গত পরশু আমার জন্মদিন ছিলো। সারাদিনের কাজের চাপে ভুলে গেছি। সন্ধায় আফিস শেষে বাসায় আসতেই আমার স্ত্রী মিলি বললো
: সরি সোনা। তুমি রাগ করো নাই তো?
রাগ করার কোন কারণ খুঁজে না পেয়ে বললাম, ‘রাগ কেন করবো?’
: আজ তোমার জন্মদিন ছিলো। আমি একদমই ভুলে গেছি। সরি সোনা।
বউ জন্মদিন ভুলে গেছে। জিনিসটা কিছুটা খারাপ লাগার মত বিষয়। হয়তো রাগ করারও। তাও বাদ দিলাম। রাগ করলেও হুদাই ঝগড়া হবে। ঝগড়ার পর দেখা যাবে মিলি নিজেই রাগ করে বসে আছে। আমি সারারাত বসে বসে বউয়ের রাগ ভাঙাচ্ছি।
এর আগে একবার এমনটা হয়েছিলো। আমাদের একসাথে সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মিলি তার বান্ধবির সাথে বের হয়ে সময় মত আসতে পারেনি। আমিও সিনেমা না দেখে খুশি মনে বাসায় গিয়ে ঘুম দিছিলাম। এদিকে মিলি বান্ধবির সাথে ঘুরেটুরে এসে ভাবলো, আমি রাগ করেছি। আমার একটু রাগ ভাঙানো দরকার। রাগ করার সুযোগ আছে দেখে আমিও মনের ভুলে একটু রাগ করে নিয়েছিলাম। একটু না, সম্ভবত একটু বেশিই রাগ করেছি। মিলি কয়েকবার আমার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করলো। সরি বললো। আমি টললাম না। মুখ ভার করেই থাকলাম। মাথা টিপে দিলো। আমি নো নড়নচড়ন। চুমু খেতে চাইলো। আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম। চুলে বিলি কেটে দেয়ার সময় আমি ওর হাতটাকে শুধু একটু সরিয়ে দিয়েছিলাম। ওটাই কাল হলো। আমার রাগ ভাঙ্গানো ফেলে মিলি নিজেই রাগ করে বসলো। এরপর নিজের রাগ ভুলে সারারাত মিলির রাগ ভাঙ্গিয়েছি। এরপর থেকে নিজে নিজেই প্রতিজ্ঞা করেছি, আর যাই করি বউয়ের সাথে রাগ করবো না।
আজকের ঘটনায় আসি। মিলি সরি বলার পর আমি বললাম, আরেহ নাহ। রাগ করবো কেন! এখানে রাগ করার কী আছে। জন্মদিন মানুষ ভুলে যেতেই পারে। আর প্রত্যেকবার শুভেচ্ছা জানাতে হবে নাকি?
মিলি বললো, ‘সত্যিই রাগ করোনি?’
আমি বললাম, ‘না।‘
মিলি চোয়াল কিছুটা শক্ত করে বললো, ‘তুমি তাহলে রাগ করোনি?’
: না বাবা, রাগ করিনি।
কী হলো জানি না। মিলি হুট করেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। চোয়াল আগের চেয়ে কয়েকগুণ শক্ত করে বললো,
: তা করবা কেন? আমি শুভেচ্ছা জানালাম নাকি জানালাম না তাতে তো তোমার কিছু যায় আসে না। তোমাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য তো শত শত মানুষ আছে। সেখানে আমার শুভেচ্ছার তো কোন গুরুত্ব নাই। বিয়ের ৫ বছরে আমার শুভেচ্ছা পানসে হয়ে গেছে। এখন আর বউয়ের শুভেচ্ছা লাগে না। এখন তো পথেঘাটে শুভেচ্ছা পাওয়া যায়।
: না বাবা। বিষয়টি তেমন না।
: তা বিষয়টি কেমন শুনি!
: না মানে রাগ করেই বা কী লাভ!
: রাগ করেই বা কী লাভ মানে? তুমি কী বুঝাতে চাচ্ছো নাজমুল? তোমার রাগকে আমি কখনো গুরুত্ব দেই না?
: গুরুত্ব দাও না, বিষয়টি এমন নয়। রাগ করলে তো ঝগড়া হয়, সেজন্য আরকি রাগ করিনি।
: রাগ করলে ঝগড়া হয় মানে? তুমি বলতে চাচ্ছো আমি ঝগড়া করি? আমি ঝগড়াটে মহিলা? তোমার সাথে এত বছর সংসার করে এখন আমাকে শুনতে হচ্ছে, আমি ঝগড়াটে!
: আচ্ছা, হইছে। বাদ দাও। রাগ করলাম।
: রাগ করলাম মানে? তুমি আমাকে বাচ্চা পাইছো? ছেলে-ভুলানো কাজ পাইছো। তোমার রাগ করতে হবে না। সরো।
এটুকু বলেই পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো মিলি। আমি বসে বসে ভাবছি। চুমু খেয়ে রাগ ভাঙাবো নাকি চুলে বিলি কেটে দেবো? নাকি পা টিপবো?
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন