কেনিয়ার মাসাইমারায় একদিন

৬৩৬ পঠিত ... ২০:৩৪, ডিসেম্বর ২১, ২০২১

Khaddorommo-Masaimara (2)

কেনিয়ার মাসাইমারা।

ছয় ফুট মানুষগুলো অদ্ভুত এক সাজ পোশাকে দাঁড়িয়ে। মুখে কীসের যেন লাল রঙে রাঙানো। পশুর রক্ত? অসম্ভব না! গায়ে রূপার অলংকার। পরনে লাল রঙের ঐতিহ্যবাহী মাসাই পোশাক। অদ্ভুত হলো এর সাথে তাদের পুরোদস্তুর ক্রিকেট খেলার প্রস্তুতি। পায়ে প্যাড, হাতে গ্লাভস, মাথায় হেলমেট!

ভুল পড়ছেন না আপনি, মাসাইদের মধ্যে এখন পুরোদস্তুর সিরিয়াস ক্রিকেট খেলা হয়! খালি নিজেদের পোশাক বাদ দিয়ে ঐ সাদা পোশাক গায়ে জড়াতে ওদের আপত্তি, তাই বাইরের দলগুলোর সাথে আর খেলা হয়ে ওঠে না। আজকে এই খেলা দেখার জন্যই তো ওরা আপনাকে খাতির করে নিয়ে এসেছে।

কেমন হয় ওদের খেলা? আপনি ক্রিকেটের জোয়ারের দেশের লোক। আকরাম-বুলবুলের আবাহনী-মোহামেডানের ধুন্ধুমার দেখে বড় হয়েছেন। এখন সাকিব আল হাসান বা মুস্তাফিজদের নৈপূণ্যে আপনার চোখ ঝলসানো, আপনাকে মুগ্ধ করা তো আর এতো সহজ নয়! ওদের বৃদ্ধ সর্দার বিগলিত মুখে আপনার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন খেলা কেমন হলো। যুগের প্রয়োজনে মাসাইরা এখন ভাঙা ভাঙা ইংরেজী আর সোয়াহিলী বলতে পারে। আপনি ভদ্রতার হাসি টেনে বললেন- ভালোই তো...

ওদিকে মাসাইদের গ্রাম থেকে কীসের যেন কুড়ুক্কু আওয়াজ ভেসে এলো। পুরো গ্রামটাই বেঁড়া দিয়ে ঘেরা। সর্দার আপনাকে বুঝিয়ে বললেন- এ হলো খাবারের আমন্ত্রণ। আপনার সম্মানে সামান্য ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। দয়া করে আতিথ্য গ্রহণ করুন।

আপনি মুখে খুব 'আহা আহা... মরি মরি... কী সৌভাগ্য আমার' করে গেলেন, মনে মনে বললেন- খেয়েছে!

যে খাবারই সামনে আপনার দিক তারা, সোনামুখ করে খেয়ে ফেলতে হবে। আফ্রিকার সেরা যোদ্ধার জাত, আপনার মতোন নাদুস-নুদুস বাঙালীকে স্রেফ হাতে টেনে ছিঁড়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে।

প্রথমে এলো গোল মতোন একটা পাত্র, ভেতর থেকে ধোঁয়া উড়ছে। আপনি উঁকি দিয়ে আশ্বস্ত হলেন, স্যুপ। এ তো আপনার চেনাজানা খাবারই। সর্দার তার বাটিতে চুমুক দিলেন, আপনিও আপনারটাতে। দিয়েই শিউরে উঠলেন। অসম্ভব তিতকুটে!! নানা রকম লতাপাতা দেয়া স্যূপে, কোনটা থেকে এমন তেতো হলো কে জানে? তেতো দিয়ে আমরা বাঙালীরাও তো শুরু করি, কিন্তু এমন ব্রহ্মতালু রিরি করানো তেতো আপনি আপনার সাত জন্মেও খাননি!

