বাঙ্গালির নাম বিচিত্রা : আমাদের দেশে যেভাবে নাম রাখা হয়

৩৩৭৬ পঠিত ... ১৯:৫২, নভেম্বর ২২, ২০১৮

কানা ছেলের নাম হয় পদ্মলোচন। খুব অল্প মানুষেরই নামে আর কাজে মিল থাকে। ধোনির মত দুই একজন হয়তো ধনী হয়, কিন্তু বাদশা নামের অধিকাংশই হয়ত ফকির। রাজারা হয় ভিক্ষুক। একজন লোকের কথা জানি যার মা বাবা ভেবেছে তার ছেলেদের নাম রাখবে ফেরেশতাদের নামে। তারা চার ভাই। তিন ভাইয়ের নাম বড় তিন ফেরেশতার নামে রাখা হলো। ছোটজনের জন্য ফেরেশতার নাম খালি আছে আর মাত্র একটা। সেটাই নাম রাখা হয়েছিল, আজরাইল!

আরবি নাম রাখতে ধর্মে বলা আছে নাকি জানি না। তবে আরবিতে রাখা নামগুলার অধিকাংশেরই উদ্ভট অর্থ। এদেশের মানুষ অর্থ না জেনেই নাম রাখে, আরবি হলেই তো হলো! যেমন, জামাল মানে উট। আমাদের জামালরা তার নামের অর্থ শুনলে অবশ্যই বিব্রত হবে। এছাড়াও হয়ত কারো নাম উম্মে মারিয়ম। আরবিতে এর মানে দাঁড়ায় ‘মারিয়ামের মা’! একটা মেয়ে জন্মাবার পরেই একজনের মা হয়ে গেল! কী এক বিপদ! আবার কারো নাম হতে পারে আবু তাহের, আরবি থেকে বাংলা করলে হয় ‘তাহেরের বাবা’! ভাবুন একবার অবস্থাটা!

তারকাদের নামে নাম রাখারও একটা প্রচলন আছে। ৮২'র বিশ্বকাপে খেলা ব্রাজিলের তারকার হাটের একজন হচ্ছে জিকো। কিছুদিনের ভিতর জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের হাজার হাজার ছেলের নাম রাখা হইছে জিকো। লাতিন এই শব্দটার মানে নিশ্চয়ই আমাদের জিকোদোর বাবা মায়েরা নিশ্চয়ই জানে না।

ব্রায়ান লারা জীবনের প্রথম সেঞ্চুরি করছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে। ২৭৭ রান। পরে লারা তার মেয়ের নামই রেখে দিছে সিডনি! টেন্ডুলকার শততম সেঞ্চুরিটা (ঐটাই সর্বশেষ) করছে মিরপুরে। ঐ ম্যাচে ইন্ডিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতেছিল। ইন্ডিয়া জিতলেও নিশ্চই টেন্ডুলকার তার ছেলেমেয়ের নাম মিরপুর রাখতো না। সবকিছু তো আর যায় না।

চে গেভারা, মাও সে তুং কিংবা কার্ল মার্ক্সদের নাম বাঙালিদের সাথে ঠিক যায় না। নইলে শত শত লেনিনের মতো এসব নামের মানুষকেও আমরা রাস্তাঘাটে দেখতাম। এসব লেনিনদের একটা বড় অংশ জীবনে বিপ্লব তো দূরের কথা, ভিড় বাসে উঠতেও পছন্দ করেন না। আর বাংলাদেশে বিপ্লব নামের ছেলেরা ঐতিহ্যগত ভাবেই ভীতু হয়। অন্যদিকে শান্ত নামের ছেলেদের নামে থানায় আট দশটা মামলা থাকে।

দেশের নাম কিংবা রাজধানীর নামে নাম আছে অনেক। আমাদের দেশের অনেক মানুষের নাম ইরান। জর্জিয়া নামের মানুষও আছে অনেক। শত শত রিয়াদ আছে। টাকা পয়সার নামের মানুষেরতো অভাব নেই। রিয়াল, লিরা, ডলার, ইয়েন।

বাংলা নামের ভিতর সবচেয়ে বেশি নাম হচ্ছে ফুল ফল পাখি রঙের নামে। এটা অবশ্য স্বাভাবিক। তবে ফুল ফল রঙ পাখির কোটা শেষ। বকুল শিউলী টগর বেলী গোলাপ জবা শাপলা চামেলী চম্পা। খুব বেশি ফুল আর বাকি নাই। ফলের নামের ভিতর আপেল কমলা আঙুর ডালিম পেয়ারা আতা। পুষ্টিকর সব নাম। শীঘ্রই নিশ্চয় স্ট্রবেরি আসবে। লাল নীল আসমানি কমলা সবুজ সব রঙও শেষ। রাসায়নিক নামও কিছু আছে। অণু কণা আয়ন।


স্কুলে আমার এক বন্ধুর নাম ছিলো জাফর। তার নাম জাফর এইটা সমস্যা না, সমস্যা হচ্ছে সে মীর বংশের ছেলে। এই মীর জাফর নাম নিয়ে সে দিব্যি প্রাইমারী স্কুল শেষ করে ফেলছে। হাই স্কুলে আসার পর স্যার তার মীর জাফর নামকে মীর মোহাম্মদ জাফর করে দিয়েছে। ভার্সিটিতে উঠার পর অবশ্য সে আরেক দফা নাম চেঞ্জ করে মীর রিগান হয়ে গেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নামে নাম। প্রেসিডেন্ট কিংবা ক্ষমতাবানদের নাম রাখাও একটা ট্রেডিশন ছিলো। লিংকন রিগান সাদ্দাম। ক্ষমতাধর মোঘল বাদশাদের নামের অনেক বেশি রিপিট হয়েছে। বাবর হুমায়ুন আকবর শাহজাহান মমতাজ জাহাঙ্গীর আওরঙ্গজেব।

কিন্তু যে নাম যেভাবেই আসুক আর যেভাবেই যাক, দিনশেষে মানুষের পরিচয় তো তার কাজেই... নামে কি বা আসে যায়!

লেখক: রকিব শাওন 

৩৩৭৬ পঠিত ... ১৯:৫২, নভেম্বর ২২, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top