ওর সাথে বিচ্ছেদের পর থেকেই খুব কষ্টে দিন যাচ্ছিলো আমার।
সময় যেন কাটতোই না। আমাকে সবকিছু থেকে ব্লক করে দিয়েছিলো। নিজের স্ব-অভিমানকে ঠকিয়ে তাকে হয়তো ফিরিয়ে আনা যেতো, কিন্তু সেটা কি আদৌ ঠিক হতো! তারচে' বরং কষ্টে কষ্টে মরে যাওয়াটাই ভালো মনে হয়েছে আমার।
কোনকিছুতে মন বসাতে পারছিলাম না। খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অর্ধেক হয়ে গেছি প্রায়। বন্ধু-বান্ধবীরা আমাকে বুঝতো, আমার স্ট্রাগলগুলো বুঝতো। তারা আড্ডায় ডাকত, সান্ত্বনা দিত, আনন্দে মাতিয়ে রাখার চেষ্টা করতো। কিন্তু তারপরেও তাকে ভুলে একটু যে ভালো সময় কাটাবো সে অবকাশ আমার মনের ছিল না।
মরে যাচ্ছিলাম দিনদিন। বিচ্ছেদের কথা জানতে পেয়ে অনেক পরিচিত/অল্প পরিচিত পুরুষেরা সঙ্গ দিতে চাইতো। গল্প করতে চাইতো, ফোন দিতো। মন টানতো না। অবুঝের মতো কান্নাকাটি করতাম। আমার এমন দুরবস্থা দেখে আমার পরিবার টেনশনে থাকতো, কখন কী করে বসি! আব্বু বন্ধু-বান্ধবীদের ফোন করে বাসায় আনাতেন, যেন আমি একটু সঙ্গ পাই। আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় মায়ের ব্লাড প্রেশারটাও ক্রমাগত বাড়তেই থাকে দিনদিন...
আমার মন মানছিলো না। পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। দিনরাত শুধু তার একটা মেসেজ বা কলের আশায় ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। অথচ গত ২ মাসে ছেলেটার কখনো একটু সুমতি হয়নি যে আমার একটু খোঁজ নেবে।
প্রতিদিনের মতো সেদিন রাতেও কাঁদতে কাঁদতে ফেক প্রোফাইল থেকে তাকে স্টক করছিলাম আর খুব চাইছিলাম যেন সে আমার সাথে একটু যোগাযোগ করে। আমি তার সাথে একটু কথা বলার জন্য মারা যাচ্ছিলাম ভেতরে ভেতরে...
তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। প্রচন্ড মাথাব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙ্গলো। ফোন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ৮টা বেজে ১৭ মিনিট। ডাটা অন করতেই হুড়হুড় করে অনেকগুলো নোটিফেকশনে ভরে গেলো ফোন। মেসেজ পাঠানো ঐ সকল নতুন পুরুষদের নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। নোটিফিকেশন বার থেকে মেসেজগুলো ক্লিয়ার করে দিতে দিতেই প্রাক্তনের নাম চোখে পড়লো!
একরকম ভয় মিশ্রিত সুখানুভূতি কাজ করে গেলো। পেটের মাঝে গুড়গুড় হচ্ছে। এটাই কি স্টমাকে ওড়াওড়ি করা সেই বাটারফ্লাই?
‘কেন মেসেজ করলো এতোদিন পর! কী বলার জন্য! তবে কি সে ভালো নেই? তবে কি সেও আমায় মিস করে? ফিরতে চায়?’
ঠোঁটে হাসি, চোখে অশ্রু এবং মনে ভয় মিশ্রিত অসংখ্য প্রশ্ন নিয়ে ইনবক্স খুলে দেখি সেখানে লেখা- (561) 932-5713. Hello, i'm Francisco Lopez, Director of messenger......
ফোনটা হাতে নিয়ে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ। আজও ভেবে পাইনি, কী উত্তর দেবো তাকে...
লেখা: মুমতাজ মুমু
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন