সন্ধ্যেবেলা রফিক মিয়ার ধলা করে মেয়েটা এত্তোগুলো খড় হাতে করে গোয়ালে ঢুকলো।
দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো কালা মিয়ার। পুরাই হারামজাদী একটা। সুযোগ পেলে পেছনে ফিরে বাম পা দিয়ে একটা লাথি কষানো যেত। সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। কালা মিয়ার দড়ি বাঁধা। আর শালীর ঘরের শালী পিছনের পায়ের ধারে কাছেও আসবে না। সামনে এসে খরগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো- খা, কালা মিয়া খা।
কালা মিয়া খররর করে একটা শব্দ করলো। মনে মনে বললো, *লের খাওন আমার। আর যেমনে আদর কইরা দিতাছে, মনে হইতেছে রাজভোগ আনছে রাজকুমারী।
আরও জঘন্য গালি মাথায় আসলো, সেটা আর মনে আনলো না কালা মিয়া। কী লাভ গালি দিয়া? দুই দিনের দুনিয়া। এই যে কালা মিয়ার ভাই ধলা মিয়া, আইলসামি করতো দেইখ্যা বাঞ্চোত বুড়া রফিক মিয়া দিলো বেইচ্যা। হাটে বলে ধলা মিয়ার গোস্তের খুব সুনাম হইছে।
হুট করে কালা মিয়ার মনটা গেলো খারাপ হয়ে। সারাদিন হাল টেনে এই খ্যাড়খ্যড়ে খড় কয়দিন ভালো লাগে? একটু যদি লবণ পানি মিশিয়ে সল্টি করে দিতো, কোনমতে গিলে ফেলা যেতো। বা একটু ভাতের মাড়!
ভাবতে ভাবতেই খড় মুখে দিলো। দিয়েই থু করে ফেলে দিলো। তেলাপোকা বসে ছিলো একটা খড়ের উপর, মুখে চলে গেছে। ভোক*দ কোনখানের- ভাবলো কালামিয়া। এক ছটাক ঘিলুও মনে হয় মাথায় নাই! এত্তবড় পাহাড়ের শরীরটা নিয়া আমি যে বইস্যা আছি, একটু চ্যাদবোধ থাকলেও তো মুখের ভিত্রে হান্দায়া যায় না।
সব দিন যে এইরকমই খারাপ যায় তা না। এই তো এর আগে যখন চাঁদ উঠেছিলো, পাশের বাড়ির চান্দু ব্যাপারী ওকে একেবারে নাকে-শিঙে হাত বুলাতে বুলাতে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলো। তারপর ঢুকিয়েছিলো ওদের গোয়াল ঘরে। লাল রঙের একটা গাভী কিনেছে ওরা। নাম দিয়েছে লালী।
গোয়াল ঘরে শুধু লালীকেই ঢুকিয়ে দেয়নি, সাথে দিয়েছিলো এক ঝুড়ি ঘাস! কী সুন্দর গন্ধ আসছিলো ঘাসগুলো থেকে! মাত্র মনে হয় কেটে আনা হয়েছে পাশে মাঠ থেকে। মুখে দিতেই মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। তাজা রসে একেবারে থিকথিক করছে। আর ঘাসগুলোও কী সবুজ, মুখে দিতেই মচরমচর শব্দ হচ্ছে।
লালীটা কেমন যেন ঘ্ররর করে শব্দ করলো। তারপর ঘাড়ের কাছে এসে নাক ঘসতে লাগলো। মাগীটার হইছে কী? মজার ঘাস আইছে, খা পেট ভইর্যা, গায়ে গা ঘসছ ক্যান? নাক দিয়া ফোঁস ফোঁস করছ ক্যান?
দিলো এক লাত্থি! আ*দা গাভী! সাথে সাথেই গায়ের থিকা রক্ত পড়া শুরু করলো! চান্দু ব্যাপারীর রাখালটা লাঠি দিইয়া পিটাইতে পিটাইতে আবার এই রফিক মিয়ার গোয়ালে রাইখ্যা গেলো।
সেদিনের ব্যাপারটা আজও ধরতে পারে নাই কালা মিয়া। এত আদর কইরা নিলোই বা ক্যান, জামাই আদরে লালীর লগে গোয়ালে ঢুকাইলোই বা ক্যান, আবার পিটাইতে পিটাইতে দিয়াই বা গেলো ক্যান?
যাক, কালা মিয়ার কী? গতর খাটায়া কাম করে। পেটে ভালো-মন্দ দুইডা পড়লেই হয়। এই বা*ছাল খাইলে মন ভরে না।
রাগের ঠ্যালায় মাথাটা একটু ঝাঁকুনি দিলো! ওমাগো! দড়িই দেখি খুইল্যা আইছে! কালা মিয়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বাইরে এলো। কেউ বাঁধা দিলো না। সবাই ঘুম নাকি?
কালা মিয়া আস্তে আস্তে লালীদের গোয়ালের সামনের মাঠটায় গিয়ে দাঁড়ায়। বুক ভরে শ্বাস নেয়। বাতাসে ঘাসের গন্ধ!
কালা মিয়া এগোয়। আজকে সে খুবলে খুবলে খাবে ঘাস। একেবারে কচি দুর্বাগুলো বেছে বেছে। মাঠের ভেতর চকচকে কালো শরীরে চাঁদের আলো মেখে এগিয়ে গেলো। আজকে তার সুখ। ঘাস খাওয়ার স্বাধীনতার সুখ।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন