কীভাবে কাটছে ব্যাকবেঞ্চারদের সময়? চলুন একটু তাদের কথাও জানার চেষ্টা করি

১৩১৬ পঠিত ... ১৪:৪১, এপ্রিল ১১, ২০২০

প্রথম আলোতে গত ২৯ মার্চ ‘কেমন কাটছে প্রথমদের সময়’ শিরোনামে একটা ফিচার দেখা যায়। পৃথিবীটাই এমন, সবাই শুধু প্রথমদের নিয়েই ভাবে। ব্যাকবেঞ্চারদের নিয়ে কেউ ভাবে না।

তবু কেউ ভাবে না বলে কি eআরকিও ভাববে না! তাই কী করে হয়। সবাই যাদের কথা বলে না তাদের কথাই বলে eআরকি। আমরা তাই খোঁজ নিয়েছি দেশের আনাচে কানাচে কোয়ারেন্টাইনে অলসতর সময় কাটানো (নরমালিই তো তারা অলস সময় কাটায়!) ব্যাকবেঞ্চারদের, জানতে চেষ্টা করেছি কেমন কাটছে তাদের সময়।

 

নিজের শিক্ষাজীবনে এই প্রথম কোন রিটেক না খাওয়া শিক্ষার্থী রাকিব খান বলেন, ‘কয়েকদিন হলো, পুরোপুরি বাসায় আছি। ভার্সিটিতে নাকি কিছু অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলো। পেছনের বেঞ্চে বসে আড্ডায় ব্যস্ত থাকায় সেগুলো সম্পর্কে জানি না। জানতে চেয়েছি, বিষয়টা এমনও না। কিন্তু আঁতেল প্রথমরা ব্যাচের গ্রুপে সারাদিন ভ্যাজর ভ্যাজর করায় জানতে হইছে। গ্রুপ আপাতত আনফলো করে রাখছি। এই কয়দিন আমি পড়ালেখা নিয়ে একদমই ভাবতে চাই না। মুভি টুভি দেখছি। তাও পুরো দেখতে পারছি না। টেনেটুনে দেখছি। আসলে বিছানা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিছু ভালো লাগছে না। বিছানায় লেপ্টে আছি, আম্মুর বকা শুনছি, টিকটিকির সাথে কথা বলছি। আমি আপাতত ঘুম স্টক করতে চাই। ক্যাম্পাস খুললে প্রচুর রাত জাগতে হবে।’ 

পুরো শিক্ষাজীবন জুড়ে সিজিপিএ ২ মেইনটেইন করে যাওয়া জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজির শিক্ষার্থী ফাহমিদা মিনহাজ বলেন, 'হল ছাড়ার নির্দেশ আসার পর হল ছাড়তে হয়েছে। একটা জিনিস এখনো মাথায় ঢুকে না, ক্যাম্পাস বন্ধ হলে হল ছাড়ার নোটিশ দিতে হবে ক্যান। হলে কোয়ারেন্টাইন করলে ভাল্লাগত, বাসায় আর থাকতে মন চায় না! জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজির শিক্ষার্থী আমি। গবেষণাটা আমার রক্তে, জিনে, ডিএনএ কিছুতেই না থাকলেও স্যারদের প্যারায় টুকটাক কপি গবেষণা করা লাগে। তো, এই কোয়ারেন্টিনে বাসায় বসে ডালগোনা কফি নিয়ে গবেষণা করছি। ডালগোনা কফির চা ভার্সন মুড়িগোনা চা বের করেছি। শবে বরাতের রাতে রুটিগোনা হালুয়া নামে নতুন একটা জিনিস বানাইছি। ফেসবুকে আপলোডও দিছি। প্রচুর লাইক কমেন্ট পড়তেছে। হলে গেলে সবাইকে বানিয়ে খাওয়াবো। কান্ট ওয়েট।’