এবার মেইন ডিশের পালা। আপনি নড়েচড়ে বসলেন। আসবে তো কিছু না কিছুর মাংস। কোন একটা ঘ্যাঁট মতোন হলেই হলো, আপনি না হয় নাক বন্ধ করে সেটা গিলে ফেলতে পারবেন।

কিন্তু ওকী...? এলো তো একতাল কাঁচা মাংস!! সর্দারকে জিজ্ঞেস করায় বললেন- কাঁচা মাংস দিয়ে শুরু করে খাদ্যের পবিত্রতা রক্ষা করা হচ্ছে!

আপনি মনে মনে ভাবলেন গ্রিল মুরগি খাচ্ছেন, তারপর টপ করে চাবান দিয়ে গলায় চালান করে দিলেন এক টুকরা মাংস!

এবার এলো বড় এক গামলায় করে রান্না করা মাংস। আপনি প্লেটের জন্য এদিক-ওদিক তাকালেন, কিন্তু প্লেটের কোন খবর নেই! মাংসের গামলার সাথে আরও এলো রুটি, উগালি। উগালি এক ধরনের মণ্ড বিশেষ। পোস্ট অফিসে আঠার কাজ করার জন্য ঐযে মণ্ড ফেলে রাখে না? ঐরকম দেখতে উগালি। হাত দিয়ে ভেঙে মাংস বা সবজির সাথে খেতে হয়।

সর্দার একটা রুটি তুলে রোল বানালেন। তার দেখাদেখি দলের অন্যরাও। আপনিও একটা রোল বানিয়ে নিলেন। সর্দার হাতের রোলটা তুলে বিজাতীয় কী একটা বলে চিৎকার দিয়ে উঠলেন, তারপর হাতের রোল চুবিয়ে দিলেন গামলার সরোবরে। ওহ কী খাওয়া... গামলায় রুটি চুবিয়ে উন্মত্তের মতো সবাই খেয়ে যাচ্ছে। রুটি চাবানোর শব্দ হচ্ছে চবাত চবাত। কারো মুখ থেকে একটুখানি মাংস আবার স্লিপ করে পড়ে যাচ্ছে গামলায়। আলাদা প্লেট-চামচের বালাই নেই। সবাই এই বৃহৎ গামলা থেকেই কবজি ডুবিয়ে খেয়ে যাচ্ছে। আপনি স্থবির হয়ে বসে ছিলেন, হঠাৎ সর্দারের চিৎকার- একী... আপনি খাচ্ছেন না?

অমনি আপনিও ঘিনপিত ঝেড়ে গামলায় হামলে পড়লেন। জানের মায়া বড় মায়া!

শেষপাতে এলো দুধ। মাসাইরা বাঁচে দুধের ওপর। গড়ে প্রতি মাসাই দিনপ্রতি এক লিটার দুধ খান। কিন্তু একী? দুধ এমন লাল রঙের কেন? রুহ আফজা নাকি?

আপনি চুমুক দিলেন। কেমন একটা নোনতা স্বাদ! খারাপ না। এক গ্লাস শেষ করে পরবর্তী গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে সর্দারকে নির্মলেন্দু গুণের স্টাইলে জিজ্ঞেস করলেন- দুধের রঙ লাল কেন?

সর্দার নির্বিকার মুখে জবাব দিলেন- ও কিছু না। আমরা অর্ধেক দুধের সাথে অর্ধেক গরুর রক্ত মিশাই!

আপনার গ্লাস আপনাতেই থেমে গেলো! সর্দার ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলেন- কোন সমস্যা? রক্ত কম কম মনে হচ্ছে? ওরে আরও একটু ফ্রেশ রক্ত ঢাল মেহমানের গ্লাসে...

...

সাধে বলি?? খুব ঘোরার শখ, না? ঘরের ছেলে ঘরে বসে থাকবেন, তা না টইটই করে দুনিয়ে ঘুরে বেড়াবেন!!

যাবেনই যখন... যান!! মাসাই সর্দার আপনারই অপেক্ষায় উদ্বাহু হয়ে দাঁড়িয়ে!

৬৩৬ পঠিত ... ২০:৩৪, ডিসেম্বর ২১, ২০২১

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top