দুনিয়ার বাঘা বাঘা সব রান্না এক্সপার্ট চোখ রাঙাচ্ছেন--বাটার চিকেন রান্নার জন্য 'ফ্রেশ ক্রিম' মাস্ট!
আমি থাকি নিতান্তই গণ্ডগ্রামে, বাটার চিকেন খাবার ইচ্ছে সেখানে বসে জাগতে পারে- কিন্তু ফ্রেশ ক্রিম পাওয়া অসম্ভব। আমি যতোই ইন্টারনেটে ফাঁকফোকর খুঁজি, কোনভাবে যদি ক্রিমের ব্যাপারটা বাদ দিয়ে বাটার চিকেন করে ফেলা যায়... ইন্টারনেট ততোই আমাকে চোখ রাঙানি দেয়- খালেদ সাইফুল্লাহ, ফাঁকিবাজি করে রান্না করার দিন শেষ। যেভাবেই হোক ফ্রেশক্রিম যোগাড় করো!
আমি ক্রিম সংগ্রহ অভিযানে বের হলাম।
দুয়েকটা সুপারশপ আমাদের এখানেও আছে। গেলাম তার একটায়।
- কী দরকার স্যার?
- ইয়ে... ক্রিম হবে নাকি?
- কী ক্রিম স্যার? কিউট? নিভিয়া?
- না না... ঐ ক্রিম না। দুধের ক্রিম হয়?
- দুধের ক্রিম হয় না স্যার। দুধের সর বেটে মুখে দিতে হয়।
- আমি মিল্কভিটা, আড়ঙের ক্রিম খুঁজছিলাম। হয় না?
সেলসম্যান আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আমার মাথা খারাপ! কিউট কোম্পানির ক্রিম থুয়ে কেউ মিল্কভিটার ক্রিম খুঁজতে পারে সেটা তার ধারনার বাইরে।
আরেক দোকানি আমাকে ধৈর্য্য ধরে বোঝালেন ক্রিম বলে কিছু নেই। বাটারকেই মানুষ আদর করে ক্রিম বলে।
আমি মরিয়া হয়ে বললাম- তবে যে রেসিপিতে ক্রিম আর বাটার দুটোই দেয়া?
- ঐ মেয়েমানুষের বুদ্ধি আরকি... একটা দিয়েই কাম হয়, দুইটা জিনিস লাগাইছে।
যার কাছে রান্নাবান্নার ব্যাপার মানেই মেয়েমানুষের বিষয়, তার সাথে কথা আগানো বুদ্ধিমানের কাজ না। আমি রাস্তা ধরলাম।
হাঁটতে হাঁটতেই মনে এলো সেই পুরাতন নীতিগল্প-
এক লোক গেছেন বিদেশ-বিঁভূইয়ে। রাত গভীর। কোথায় থাকবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। ঠুকঠুকালেন এক বাসায়।
- কী চাই?
- ইয়ে আপনার বাসায় থাকার একটু জায়গা হবে?
- দেখো ভাই, আমার ঘরে সেয়ানা মেয়ে আছে। অন্য বাসায় দেখো।
পরের বাসায় ঠুকঠুক।
- কী চাই?
- ইয়ে একটু থাকার জায়গা?
- বলো কী? ঘরে সেয়ানা মেয়ে। জায়গা দেই কোথায়?
মুসাফির ভেবে দেখলো সকল সমস্যার মূলে এই সেয়ানা মেয়েই। কাজেই আগে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তৃতীয় দরজায় ঠুকঠুক।
- কী চাই?
- ইয়ে, আপনার ঘরে সেয়ানা মেয়ে আছে?
- কেন? কী দরকার?
- না আমি একটু থাকতাম...
ঐ মুসাফিরের আর মারের চোটে কারো বাসায় থাকার সৌভাগ্য হয়নি। হাসপাতালে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিলো।
এই গল্পের মোরাল হলো- অযথা প্রশ্ন করতে যেও না। যেখানে প্রশ্ন না করলেও চলে, সেখানে খালি দেখে যাও। প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।
আমি পরের দোকানে দেখার পথ ধরলাম। ফ্রিজে উঁকি দিলাম- কোক-ফান্টা ছাড়া কিছু নেই। দুধের সেকশনে উঁকি দিলাম- ওই মাখন-দুধ-পনির। বাঙালি ঐ খেয়েই তেলতেলে হয়ে উঠছে।
সবকিছুতে উঁকি দিচ্ছি দেখে ম্যানেজার শুধালেন- কী চাই?
আমি মাথা নাড়লাম।
ম্যানেজার বললেন- কী নিতে হবে মনে পড়ছেনা? সাহেব কোন কাগজে লিখে দেননি?
আমি হতভম্ব! নিজের চেহারা নিয়ে আমার ধারনা ছিলো। কিন্তু সেটা যে আরেকজনের ফুটফরমাশ খাটার মতো তা আমিও চিন্তা করিনি! হে ফ্রেশক্রিম, তুমি আর কত ভোগাবে?
একেবারে শেষ ভরসা হিসেবে গেলাম শেষ দোকানটায়। হুজুর ভদ্রলোকের দোকান বেশ চালু। প্রচুর সৌখীন জিনিসপত্রে ভর্তি। ক্রিমের কথা শুনে তিনি বললেন- সে তো ডানোর হয় আর নেসলের হয়। মিল্কভিটা কোথায় পেলেন?
আমি বললাম- তাহলে ডানোই দিন।
দোকানী মাথা নাড়লেন- ডানো তো নেই! স্টক শেষ কালকে পাবেন।
আমি হায় হায় করে উঠলাম। বাটার চিকেন খাবো তো আজকে। কালকে আমি ক্রিম দিয়ে কী করবো? মুখে মাখবো?
দোকানী মাথা নাড়লেন। তারপর বললেন- ওহ, বাটার চিকেন? তাহলে তো ক্রিম লাগবেই!
এক কাজ করেন। মোজারেলা চিজ গ্রেট করে দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বালে রাখেন। ক্রিমের কাজ হয়ে যাবে।
আমি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকালাম- আপনি ঠিক জানেন তো?
- আরে আপনি করেই দেখেন না। আচ্ছা আচ্ছা দাঁড়ান... আরেকটা বুদ্ধি দেই। আমি ঘরে এইভাবেই বানাই। বাটিতে ঘি নিয়ে তাতে গুঁড়া দুধ ঢেলে আচ্ছা করে ঘুঁটা দেন। ঘুঁটার চোটে ক্রিম উঠে যাবে, তাতেও কাজ চলবে।
যেখানে আমি মানুষকে ক্রিমই চেনাতে পারি না, সেখানে ক্রিমের বিকল্প দু'টা চমৎকার রেসিপি নিয়ে আমি তখন অভিভূত। সফল অভিযান শেষে বিকেলের ক্রিমরঙা আকাশে আমি বাড়ি ফিরলাম।
কেমন হলো বাটার চিকেন? সেকথা বরং থাক। এমনিতেই দুর্নাম রটে গেছে যে আমার মুখের রুচি ভালো। যা খাই তাতেই আহা-উহু।
আর তার থেকেও বড় কথা, নিজের রান্নার তারিফ আর নিজের মুখে করি কিভাবে বলুন?
সবাইকে ভরপেট বাটার চিকেনে পরিতৃপ্তির সাথে শুভরাত্রি!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন