ডাক্তার ফ্রম জিপিআর মোড়

২৮৪ পঠিত ... ১৮:৩২, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫

24 (4)

রাফায়েলের কিছুক্ষণ পরপর নার্ভাস ব্রেকডাউন হচ্ছে। জীবনে অসংখ্য ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করলেও আজকের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। ঘড়িতে তখন দশটা পাঁচ। অবশ্যই রাত। কিছু কিছু জিনিস সূর্যের আলোয় ঘটা নিষেধ। এতে করে সূর্যের অবমাননা হয়। সম্ভাবনা বলছে, এমন কিছুই ঘটবে আজ।
রাফায়েল দাঁড়িয়ে আছে গুলশান প্লাজা রেঁস্তোরার সামনে। তার পরনে সাদা শার্ট, এখনও ইস্ত্রির ভাজ নষ্ট হয়নি। চাপা প্যান্টে রাফায়েলের টল, ডার্ক, হ্যান্ডসাম ফিগার আরও আকর্ষণীয় লাগছে। কোমড়ে গুচি GG মরমন্টের ওয়াইড বেল্টের রেপ্লিকা, গলায় অ্যান্টিকের একটা চেইন। রাফায়েল এই মুহূর্তে চিন্তিত পকেটের সানগ্লাসটি পরবে নাকি পকেটেই রাখবে তা নিয়ে। প্রোটোকল অনুযায়ী, তার এখন টম ফোর্ডের রেপ্লিকা সানগ্লাসটি পড়ে চুইংগাম চিবোনোর কথা। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেছে অন্য জায়গায়।
রাফায়েল চশমা ছাড়া চোখে দেখে না। এক চোখে পাওয়ার- ৩.৫০, আরেক চোখে- ৪.০০। সানগ্লাসে পাওয়ার অ্যাডজাস্ট করা নেই। চশমা খুলে ফেললে সে মোটামুটি অর্ধ-কানা। হাই পাওয়ারের রিমলেস চশমাতে তাকে লাগছে অর্ধেক ফাকবয়, অর্ধেক নার্ড।
রাফায়েল ঘড়ির দিকে তাকালো। ঘড়ি বলছে, মাত্র দুই মিনিট পার হয়েছে। কিন্তু রাফায়েলের মনে হচ্ছে আস্ত দু-ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এই টাইম ডাইলেশনের সাথে সে অভ্যস্ত নয়। ঘন ঘন তার মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে, কপালে জমা হচ্ছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
রাফায়েলের আসল নাম রফিক উদ্দিন। কর্ম পরিচয়সহ বললে, ডা. রফিক। কিছুদিন আগেই FCPS পাশ করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের সার্জারি বিভাগে ট্রেইনি হিসেবে ঢুকেছে। কিন্তু ঢাকা শহরে ৩৫ হাজার টাকায় কী হয়? টাকার অভাবে বিয়ে করতে না পারার কষ্ট, বাড়িতে টাকা না পাঠাতে পারার কষ্ট, নিজের জন্য একটা বাইক কিনতে না পারার কষ্ট—সব কষ্টেরা মিলে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে জিপিআর মোড়ে। অন্যান্য হাসপাতালে খ্যাপ মেরে কিছু বাড়তি পয়সা হয়তো যোগান হতো— কিন্তু হিসাব করে রাফায়েল দেখেছে—হাসপাতালে খ্যাপের চেয়ে গুলশানের খ্যাপে সে লাভবান হবে। সাথে একটু আনন্দ আশা করলেও ক্ষতি নেই। পৃথিবীভর্তি মানুষের এত আনন্দ, এক টুকরো আনন্দ কি সে পেতে পারে না?
এই আইডিয়া সে পেয়েছে ফেসবুক থেকে। দাঁড়িয়ে থাকাতে গিয়ে রাফায়েল টের পেলো তার আত্মসম্মানবোধ এবং অহং মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। তবুও রাফায়েল, মানে রফিক নিজেকে সামাল দেয়। টাকাটা যে তার ভীষণ প্রয়োজন!
রাফায়েল দাঁড়িয়ে আছে।
