পিয়ন থেকে যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক হওয়া কাজী আনিসের কাল্পনিক মোটিভেশনাল স্পিচ

১১২৯ পঠিত ... ১৮:৫৭, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯

সফলতার মূলমন্ত্র কী? আপনারা বলবেন, পরিশ্রম। এক বিখ্যাত মনীষীও বলে গেছেন, পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। কিন্তু আজকে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, এই আমি! আমিই ওই মনীষীর বানীকে পরিবর্তন করে দিয়েছি। আমি প্রমাণ করেছি, পিয়ন হওয়াই সাফল্যের চাবিকাঠি।

৭ বছর আগে আমি কী ছিলাম? আপনাদের চোখে কিংবা কাগজে কলমে কিংবা কাজেকর্মে পিয়ন। যে অফিসের লোকজনকে চা এনে দেয়, কোন কমিশন ফাইলে সিগনেচারের জন্য বসের অফিসে দৌড়ায়, মাঝে মাঝে ঝাড়ি খায়। সব পিয়নের কাজটিই এমন। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখেছি একটু বড়ভাবে। আমি স্বপ্ন দেখেছি, আমি যাদের জন্য চা আনছি, তারাই একদিন আমাকে চা খাওয়ানোর (সাথে টা!) জন্য মরিয়া হয়ে যাবে। অন্যের পকেটে কমিশন ঢোকানোর জন্য বসের সাইন নিতে যে কমিশন ফাইল নিয়ে আমি দৌড়াচ্ছি, একদিন এই কমিশন ফাইল সাইনের জন্য আসবে আমার দপ্তরে আর কমিশনও ঢুকে যাবে আমার পকেটেই। একদিন আমিই হবো ঝাড়িরাজ। সবাইকে ঝাড়ি দিবো।

আপনি বিসিএস ক্যাডার হতে পারেন, হতে পারেন আইবিএ গ্রাজুয়েট। হার্ভার্ড, ক্যামব্রিজ থেকে বিশাল বিশাল ডিগ্রিও আপনি নিতে পারেন। কিন্তু তাতেই কী সফলতা আসবে? আমি বলবো না! আমি বলবো আপনাকে হতে হবে পিয়ন। আপনাকে হতে হবে ছোট। এরপর সেই রুট লেভেল থেকে বড় নেতাদেরকে আইডেন্টিফাই করতে হবে, তাদের নিয়ে হোমওয়ার্ক করতে হবে। তাদের সবার নাম মুখস্থ করতে হবে, নিয়ম করে প্রতিদিন সহমত ভাই জপতে হবে। যদি কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন, তবে আপনি, হ্যাঁ আপনিই ছুঁতে পারবেন সাফল্যের স্বর্ণশিখর!

বিশ্বের যত বড় বড় সফল মানুষ আছেন, তারা সবাই জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে পিয়ন ছিলেন। স্টিভ জবস যখন অ্যাপলের কাজ প্রথম শুরু করেন। খবর নিলে দেখবেন, তিনিও হয়তো অফিসে চা বানিয়েছেন। নিজের জন্য কিংবা ক্লায়েন্টের জন্য। একই কাজ করেছেন মার্ক জাকারবার্গ, জ্যাক মা, বিল গেটস কিংবা জেফ বেজোসরা। আমি যখন পিয়ন ছিলাম, আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম। একদিন বিল গেটসদের নামের সাথে উচ্চারিত হবে আমার নাম।

তবে পিয়ন থেকে বোয়াল মাছ হওয়ার এই জার্নিতে স্টিভ জবস, বিল গেটসদের মতো কোন ভিনদেশী আমার ইন্সপারেশন ছিলো না। (মোটিভেশন বক্তৃতায় বলার জন্য এদের নাম মুখস্ত করছি, কী খটমট নামরে বাবা) আপনারা যদি পিয়ন টু বোয়াল মাছ হতে চান আপনাদেরও লাগবে না কোন ভিনদেশী ইন্সপারেশন। আমাদের দেশে, হাতের কাছে সরকারি অফিস, পার্টি অফিসগুলোতে অসংখ্য বিলিয়নিয়ার পিয়ন থাকতে ইন্সপিরেশনের জন্য কেন আমরা বিদেশ যাবো?

আপনারা হয়তো ভুলে গেছেন বাগের হাট ডিসি অফিসের পিয়ন আব্দুল মান্নান তালুকদারের কথা। কিন্তু আমার মতো যারা সফল হতে চান, যারা পিয়ন থেকেও হতে চান কোটিপতি তারা কখনো ভুলবে না এই মহান ইনফ্লুয়েন্সার কে। হ্যাঁ! পীরে কামেল, ইন্সফ্লুয়েন্সার অফ এভ্রি পিয়ন, মিলিয়নিয়ার আব্দুল মান্নান তালুকদারই আমার ইন্সাপিরেশন।

তবে আব্দুল মান্না তালুকদার শুধুই বিলিয়নিয়ার হলেও থেকে গেছেন পিয়নই! কামিয়েছেন টাকা। কামাতে পারেননি পদ মর্যাদা। আর আমি শুধু টাকা কামানোর ধান্দায় ছিলাম না। একই সাথে মর্যাদা কামানোর ধান্দায় সর্বদা সজাগ ছিলাম আমি। নিজের সংগঠনের পিয়ন থেকে হয়েছি দপ্তর সম্পাদক। এতেই আমি থেমে থাকতে চাই না। দেখুন, রাজনীতিতে বড় নেতা হওয়ার প্রথম ধাপেও আজ আমি পৌঁছে গেছি- জেল! জেল না হলে কিংবা জেল হলেও মুক্তি পেলে সংগঠনের এই দুর্দিনে আমিই ধরব সংগঠনের হাল। আমি হবো চেয়ারম্যান অব যুবসকল। আমিই হবো একদিন দেশের সর্বোচ্চ কর্ণধার।

আর হ্যাঁ, আমিই হবো পিয়ন থেকে সফল হতে চাওয়া আপনাদের সবার ইনফ্লুয়েন্সার।

লেখা: নাজমুল হক

১১২৯ পঠিত ... ১৮:৫৭, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top