তিনবেলা কাচ্চির বিনিময়ে পড়াতে চাই

১৩৮৯ পঠিত ... ২০:১৪, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২২

3-bela-kacchi-

আগে বলে নেই কী পড়াবো। হ্যাঁ, কাজের কথাই আগে। কাজই পৃথিবীর মোক্ষম মন্ত্র। খাওয়া-দাওয়া? সে হচ্ছে কাজ করতে হলে যে একটু খেতে-পরতে হয়, ওটারই অংশ।

খাওয়ার ব্যাপার যখন উঠলো, ওটা একটু বলে নেই। কী? কাজের কথা? হ্যাঁ, সেটা তো বলবোই। আফটার অল, কাজই তো সব। প্রসঙ্গ উঠেছে দেখেই খাবার কথাটা একটু বলে নিচ্ছি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে যে কাচ্চিটা চাই, ওটা হবে আগের দিনের বাসী কাচ্চি। একটু বাসী বাসী। হালকা কি টকে গেছে? তা যাক। ওটাকেই পুরান ঢাকাইয়ারা আদর করে খাউটা বানিয়ে ফেলে। একটু টক টক স্বাদের গলা বিরিয়ানি। তাতে মাংসের পরিমাণ কম থাকলেও অসুবিধা নেই। আগের দিনের রেজালা থাকবে। ওটাই আমের আচার দিয়ে মেখে মেখে খাবো। ভালো কথা, এই খাউটা খাবার সময় স্টুডেন্ট এসে যদি পড়াশোনা নিয়ে একটা কথা বলে, ঠিক ঢাকাইয়া স্টাইলেই ওর নাকশা ফাটিয়ে দেবো। আর আপনি যদি বাচ্চার পড়াশোনার আলাপ তুলতে যান? তাহলে… থাক থাক, আলাপ বাড়িয়ে লাভিয়ে নেই। দু’টো খেতে দেবেন বলে মাথা কিনে নিয়েছেন নাকি?

দুপুরে খেতে দেবেন ঠিক আজানের পর পর। আমি আবার এগারোটার চায়ের সাথে দুটো বিস্কিট ছাড়া আর কিছু খাই না। সেজন্যই খিদে লেগে যায়। এমন করে চেয়ে আছেন কেন? বিস্কিটই তো খেতে চেয়েছি দু’টা। প্লেইন কেক বা পেস্ট্রি তো আর চাইনি। যাকগে, দুপুরের কাচ্চিটা একটু তেলতেলে হলে খারাপ হয় না। আমাদের এখনকার ক্রেজ যে ঘরানার কাচ্চি, মানে একটু সুলতান’স ডাইন্স, কাচ্চি ভাই, দাম লাদিধ- এমন। মাটন পিসটা তুলতুলে হওয়া চাই। টিকিয়াটা মাংসল, পাঁউরুটির গুঁড়োর ভেজাল শুধু নয়। আলু হওয়া চাই ঘিয়ে ভাজা, মোলায়েম। আলুতে না মাখনে ধরছেন, বুঝতে পারা গেলে চলবে না। ভালো কথা, আপনার কাচ্চির রসা দেন? ঐ যে, হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলে যেটা? আহা বুঝলেন না? কাচ্চির হাঁড়ির তলে যে তেলটা জমা হয় ওটার কথা বলছি। কাচ্চি খাওয়ার যখন জোশটা চলে আসবে, তখন ঢকঢক করে এক বাটি চালান করে দেবো। তাতে শরীরে যে জোয়ারটা তাগদটা আসবে, আরও দু’টা হাতি খেয়ে ফেলা সম্ভব, ছাগল তো কোন ছাড়!

ভালো কথা, পান দেন তো আপনারা? দেন না? ছি… কাদের পড়াতে আসবো আমি। এ কি হয় নাকি? পান দেবেন, সাথে চুন-সুপুরিও দেবেন। আর ভালো কথা, এতো খাবার পর আবার বাচ্চার পড়াশোনার অবস্থা জিজ্ঞেস করতে আসবেন না। তাতে বদহজম হয়।

এই যে দেখুন, বিকেলে তো আবার কম খাওয়াবেন আপনারা। খান দুই লুচি আর কাবাব খাইয়েই খালাস। তা খাওয়ান, অভিযোগ নেই। আমি অল্পাহারী। খাবার নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু রাতের খাবারেও যদি কঞ্জুসী করেন, এসপার-ওসপার হয়ে যাবে! 

রাতে চাই ঝরঝরে চালের কাচ্চি। অনেকটা লখনৌয়ি ঘরানার। দমে দমে রান্না। ঘ্রাণে মশলার অস্তিত্ব বোঝা যাবে, আবার কোথায় যেন তা মিলিয়েও যাবে। অনেকটা প্রিয়ার হাসির ঝলকের মতোই! সেটা আবার ভালো করে পাবেন মাংসে! ওহ… মাংসে কামড় দিতেই টের পাবেন কয়লার আঁচের সুঘ্রাণ। তাতে নানা মশলার স্বাদ চিৎকার করে ঘোষণা দিচ্ছে যার যার জাতের। এই জিনিস যত ইচ্ছা খান, পেটের অসুখের বালাই নেই। সাথে কী খাওয়াবেন? আহা, শুধু কাচ্চি খাওয়াবেন নাকি? একটু চিকেন তন্দুর হোক? কিংবা চিকেন টিক্কা? সে আপনার ইচ্ছা। আমি মেহমান, এতো কথা বলবার দরকার কী?

শেষপাতে? মাটির বরতনে ফিরনী? নাকি হুক্কার গুড়ুক গুড়ুক? কী? সিগারেটের কথা বলবেন নাকি? কী আস্পর্ধা আপনার… শিক্ষক মানুষ আমি, আমাকে কি এসব কথা বলা আপনার শোভা পায়?

রাতে আবার পড়াশোনার কথা তুলতে যাবেন না। অনেক ঝক্কির কারবার, তাতে কথা তুললে রাতের ঘুম নষ্ট হতে পারে।

কিন্তু পড়াশোনা? হ্যাঁ হ্যাঁ, সেটা নিয়েও আলাপ হওয়া দরকার। সেটাই তো কাজের কথা। আচ্ছা ভালো কথা, বাড়তি কাচ্চিটুকু তুলে রেখেছেন তো? সকালে কিন্তু ওটা দিয়েই খাউটা বানাতে হবে…  

১৩৮৯ পঠিত ... ২০:১৪, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top