মনে মনে ১০০০ থেকে ১ পর্যন্ত ৩ দিয়ে বিভাজ্য সংখ্যাগুলো গুণছে। এতে তার মন শান্ত হয়। ৬৯৩ এ আসা মাত্রই একটা ডিপ পার্পল রঙের মার্সিডিজ তার পাশে এসে থামলো। তিন সেকেন্ড থেমে ছিল সর্বোচ্চ। টানটান উত্তেজনা তখন রাফায়েলের মনে। কিন্তু জানালার গ্লাস নামল না। শোঁ করে যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে গেল গাড়িটি।
গলা খাঁকারি দিয়ে গুলশানের রাস্তায় কাশিসহ একদলা থুতু ফেলে বড়লোকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল রাফায়েল। ঠিক তখনই—মানে থুতু মাটি স্পর্শ করা মাত্রই আরেকটি গাড়ি এসে থামল। ডিপ মেরুন রঙের টয়োটা। জানালার কাঁচ নামল। ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে তরুণীর সুসজ্জিত মুখ। সুগন্ধির ঘ্রাণে ভেসে যাচ্ছে রাফায়েল। পরম বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল তরুণীর চোখের দিকে। রহস্যময় তবু কী পরিচিত সেই চোখ!
রাফায়েল ভেবেছিল মেয়েটি তাকে মেজারমেন্ট, ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সসহ নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবে। কিন্তু এসবের কিছুই হলো না।
মেয়েটি মিষ্টি হেসে শুধু জিজ্ঞেস করল,
: ডু য়্যু স্মোক অর ড্রিংক?
রাফায়েল 'ইয়েস' বলতে গিয়ে ভুলে 'নো' বলে ফেলল। স্লিপ অব টাং।
'নো' বলার পরই রাফায়েলের মনে হলো গাড়িটা এক্ষুণি দৌড় দিবে। প্রটোকল অনুযায়ী তার 'ইয়েস' বলার কথা।
আশ্চর্য ব্যাপার হলো, মেয়েটি 'নো' শুনে ভীষণ খুশি হয়ে বলল, পারফেক্ট! প্লিজ গেট ইন...
দরজা খুলে গেল। খুশিতে গাড়িতে উঠল রাফায়েল। মেয়েটিকে তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
মনে হচ্ছে তার ভাগ্য আজ সুপ্রসন্ন। আশ্চর্য! তার নার্ভাসনেসও কোথায় যেন বিদায় হয়েছে!
গাড়িতে ঢুকা মাত্রই রাফায়েলের নাকে ঠেকলো বোটকা একটা গন্ধ। এরপরই... এরপরই সব অন্ধকার।
পেছন থেকে কারা যেন কালো মুখোশ পরিয়ে শুরুতেই বেধরক মারল। প্রায় অজ্ঞান হবার আগে মাথায় চাঁটি দিয়ে বলল, নাম বল
রফিক ভয়ে ততক্ষণে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তার মনে হচ্ছে, এমনকি কি হবার কথা ছিল? সে প্রোটোকল মনে করার চেষ্টা করে। দলগত কিছু নয়তো আবার? রফিক সম্ভাবনার কথা ভাবতেই ভয়ে কুঁকড়ে উঠল।
কাঁধে প্রচণ্ড আঘাত করে কেউ একজন আবার বলল, ওই হালা নাম ক
রফিক অনেক কষ্টে বলল, র...ফি...ক
রাফায়েল থেকে কখন রফিক হয়ে গেছে সে খেয়াল করেনি।
গাড়ির পেছন থেকে চার পাঁচজন পুরুষের গলা ভেসে আসছে। কী কথা বলছে রফিক বুঝতে পারছে না। অনেক দূর থেকে ভেসে আসা শব্দের মতো শোনাচ্ছে।
এর মধ্যে একজন বলল, ওস্তাদ এই হালার লাংস, লিভার ফেরেশ আছে। গোডাউনে চালান করি, কী কন?’
ওস্তাদের কোনো কথা শোনা গেল না।
রফিক ডুকরে কেঁদে উঠল।
সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, প্লিজ আমাকে যেতে দিন। আমি একজন ডাক্তার
সেই প্রথম ওস্তাদকে কথা বলতে শোনা গেল। ভারিক্কি গলায় কেউ একজন বলল, তাইলে হালার বেরেন ডাও লইস...

২৮৪ পঠিত ... ১৮:৩২, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top