ভিকি-ক্যাটরিনার বিয়ের ফুড রিভিউ!

১৭২০ পঠিত ... ১৮:২৮, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১

vicky-kat-biye-food-review

রাজস্থানের পুরানো এক প্রাসাদ। যে সে না, ৭০০ বছরের পুরানো। তাতে কুর্দি-পাগড়ি পরা সেঁপাই দাঁড়ানো। আমাকে দেখেই বললো: ইনভাইটেশন হ্যায়?

আমি পাঞ্জাবিটা একটা চাপড় দিয়ে বললাম: চিনোস আমারে?

- ওহ আইয়ে সাব… বৈঠিয়ে সাব…

আমি দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বললাম: যা যা শালা…

টুংটাং বিয়ের বাদ্য বাজছে। রাজস্থানী সংগীতের সুর। এইদিকে ঐদিকে নানা বলিউডি তারকা। আমার কী? খাওয়া খাদ্যের জন্য আসা, ওটা হলেই কাজ শেষ।

একদিকে দেখি ডাঁই করে রাখা নানা রকম সবজি। পাঁচমিশালী সবজি, নভরতন সবজি, কলকাতা স্টাইলে রাঁধা নিরামিষ। মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লুচিতে ঠোনকা দিয়ে খাচ্ছে। সব সবজি নাকি কর্ণাটক থেকে আনা।

ওইদিকে দেখো ফলের পাহাড় একেবারে… নেদারল্যান্ড থেকে আনা। আপেল, কমলা, মোসাম্বি তো ঢাকার কাওরানবাজারেই পাইকার পাওয়া যায়। এতোদূর থেকে আনার দরকার কী? গেস্টদেরও আদেখলামো দেখো, জন্মে মনে হয় ফল খায় নাই! সব হামলে পড়েছে ওদিকে!

ফিলিপিন্স থেকে অ্যাভোকেডো এসেছে, তা দিয়ে সালাদ হবে। প্যারিস থেকে পেরি পেরি পনির। পেরি পেরি সসের কথা শুনেছি। আমাদের দেশে নান্দোস বেচে। পনিরের ব্যাপারটা প্রথম দেখলাম। তা হোক, মানুষ খাচ্ছে দেখি ভালোই। সাথে লাল পানি, সাদা পানি। আমি মানে মানে কেটে পড়লাম ওদিক থেকে।

একপাশে ইন্ডিয়ান খাবার। রাজস্থানী ডাল বাটি চুরমা, লাল মাস। এর রঙ আসলেই লাল, তবে জিনিসটা বানায় খাসির পাঁজরার হাড্ডিতে। রাজস্থান মরুভূমির জায়গা, পানি কম দিয়ে মাংসের পানিতেই মাংস রান্নার বিশেষ কৌশল, তাতে শত পদের মশলা। আছে নানা পাঞ্জাবি খাবার, আর ক্যাটের পছন্দে আইসক্রিম।

একি? এতো ঘোড়ার খুরের আওয়াজ কোত্থেকে আসে? তাকিয়ে দেখি, সাত ঘোড়ার রথে চড়ে বরবেশে আসছে ভিকি। আর স্টেজে নর্তকীর বেশে দাঁড়িয়ে ক্যাটরিনা। এখন নাকি কালা-চশমা নাচ হবে।

ছিছিছি… এই নাকি কনের সাজ? মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো! একটু ঢেকেঢুকে সাজলে কী হয় বাবা? রাগে হাতের লুচিটা ঢিল মেরে ফেলতে যাবো, ঘুমটা গেলো ভেঙে!

কী বিদিকিচ্ছিরি স্বপ্নরে বাবা…

ভালো করে ঘুম থেকে উঠে গোসল দিলাম। ভিকি-ক্যাটরিনার বিয়েতে যাবো। দাওয়াতের কার্ড দিয়ে ক্যাটের বাবা বারেবারে যেতে বলেছে…

গেটের সামনে তুমুল হল্লা। বরপক্ষ এসেছে, শালা-শালী গেট ধরেছে। বিব্রত নতুন জামাই বারেবারে ঘাম মুছছে। আমি মনে মনে বললাম, শীতকালে তোমার ঘাম আসে… আহ্লাদ…

টেবিলে খাবার লাগানো শুরু হয়েছে। ঢাকাই স্টাইলে খানা। ডেকোরেটরের ফুলতোলা ওয়াড়ের সাদা টেবিল ক্লথ। তাতে ঠকাস করে পড়লো বোরহানির গ্লাস। সবুজ রঙের গ্লাসে সবাই বোরহানি ঢেলে নিলো। আমিও নিলাম। সাথে দিয়ে গেলো আলুবোখারার চাটনির বাটি। মানুষ জন আর কিছু না পেয়ে আলুবোখারার চাটনিই প্লেটে নিয়ে খাওয়া শুরু করেছে। সাথে বোরহানির গ্লাসে চুমুক।

পোলাওয়ের ডিশ দেয়া শুরু মাত্রই হাতা গুটিয়ে নিলাম। ওয়েটার হাতে করে করে প্লেটে রোস্ট গুঁজে দিচ্ছে। আমাকে দিলো পাখনার এক পিস। স্বান্তনা হিসেবে হাতে করে দিলো একটু ঝোল। বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলাম। মিষ্টি মিষ্টি কোরমার স্বাদের রোস্ট, সাথে কাঁচামরিচের ঝাঁজ। আর বোরহানির চুমুকে নাকে শর্ট সার্কিট।

ঐদিকে বাটি চলে এসেছে রেজালার। আমি রোস্টটা কোনমতে খুবলে খেয়ে বাটি টান দিলাম রেজালার। একেবারে গরম গরম ধোঁয়া উঠছে। সিনার তিন পিস মাংস বেছে নিলাম। আগে আগে না নিলে পরে ভালোটা নাও পাওয়া যেতে পারে। পাশের থেকে আবার রেজালার বাটি টানা শুরু করেছে, কী মুশকিল…

ঐদিকে স্টেজ থেকে ক্যাটরিনার কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আহারে, বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হোক। আমি খাওয়ায় মন দিলাম। একটু পর আওয়াজ আসলো- আলহামদুলিল্লাহ!

আমরা খেতে খেতেই বলে উঠলাম- আলহামদুলিল্লাহ।

শুরু হয়েছে খোরমা বিতরণ। কে যেন খাবার মাঝেই বাম হাতে গুঁজে দিয়ে গেলো দু’টা খোরমা। আমি মনে মনে বললাম- হে পরওয়ারদেগার, তুমি ওদের ভালো করো…  

১৭২০ পঠিত ... ১৮:২৮, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top