মামার যে গল্পে খাওয়া নিষেধ

২২৬৭ পঠিত ... ১৭:৩২, অক্টোবর ২৫, ২০১৭

অলংকরণ: আয়ান

- মামা?

- উম?

- গল্প বলো।

- কীসের গল্প? রাজা-রাণী? হাতি-ঘোড়া? চোর-ডাকাত? রাক্ষস-খোক্কস?

- রাজা-রাণীর গল্প বলো।

- এক দেশে ছিলো এক রাজা। দোর্দণ্ড প্রতাপ সেই রাজার। রাজার ভয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খেতো। 

সেই রাজা বসিয়েছেন দরবার। তাতে এই কথা, সেই কথা করে গেলো দুপুর হয়ে! রাজা গেলেন রাণীর মহলে খেতে। থালাতে করে এলো আফগানী নান। তাতে পাহাড়ের মতো ফুলে ওঠা ক্রিসপ। মাঝের দিকে একটু মাখন মাখন স্বাদ! সাথে এসেছে ভেড়ার বাচ্চার রেশমি কাবাব। একটু ঝাল ঝাল স্বাদ, আবার ক্যাঁচক্যাঁচ করে চাবালে মিষ্টি মিষ্টি লাগে। রাণী গ্লাসে ঢেলে দিলেন একটু পুদিনার গন্ধে ঝাল মতো বোরহানী... 

- মামা... এইসব না! টোনাটুনির গল্প বলো। 

- আচ্ছা, ঠিক আছে। এক ছিলো টোনা, এক ছিলো টুনি। টোনা একদিন টুনিকে বললো, টুনি, পিঠা করো।

 টুনি বললো, তাতে তেল লাগবে, নুন লাগবে, ঘি লাগবে, আচার লাগবে, গুড় লাগবে, কুরানো নারকেল লাগবে। তারপর মাখামাখা করে মাংসের সাথে যা জমবে না... 

- এইসব শুনব না। চোরের গল্প বলো। 

- চোর গেছে চুরি করতে ডাব। গাছে উঠে একটা ডাবে ফুটো করে পাইপ দিয়ে দিয়েছে টান, মাথা ঝিমিঝিম করে উঠলো! আহা... কী যে মিষ্টি পানি!! চোরের অন্তর হু হু করে উঠলো। আল্লাপাক এতো মিষ্টি পানির কুদরত দিয়েছেন আর সে কিনা আল্লার দুনিয়ায় চুরি করে বেড়ায়? হু হু করে কাঁদতে কাঁদতে আবার সে আবিষ্ট হলো মিষ্টি পানির অবগাহনে... 

- মামা, তুমি মারামারি ফাইটিং কোন গল্প জানো না? পুলিশ-টুলিশের? 

- আরে তুই বিখ্যাত গোয়েন্দা ফেলুদার নাম শুনিসনি? ফেলুদা একবার দার্জিলিং গিয়েছেন, সাথে তোপসে, জটায়ু। দার্জিলিংয়ের ম্যালে বসে জটায়ু চিকেন মমোর অর্ডার দিলেন! হু হু করা শীত। তার মাঝে গরম ভাপ ওঠা মমো, সাথে প্রচণ্ড ঝাল আগুন রঙা সস। ওদিকে ফেলুদা ততোক্ষণে থুকপার বাটিতে চামচ ডুবিয়েছেন... 

- মামা? তুমি বাচ্চাদের গল্প জানো না? যে গল্পে খাওয়া খাদ্য নেই? 

- জানবো না কেন? আলবৎ জানি! এক ছিলো ছোট বাবু। মামা তাকে কোলে করে একটা দোকানে নিয়ে গেলো। দোকানের ফ্রিজে ইগলুর নতুন এক্সোটিক অ্যালমন্ড আইসক্রিম। আহ... ষাট টাকায় যেন অন্যরকম খাঁটি দুধের স্বাদ। বাবু আইসক্রিম খেতে চাইলো। মামা কী করলো জানিস? আইসক্রিম নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো! 

- কেন কেন? ছুঁড়ে ফেলে দিলো কেন? 

- কারণ এই গল্পে খাওয়া-খাদ্য নিষেধ! 

- ও... আচ্ছা তারপর বলো কী হলো... 

- তারপর আর কী? চিপসের সেরা হলো চিজ পাফ। অনেকটা আগের কালের কাঁচের বাকসে রাখা ছোট ছোট বাতাসার মতো। মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়, কিন্তু জিভে স্বাদ লেগে থাকে। মামা ঐ চিপস কিনে নর্দমায় ফেলে দিলো। 

- ও আচ্ছা... গল্প কি এখানেই শেষ? 

অলংকরণ: আয়ান

- না, তারপর মামা নেসলের মিল্কিবার হাতে নিলেন। ঐ জিনিস কামড় দিলে মনে হয় দাঁতগুলোও দুধের হয়ে গেছে! কী পবিত্র ভাব একটা মনে আসে! 

- মামা, ঐটাও কি মামা ফেলে দিবে? 

- তুই কি চাস? 

- আমি চাই, ঐটা মামা বাবুকে কিনে দিক। বাবু মিল্কিবার খাবে। 

- বাবু খাবে? 

- হুঁ

অতঃপর মামা-ভাগ্নে রাত সাড়ে এগারোটায় মিল্কিবারের সন্ধানে বেরুলো। আমার নটে গাছটি ফুরোলো...

২২৬৭ পঠিত ... ১৭:৩২, অক্টোবর ২৫, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top