ গুলিস্তান থেকে পরীবাগ আসতেই লাগছে ১ ঘণ্টা৷ প্রচণ্ড গরম। পিঠ ভিজে গেছে। হুট করে বিবেক হাজির।

: হারামজাদা, তোরে না কইছি এই শহর ছেড়ে চইলা যাইতে?

কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে, মেজাজ অত্যধিক খারাপ। স্বাভাবিক সময়ে ও আমাকে তুমি করে বলে। মেজাজ খারাপ হলে তুই। আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম। তাও বললাম—

: তুই তোকারি করছো কেন? ভদ্রভাবে কথা বলো।  

:ভদ্র কথা তোর উটকি দিয়া ভইরা দিমু আদারওদ!

কথা আর বাড়ালাম না। চুপ মেরে গেলাম। কিছুক্ষণ পর বিবেক আবার আসলো৷

: কিরে, কথার উত্তর দেস না কেন?

: কী উত্তর দেবো?

: এই আলের শহর ছেড়ে যাস না কেন?

: কেন? কী হইছে এই শহরের?

: গতরাতে গ্যাস ছিলো?

: না

: ওয়াসার পানিতে গন্ধ পাইছিস?

: হু

: ডায়রিয়ার খবর জানিস?

: জানি

: প্রতিদিন ৫ কিলোমিটার রাস্তা যাইতে ২ ঘণ্টা লাগে তোর?

: হ্যাঁ লাগে। তো?

: শব্দ দূষণে এই শহরের অবস্থান জানোস?

: জানি।

: বায়ূ দূষণে?

: জানি।

: মশা উটকিতে কামড়াইলে কেমন লাগে?

একবার ভাবলাম বলবো, 'অশ্লীল কথা কেন বলছো?' ভয়ে বলিনি। আবার যদি গালিগালাজ করে? কথা না বাড়িয়ে বললাম—

: ভালো লাগে না।

: আমি উইতা দিলে যে তোর শহর ভাইসা যায় ওইটা কেমন লাগে?

: ভালো লাগে না৷

: জিনিসপত্রের দাম বাড়া নিশ্চয়ই তোর কাছে ভালো লাগে?

: না। লাগে না৷

: এই যে তোর শহরে উন্নয়ন প্রজেক্টের মেয়াদ দিন দিন বাড়তেছে, সাথে দূর্ভোগ— এটা নিশ্চয়ই তোকে আরাম দেয়?

: না দেয় না৷

: শহরের মোড়ে মোড়ে মুতের গন্ধ ভালো লাগে তোর?

: না লাগে না৷

: এই যে প্রতিদিন এই শহরে অ্যাক্সিডেন্টে কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে। ভালো লাগে?

: না, লাগে না৷

: তাইলে উয়োরের বাচ্চা, এই শহর ছেড়ে যাস না ক্যান?

: গালি দিচ্ছো কেন? ভদ্রভাবে কথা বলো।

: আচ্ছা গালি দিবো না৷ বল কেন এই শহর ছেড়ে যাস না?

: প্রমিজ, গালি দিবা না?

: প্রমিজ।

: দেখো, এই শহরের হাজারটা প্রবলেম যেমন আছে, হাজারটা ভালো দিকও আছে। এই শহরে টিএসসি, শাহবাগ, মিরপুর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আছে। কাচ্চি বিরিয়ানি, চৌরঙ্গির লুচি-আলুরদম, ক্যাফে কর্নারের কাকলেট আছে। সোডিয়াম বাতির গান, জেমসের কনসার্ট আছে। মাঞ্জারের কাবাব, বিউটি লাচ্ছি, এফডিসির কালাভূনা আছে। বইমেলা, শিল্পকলা, নীলক্ষেত আছে। গুলিস্তানে ৩০০ টাকার এনার্জি বালব ১০০ টাকায় আছে, সেভেন্টি পার্সেন্ট ডিসকাউন্টে ৩০ টাকার জাইঙ্গা আছে। তুমি কখনো রাতের ফুলার রোড কিংবা হাতিরঝিল দেখেছো? ঝুমবৃষ্টির পরের রমনা পার্ক কিংবা কার্জন? বসন্তের কোন সকালে রমনায় ফুলের গালিছা দেখেছো? পহেলা বৈশাখের আগের রাতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ কিংবা চারুকলা দেখেছো? মঙ্গল শোভাযাত্রা, বসন্ত বরণ দেখেছো? চৈত্র সংক্রান্তি, সাকরাইন দেখেছো? রমনা কালি মন্দিরের শিউলি ফুলের ঘ্রাণ নিয়েছো? জগন্নাথ হলের স্বরস্বতী পূজায় গিয়েছো কোনদিন? এই শহরের দূর্গাপূজা দেখেছো? টিএসসি কিংবা রবীন্দ্র সরবরে বড় পর্দায় বাংলদেশের খেলা দেখেছো? বলাকায় সিনেমা? একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরী দেখেছো? বেইলি রোডে হুড তোলা রিক্সায় প্রেম করেছো? যেই শহরে জায়গার নাম পান্থপথ, পরীবাগ, রাস্তার নাম তাজমহল রোড। এই শহর জাদুর শহর, প্রাণের শহর। সেজন্য এক শহর ছেড়ে কোথাও যাই না।

একটানা বলে শেষ করলাম। আর কিছু মনে আসছে না। বিবেক চুপ করে আছে৷ মনে হয় ইমোশনাল হয়ে পড়েছে৷ খানিক পরে গালে কষে একটা চড়ের অস্তিত্ব অনুভব করলাম। মনে হলো বড় চাচার চড়, আন্দাজ নাই। চোখে অন্ধকার দেখছি। আর আমার বিবেক চিৎকার করে বলছে—

:আনকিরপোলা। জাদুর শহর তোর উটকি দিয়া ভইরা দিমু৷ আদারচোদ।

৪৮৪ পঠিত ... ১৬:৪৪, এপ্রিল ০৬, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top