দেবদাস যদি এই যুগে লেখা হতো

৫০৫ পঠিত ... ১৬:০৬, জানুয়ারি ১৬, ২০২২

debdash-e-juge

পারু-দেবদাসের কত স্মৃতি! কত কাক ডাকা ভোরে তারা দুজনে লুডুস্টারে লুডু খেলেছে। রাতের পর রাত জেগে চ্যাটিং করেছে। দুজনে মিলে ‘ফ্রেন্ডজোন ট্যুর’-এ গেছে। এইতো সেদিন পারু দেবদাসকে ম্যাসেঞ্জারে নক দিয়ে শতটা কান্নার ইমো দিয়ে বলল, ‘দেবদা, তুমি না খেলে আমিও খাবো না। আচ্ছা, রাগ করে না বাবুটা। হাঁ কর। খাইয়ে দিচ্ছি। কী বললা? হাতে কামড়ে দিবে, তাই না? দুষ্টুমি ছাড়ো!’ সেই পারু। হ্যাঁ, সেই পারু আজ দেবদাসকে ফ্রেন্ডজোনে ফেলে দিয়ে চলে গেলো। ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে লিখল ‘ম্যারিড টু ভুবন চৌধুরী (দ্য রিয়েল জমিদার)।‘ এই দেখে দেবদাস শরবত পান করার জন্য ছুটল।   

শরবত পানের সময় লাস্যময়ী বালিকা চন্দ্রমুখীর সঙ্গে পরিচয়। চন্দ্রমুখী দেবদাসের হৃদয়বিদারক ঘটনা শুনে হো হো করে হেসে উঠল। হালকা চিনি দিয়ে ধুতুরা ফুলের নির্যাসমিশ্রিত চা মুখে দিয়ে বলল, ‘দেবদাস সাহেব, আপনি কি দেবদাস হতে চান? ওসব ফালতু আইডিয়া ছাড়েন। ইদানিং কি ফেসবুকে ঢোকা হয়? পিপল ইউ মে নো–তে মেয়েরা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে এক শুক্রবার। পরের শুক্রবারে তাদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আপনি আসছেন শেক্সপিয়ার আমলের ন্যাকামির প্রেম দেখাইতে। এসব ঢং রাখেন। শোনেন দেবদাস বাবু, ভালো পরামর্শ দিচ্ছি। বাপের যা জায়গা সম্পত্তি আছে বিক্রি করে বিসিএসের বই কেনেন। তারপর পড়া শুরু করেন।’  

মোটিভেশান পেয়ে তখনই দেবদাসের চুল দাঁড়িয়ে গেল। এই মোটিভেশনাল স্পিকার এতদিন কোথায় ছিল! দেবদাস মুখার্জী বুক ফুলিয়ে হাঁটা ধরল। পেছন থেকে ডেকে চন্দ্রমুখী বলল, ‘আর শোনেন। ফেসবুকে কোনো মেয়ে ছ্যাঁকা খাওয়ার পোস্ট দিল কিনা নজর রাখবেন। দিলেই নক দিবেন। নিজের ছ্যাঁকা খাওয়ার কাহিনী বলবেন। ব্যস! প্রেম পাক্কা। বিয়ের দাওয়াত দিয়েন। এখন নীলক্ষেতে যান। বিসিএসের বই কেনেন।’

এবার দেবদাস মুখ ঘুরিয়ে বলল ‘সিস, বিসিএস তো লেন্দি প্রসেস। অনেক পড়াশোনা করতে হয়। অনেক সময় লাগে।’ চন্দ্রমুখী বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আপনি কি বোকা, দেববাবু? আপনি একটা উপন্যাসের নায়ক। নিজের ওয়েট বোঝেন না? এক দিনে এক বোতল শরবত গিলতে পারেন, আর এক মাসে একটা বিসিএস গাইড বই গিলতে পারবেন না!’

বিসিএসের বই কিনেও কিছু হলো না দেবদাসের। মন পড়ে থাকে পারুতে। ফেসবুকের ‘মেমোরিজ’ অপশনটা দুঃখ বাড়িয়ে দেয় আরও। 

চন্দ্রমুখীর কানে গেল এ খবর। চন্দ্রমুখী আনুশকা শর্মা হয়ে বলল, ‘তোমার শরবত পান ছুটাচ্ছি আমি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি আর আইসিটি পার্ট শেষ করবা। তারপর এক বোতল শরবত পাবা।’

শুধু পড়া দেওয়া না। নিয়মিত দেবদাসের কাছে পড়া নিতে লাগল চন্দ্রমুখী। একদিন যেমন আমরা শুনলাম চন্দ্রমুখী জিজ্ঞেস করছে, ‘বলো দেখি, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস উপন্যাসের নায়ক কে ছিলেন?’ দেবদাস আমতা আমতা করে বলল, ‘পড়তে পড়তে মাথা আউলায় গেছে চন্দ্রমুখী। মাঝেমধ্যে নিজের নামও ভুলে যাই।’

এভাবেই চন্দ্রমুখীর উৎসাহ-উদ্দীপনায় বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেল দেবদাস। এদিকে পড়াতে পড়াতে কখন নিজে দেবদাসের প্রেমে পড়ে গেছে বুঝতে পারেনি চন্দ্রমুখী। একদিন লজ্জা-শরমের কলিজা ভুনা খেয়ে চন্দ্রমুখী দেবদাসকে বলল, ‘আমারে লগে নিবা, অ্যাডমিন ক্যাডার?’

কাহিনী এখানে শেষ হয়নি। পার্বতীর খবর আমরা জানি না। জানতে ইচ্ছেও হয়নি। আমরা জানি দেবদাস মুখার্জীর খবর। তিনি পুলিশ ভেরিফিকেশনে বাদ পড়ে গেছেন।  হতে পারেননি বিসিএস ক্যাডার । এখন তাই সকাল-সন্ধ্যা শরবত পান করেন।

৫০৫ পঠিত ... ১৬:০৬, জানুয়ারি ১৬, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top