লতিফা বানু যে কারণে সংসারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন

৯৯৩ পঠিত ... ১৮:২৫, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০

অলংকরণ: জারিন তাসনিম 

লতিফা বানুর প্রচন্ড মেজাজ খারাপ। অবশ্য এত ভয়ংকর রকমের মেজাজ খারাপ হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি।

কিন্তু তিনি খুব উত্তেজিত হয়ে আছেন। এইমাত্র হাত থেকে একটা বিদেশি কাঁচের গ্লাস মেঝেতে পড়ে ভেঙে গেছে। ডাইনিং টেবিল থেকে রান্নাঘরে নিচ্ছিলেন ধোঁয়ার জন্য। তখনই এ ঘটনা ঘটে গেলো।

এই মুহূর্তে গ্লাসগুলো নিয়ে কী করবেন সেটা ভাবছেন লতিফা বানু। অসম্ভব প্রিয় গ্লাসগুলো জার্মানি থেকে রহমানকে দিয়ে আনিয়েছিলেন। বর্তমানে লতিফা বানুকে গজগজ কর‍তে করতে সারা বাড়ি হেঁটে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। বিড়বিড় করে অস্পষ্টভাবে কী বলছেন, বোঝা যাচ্ছে না।

প্রথমেই সামনে পড়লো ছোট মেয়ে কুসুম। কুসুম রংপেন্সিল দিয়ে গ্রামের দৃশ্য রঙ করছিলো। লতিফা বানু একটা কষে থাপ্পড় দিলেন কুসুমকে। কুসুম মায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।

'তোর পড়ালেখা নাই? সারাদিন রংপেন্সিল নিয়ে বসে থাকিস। খালি বসে বসে খাওয়া আর রং করা। আর তোদের জন্য সারাদিন আমাকে রান্না করতে হয়। এই রান্না করতে যেয়েই বাসার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি আর কারো জন্য রান্না করতে পারবো না। যার খাওয়া লাগবে সে নিজে রান্না করে নিবে, তাহলে গ্লাস প্লেট কিছুই ভাঙবে না৷'— বলে হনহন করে চলে গেলেন লতিফা বানু। নয় বছরের মেয়ে কুসুম কিছুই বুঝতে না পেরে আবার গ্রামের দৃশ্য রং করাতে মনোযোগ দিলো।

বড় ছেলে মন্টু তখন গীটার বাজিয়ে ভিডিও কলে মারিয়াকে গান শোনাচ্ছিলো।
'বিন্দু আমি তুমি আমায় ঘিরে...'

লতিফা বানু গিটারটা টেনে ধড়াস করে মাটিতে ফেলে বললেন, 'চুপ, একদম চুপ। একটা শব্দও করবি না।'

মাকে এতো রাগান্বিত দেখে তো মন্টু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'কী হয়েছে মা? এমন করছো কেনো?'

'আজকে থেকে তোর গান গাওয়া বন্ধ। দে, গিটার দে। এইযে আজকে লোহার ট্রাংকে তুলে রাখছি, আমি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত হাতে নিবি না। এই বাসায় শয়তান ঢুকতে চায়। যখন দেখলো নিজে ঢুকতে পারতেছে না, তখন এই গিটার পাঠালো। এর শব্দের জন্যই কাজে আমার পর্যাপ্ত মনোযোগ ছিলো না। গিটারের টুংটাং শব্দ না থাকলে আমার হাত থেকে গ্লাস দুইটাও ভাঙতো না।' এই বলে মন্টুর হাত থেকে গিটার নিয়ে ট্রাংকে তালা দিয়ে রাখলেন লতিফা বানু।

সামনে ফোন দেখে ফোন দিলেন রহমানকে।
'হ্যালো রহমান।'
'হ্যাঁ আপা। কী অবস্থা বলো।'
'তুই আমাকে আর আপা ডাকবি না। তোকে বললাম জার্মানি থেকে একদম অরিজিনাল কাঁচের গ্লাস নিয়ে আসতে। তুই আনলি নিউ মার্কেটের দশ নাম্বার গ্লাস। লজ্জা করে না টাকা মেরে আবার আপা ডাকতে? বেশরম কোথাকার। ফোন রাখ৷'

লতিফা বানু আবার ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি শুরু করলেন। আজকে বুয়া আসেনি; সাপ্তাহিক ছুটি। বুয়া এত ছুটি নিলে তো গ্লাস ভাঙবেই। এতে লতিফা বানুর কী দোষ? বুয়াকে মনে মনে গালি দিতে যেয়ে ড্রয়িং রুমে ঢুকে দেখেন মন্টুর বাবা পত্রিকা পড়ছে।

তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে লতিফা বানু বললেন, 'তোমার মত সংসার উদাসীন গৃহকর্তা থাকলে গ্লাস তো ভাঙবেই, সাথে সংসার ও ভাঙবে। আজ যদি অন্য কারো সংসারে যেতাম তাহলে কি আর ভাঙতো....'

৯৯৩ পঠিত ... ১৮:২৫, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top