রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মি. সাহেদ দ্য বাটপারের খবর চলে গেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কানে। তিনি মাত্রই দুপুরের ভাত ঘুম দিয়ে উঠেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বয়স হয়েছে। ইদানীং ঠোঁট লাল করে পান খাওয়ার অভ্যাসটা ভালোই ঝেকে বসেছে। তিনি একটা মিষ্টি পান মুখে দিয়ে বললেন, মি.সাহেদকে গণভবনে ডাকেন। চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ দেন।
সাহেদের হাতে রোল্যাক্স ঘড়ি। প্রধানমন্ত্রীর বাসায় যাবে। একটা আলাদা ভাবসাব নিয়ে যাওয়ার দরকার আছে। ফ্রান্স থেকে আনা বিশেষ সুগন্ধি মেখে তিনি গণভবনে রওনা দিলেন।
ভদ্রলোকের একটা বদভ্যাস আছে। চা ফু দিয়ে ঠান্ডা করে খাওয়া। চায়ে ফু দিলেন। গণভবনের সবুজ মাঠে সেই আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে কাছে ডাকলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখে তখনো পান। খেয়ে শেষ করতে পারেননি।
সাহেদ কাছে গেলেন। আশেপাশের মানুষকে অবাক করে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাহেদের গালে ঠাশ করে একটা চড় বসালেন।
সাহেদ অবাক। চারিদিকে পিনপতন নীরবতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন, চা কেমন মি.সাহেদ? অপেক্ষা করেন। আপনার জন্য আরও সারপ্রাইজ আছে। পুরান ঢাকায় লোক গেছে বিরিয়ানি আনতে। দারুণ টেস্ট। সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকুন। পা নামালে সাথে সাথে দেখবেন আপনার মাথায় একটা কালো পিঁপড়া কুটুস করে কামড় দিছে। বেশি ব্যথা পাবেন না। তারপর আপনি ধপ করে লুটিয়ে পড়বেন।
মি.সাহেদ এক পায়ে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছেন। পিঁপড়া কামড়ালে ধপাশ করে পড়ে যাব কেন? নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে বন্দুক দেখে আসল কাহিনি বুঝতে পারলেন। মায়ের মুখ মনে করে বুকে থুতু দিলেন।
সন্ধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবার মি. সাহেদের সামনে এলেন। নিন সাহেদ সাহেব, বিরিয়ানি খান। বিরিয়ানি খাওয়া শেষ। আবার প্রধানমন্ত্রী তাকে কাছে ডাকলেন। আবারও ঠাশ! তোরে কি আমরা এইজন্য করোনা টেস্টের অনুমতি দিছিলাম রে হারামজাদা? তোর কি ধারণা জেলের ভাত খাওয়াইয়ে এখন রাষ্ট্রের টাকা খরচ করব? তোর সব হিসাব-নিকাশ আছে আমার কাছে। এখানে সিগনেচার কর। তোর সব টাকা-পয়সা এখন খরচ হবে করোনা আক্রান্তদের জন্য। আর তুই থাকবি জেলে। আর যাওয়ার সময় তোর পৃষ্ঠপোষকগুলার মানে তোর পেছনে যারা আছে আরকি, তাদের লিস্ট দিয়ে যাবি। একে একে চা খাওয়ার দাওয়াত দিব। এই বর্ষায় হালকা গরম চা খেতে খুব ভালো লাগবে।
বিদায় পর্ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মি. সাহেদকে বিদায় জানাচ্ছেন। মি. সাহেদ হেঁটে কিছু দূর গেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে ডাকলেন। 'সাহেদ সাহেব, মন খারাপ করলেন?'
'কেন আপা?'
'এই যে রেগে গিয়ে তুই তোকারি করলাম।'
'না আপা।'
'ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।'
আমি সামান্য লেখক। বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখি। সাহেদের গল্পের কাছে আমার গল্প কিছুই না। এই লোকটাকে দেখে আমি অবাক। শাওন তো এখন আমাকে নিয়ে টিটকারি মারে। তোমরা বাংলাদেশের লেখকরা করলা কী? কত পড়াশোনা করে তারপর লেখালেখি কর। আর এই লোককে দেখ। বাই বর্ন রাইটার। আমি শাওনের এই কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারি না। এই লোক দেশের সিস্টেমকে একেবারে উলঙ্গ করে দিছে। ডাইরেক্ট ল্যাংটা।
সাহেদ গ্রেপ্তার হয়েছে। জানি না কতদিন জেলে থাকবে। রাঘববোয়ালরা হয়তো নতুন কোনো বড় ঘটনার জন্য অপেক্ষা করছে। সাহেদের ঘটনা ধামাচাপা পড়লেই হয়তো তাকে জেল থেকে বের করে নিবে। আমাকে হয়তো 'কোথাও কেউ নেই' নতুন করে লিখতে হবে। যেখানে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হবে না। সহমত ভাইয়ের দেশে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি বেমানান। দেখা যাক কী হয়। শেক্সপিয়ার মহাশয় অনেক আগেই বলে গেছেন, To be or not to be.
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন