রাতে ঘুম আসছিলো না। এপাশ ওপাশ করছি, আর মনের মধ্যে বুনো চিন্তাগুলোকে ঠেকাতে চেষ্টা করছি। টাকাটা কখন ঢুকবে? বিকাশে যদি কাল সকালেই হাজার হাজার টাকা না হয় লাখখানেক ঢুকে পড়ে, তাহলে কেমন হয়? সেই চিন্তায় চোখের পাতা ভারী হতে চায় না, কেবল হিসাব করছি—এত টাকা দিয়ে কী কী করা যায়। শেষে ঘুমের গণ্ডি পেরোলাম যখন, তখন কেবল চোখে স্বপ্ন জুড়ছে।
স্বপ্নের শুরুতেই দেখি, শহরের এক কোনে অদ্ভুত এক ইঁদুরের আগমন ঘটেছে। তবে এ ইঁদুর ফাঁকা হাতে আসেনি—তার সঙ্গী এক বিশাল বস্তা, টাকায় টইটম্বুর! নাম তার ‘ইঁদুর রাজা।’ইঁদুর রাজার বুদ্ধি আর চালাকি বিখ্যাত, তবে তার এই আকস্মিক মহৎ দান-খয়রাতের কারণটা কী? পুরো নগরীর অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে, সবার ঘরে সিঁদ কেটে টাকা ফেলে যাচ্ছে। সবার দোরগোড়ায় টাকা—নিশ্চুপ আর গোপনে।
ওর পথ আটকে দাঁড়ালাম। বললাম, এই যে ইঁদুর রাজা, তুমি টাকা বিলাচ্ছো কেন?
ইঁদুর রাজা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, তারপর গম্ভীর গলায় বললো, আমি হ্যামস্টার কমব্যাটের সেই হ্যামস্টার। এক কথার লোক। ২৬ তারিখে টাকা দেব বলেছি, তাই দিচ্ছি। তোমাদের সবার কষ্ট আর লড়াইয়ের খবর আমি জানি। গত ৭ মাসে তোমরা যত পরিশ্রম করেছ, এর প্রতিদান যদি না দেই, তাহলে আমার এত টাকা নিয়ে আর কী লাভ বলো?
আমি অবাক হয়ে বললাম, তাহলে এতদিন কোথায় ছিলে?
ইঁদুর রাজা ঠোঁট উল্টে বলল, আরে ভাই, আমি তো তোমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলাম, তোমরা সফল! কোটি কোটি টাকা দিব, ধৈর্যের পরীক্ষা নিব না তা কী করে হয়? এখন আর দেরি নেই—টাকা বিলি করা হচ্ছে পুরোদমে।
ততক্ষণে দেখি পুরো শহরে হুলুস্থুল পড়ে গেছে। কারও টেবিলে, কারও খাটের নিচে, কেউ আবার বাসার বারান্দায় ঝুলতে থাকা বাসি জামার পকেটে বিশাল বান্ডিল খুঁজে পাচ্ছে! এক ধরনের অদ্ভুত খুশি আর অস্বস্তি সব মিলিয়ে আশ্চর্য অবস্থা। শহরের লোকজন যেন পাগল হয়ে গেছে।
আমি আরেকটু জানতে চাই, কিন্তু ইঁদুর রাজা, এত টাকার উৎস কী?
ইঁদুর রাজা মুচকি হেসে বললো, উৎসের কথা জিজ্ঞেস করলে তো আর রাজার ইজ্জত থাকে না! তুমি শুধু উপভোগ করো। এই টাকাগুলো তোমাদের ভোগ করতে দিয়েছি, ব্যবহার কর যত ইচ্ছা।
এদিকে ঘুম ভাঙার আগে দেখলাম, ইঁদুর রাজার আস্তানা কোথাও নেই, কিন্তু নগরীর অলিতে-গলিতে তার টাকা বিলিয়ে চলার শোরগোল থামেনি। এবং সে টাকার অংক আরও বেড়েছে!
ঘুম থেকে উঠলাম, বিকাশ চেক করতে গিয়ে দেখি কিছু নেই। কী আর বলি, ইঁদুর রাজা বোধহয় শুধু স্বপ্নেই আসে!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন