যেভাবে একটি ছোট ঘটনা থেকে লিখে ফেলতে পারেন রম্য, রোমান্টিক কিংবা হরর উপন্যাস

১৮৩৮ পঠিত ... ২০:২৩, এপ্রিল ০৮, ২০১৮

ঘটনা: বাসের সামনের দিকে জানালার পাশে বসে ছিলাম। ড্রাইভার আরেক বাসের সাথে কম্পিটিশন করতে গিয়ে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসল। খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারত, গেলে আমার উপর দিয়ে যেত অনেকটাই--একদম আমার দিকটাতেই ধাক্কা লাগছিল। কিন্তু কিছুই হয় নি শেষে।

অলংকরণ: মাহাতাব রশীদ

উপন্যাস: সময়টা মধ্য দুপুর। সূর্যের তাপ তেমন না থাকলেও ঝাঁজ আছে। দমচাপা আর্দ্রতায় ঘেমে ভিজে উঠছে গা। বাসের ইঞ্জিন ঢাকা অংশের ঠিক পেছনের সিটে বসে থাকায় সেই হলকাটাও কম কষ্টের কারণ হচ্ছে না।

ঢিলে হয়ে আসা ইয়ারফোন ভাল মত গুঁজে নিতে নিতে আড়চোখে কাছাকাছি বসে থাকা মেরুন টিশার্ট পরা যুবককে আরেকবার দেখে নিলাম। হালের ভাষাতে 'কিউট' বলা যেতে পারে, দিব্যি লম্বা চওড়া। যাত্রাপথে চোখ জুড়িয়ে নেওয়ার জন্য মন্দ নয়... হঠাৎ ঘোড়ার মত লাফ দিয়ে আগে বাড়ল একতালে চলতে থাকা বাস। তীব্র ঝাঁকুনিতে সিট থেকে প্রায় উড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম আমি, কোনোমতে জানালার নিচটা চেপে ধরে সামলালাম নিজেকে। পরক্ষণে সরিয়ে নিলাম হাতটা- আমাদের বাসের গা ঘেঁষে সামনে এগোচ্ছে আরেকটা বাস। হাত টেনে নিতে আর এক মুহূর্ত দেরি হলেই অর্ধেক আঙুল থেঁতলে যাওয়া বিচিত্র ছিল না।

প্রতিযোগিতার চেষ্টাটা এখন স্পষ্ট। রাস্তা খুব বেশি ফাঁকা বা চওড়া নয়, এর মাঝেই একটা বাস আরেকটাকে কাটিয়ে সামনে থাকতে চাইছে প্রাণপণে। সামনের দিকে বসে ড্রাইভারের মুখের এক পাশ দেখতে পাচ্ছি আমি, সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে আগে বাড়ল সে- পেছনে ফেলে দিতে চাইছে অন্য বাসটাকে। অন্য বাসটা আকারে বড়, ওজনে ভারি এবং এক চুলও ছাড় দিতে রাজি নয়। সামনে এগোল ওটাও, ধাতব ঘর্ষণের তীক্ষ্ণ শব্দে মেরুদণ্ড শিরশির করে উঠল। গায়ে গায়ে লেগে সামনে যেতে চাইছে দুটো বাস, যাত্রীদের চিৎকার শুরু হয়েছে দুই জায়গাতেই, হৈচৈ, এরই মধ্যে কুৎসিত একটা সংঘর্ষের শব্দে কোলাহল উঁচু হয়ে উঠল আরো দুই পর্দা। তারপর হঠাৎ রাস্তা খানিকটা ফাঁকা পেয়ে একটানে বেরিয়ে গেল অন্য বাসটা।

জানালা থেকে দূরে হেলে শরীর শক্ত করে বসে ছিলাম, দম আটকেছি কখন নিজেও জানি না। যাত্রীদের উচ্চস্বরে ড্রাইভারকে গালাগালির মাঝে বড় নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসলাম সাবধানে। ওড়না, ব্যাগ টেনে গোছাতে গোছাতেই টের পেলাম আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে মেরুন টি-শার্টের যুবক।

 

রম্য: 'আপু, আপনি ঠিক আছেন?' দৃষ্টিতে দুশ্চিন্তা নিয়ে বললো ছেলেটা।

আপু? আপু?? এই দুর্ঘটনায় যতটা আহত হয়েছিল আমার স্নায়ু, 'আপু' ডাকটা যেন তার চেয়ে শতগুণ আঘাত করল আমাকে...ব্লা...ব্লা...এই যদি হয় অবস্থা, এর চেয়ে মরণও ভাল ছিল...ব্লা...

 

রোম্যান্স: 'আপনি ঠিক আছেন তো?' যুবকের চোখে অদ্ভুত মায়া। এতক্ষণ ঠিক ছিলাম, জানি না কেন এখন আমার আঙুল কাঁপছে অল্প অল্প। 'হ্যাঁ...'

-'আপনাকে দেখছিলাম। বেশ শক্ত ছিলেন।' হাসলো ছেলেটি।

- 'এই হৈ চৈ এর মধ্যে আমাকে দেখছিলেন?'

-'কিছু মানুষের দিকে চোখ পড়লে অন্যদিকে ঠিক খেয়াল থাকে না যে!'....

ব্লা ব্লা, কথার পিঠে কথা টাইপ রোমান্টিক কথোপকথন, পরস্পর প্রশংসা বিনিময়, ব্লা ব্লা, নাটকীয়তা, আরও কিছু নাটকীয়তা, ব্লা ব্লা, বাসর রাত।

'মনে পড়ে আমাদের প্রথম দেখা হল যেদিন?... ব্লা ব্লা হ্যাপি এন্ডিং।

 

অতিপ্রাকৃত বা হরর: 'ব্যাপারটা দেখলেন তো?'

হাসার চেষ্টা করলাম আমি। 'হ্যাঁ, এত রেক্লেস চালায় আজকাল...' যুবকের মুখের ভাব দেখে থেমে গেলাম। যেন একটা বাচ্চা মজার কিছু বলেছে, এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে সে। 'কী হলো?' প্রশ্ন করলাম নিজের অজান্তেই।

বিচিত্র নিষ্ঠুর হাসি যুবকের ঠোঁটে। 'হল আমার ক্ষমতার সামান্য একটা প্রদর্শনী। এরপরের বার হয় তো...'

অশুভ তার চোখের দৃষ্টিতে কেঁপে উঠলাম আমি।

ব্লা ব্লা, মৃত্যু, ভালো-খারাপ দ্বন্দ্ব...ব্লা ব্লা।

 

সম্ভাব্য FAQ: এই রকম কোনো 'যুবক' ছিল না কি?

উত্তর: জ্বি না। আই উইশ!

১৮৩৮ পঠিত ... ২০:২৩, এপ্রিল ০৮, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top