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাইল রহমান বললেন তার ইতিহাস, ‘করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকেই বাসায় বন্দি। অবশ্য বাসায় যে খুব থাকি তা না, থাকি তো ফেসবুকে। নিজ নিজ বাসায় থাকলেও এখন বরং মনে হচ্ছে, সবাই যেন এক জায়গায়ই আছে, ফেসবুক! তবে আমি যে শুধু শুধু বসে আছি এমনটা নয়। এই ডিপ্রেসিং সময়ে সবার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার চেষ্টা করছি। প্রচুর মিম বানিয়ে, শিট পোস্ট করে, রিসেন্ট ইস্যু নিয়ে মজার ওয়ান লাইনার পোস্ট করে এই সংকটে মানুষকে হাসাতে চেষ্টা করছি। শুধু এতটুকুই না, নিজের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার দিয়ে আমি এন্টি-ডিপ্রেশন ক্যাম্পেইনও চালাচ্ছি। এখানে যেকোনো মেয়ের মন খারাপ কিছুক্ষণের মধ্যেই দূর করে ফেলা হয়। নাম্বারটা বলছি- ০১৭৯********।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়া জান্নাত কাটাচ্ছেন ভীষণ ব্যস্ত সময়, 'প্রুচুর মিম দেখছি আর শেয়ার দিচ্ছি। গত এক মাসে ফেসবুকের সব পেজের সব মিম আপনি আমার স্টোরি আর শেয়ার মিলায়ে পেয়ে যাবেন। ফেসবুকের গেমগুলা খেলতেছি, বিভিন্ন অ্যাপ যেমন হু ইজ ইউর সিক্রেট ক্রাশ, হোয়াট আর ইউর দিউচার প্রফেশন... সব ট্রাই করে ফেলেছি। এছাড়া ইন্সটায়ও অনেক বিজি থাকতে হয়।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন বললেন, ‘করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বাসা থেকে বের হওয়ার উপায় পাচ্ছি না। অথচ এই সময়টাতে ট্যুর, আড্ডা, চিল করে সময় কাটানোর কথা ছিলো। তাছাড়া সবতো বন্ধ, ট্যুর ক্যামনে দিবো। তবে স্ট্রাগল করা লাগছে ঘুম নিয়ে। ঘুমের টাইমজোন আউলায়ে ফেলছি। এখন ঘুমে থাকলেও হিসেব থাকে না, না থাকলেও থাকে না। নেটফ্লিক্সে থাকি, আবার ঘুমাই, আবার নেটফ্লিক্স, আবার ঘুম… কোনটা দিন কোনটা রাত কিছুই টের পাই না। এর মধ্যেও অবসর সময়ে ফ্লোরের টাইলস গুনি, হাতের কাছে কার্ড থাকলে সেইটা দিয়ে তাসের ঘর বানানোর চেষ্টা করি। টুয়েন্টি নাইন খেলার মতো তো আর কেউ নাই। কি যে আজিব একটা টাইম চলে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী ফাতিন হাসনাত চৌধুরি বনে গেছেন পুরোপুরি উদ্যোক্তা, ‘আই এম ট্রায়িং টু হেল্প পিপল একচুয়ালি। বিসাইডস দ্যাট, একটা বিজনেস মডেলও বানিয়েছি। ইটস লাইক একের ভিতর দুই। প্রেজেন্ট টাইমটাই তো আসলে সেবার সমন্বয়ে বিজনেস করার সময়। সেজন্যই একটা নেটফ্লিক্স একাউন্ট খুলেছি। ৫টা স্ক্রিন পাঁচজন বন্ধুকে দিয়েছি। ৪০০ টাকা পার একাউন্ট। প্রতি স্ক্রিনে ১০০ করে আমি মেইন্টেনেন্স কস্ট (পুরাটাই লাভ) নেই। ওদেরও উপকার হইলো, আমারও লাভ হলো। আই এম থিংকিং এই মডেলটা ভার্সিটিতে প্রোজেক্ট হিসেবে সাবমিট করে দিবো। ইউ নো, এই পৃথিবীতে একটু চালাক না হলে আসলেই চলা খুবই টাফ।’  

অগণিত রিটেক খাওয়ার পর ৭ম বর্ষে এসেও পাশ করতে না পারা কুয়েটিয়ান হাসান মাহবুব আছেন বেশ টেনশনে, ‘করোনা ভাইরাসে বাসায় এসে একটু লাভ হইছে। আড্ডা থেকে আসলেই বের হওয়া দরকার ছিলো। কোয়রেন্টিনের পরেই প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। পাশ করতে না পারলে ওকে পাবো না। সেজন্য এই বন্ধে প্রচুর পড়তেছি। বিশ্বাস করবেন কি না জানিনা, গত ১০-১২ দিনে যে পরিমাণ পড়েছি গত ১২ বছরেও এই পরিমাণ পড়িনি। আল্লাহ এবার পাশ করাইয়া দিলেই হয়।’

গ্রন্থনা: রায়হান আমিননাজমুল হক

১৩১৬ পঠিত ... ১৪:৪১, এপ্রিল ১১, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top