এক.
গফুর সারাদিন গৃহের অভ্যন্তরে বসিয়া থাকে। কোনো কিছুতেই তাহার ভালো লাগে না। কী করিবে না করিবে তাহা ভাবিতে ভাবিতে গফুর তাহার লুঙ্গি টাইট করিয়া বাঁধিয়া ব্রেকিং নিউজ দেখিতে লাগিলো।
এরই মধ্যে গফুরের স্ত্রী আসিয়া মুখ ঝামটা মারিয়া বলিল, ‘বাজার কি তর্করত্ন আসিয়া করিবে? বেলা যে বহিয়া গেলো, বলি সে খেয়াল আছে?’
গফুর ঢোক গিলিয়া দুটি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া তড়িৎ বেগে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়া বলিলো, ‘তোমার এই অসময়ের উপস্থিতি আমাকে যথেষ্ঠ প্যাড়া, থুক্কু, পীড়া দিলো আমেনার মা। এহেন উপস্থিতি কাম্য নহে।’ কিন্তু স্ত্রীর রক্ত চক্ষু দেখিয়া গফুর নিশ্চুপ হইয়া গেলো। সে দ্রুত বাজারের পথে হাঁটিলো।
দুই.
গফুর বাহির হইবার পর ভাবিলো, এহেন বাজার করিয়া আর কতদিন। মহেশের কথা তাহার হৃদয়ের গহীনে বাজিতে লাগিলো। মহেশ নিয়ে শতেক সমস্যা থাকিলেও সেই জীবনে যথেষ্ট অ্যাডভেঞ্চার আসিয়া পূঞ্জিভূত হইতো।
তক্ষুনি গফুর 'ডেসপারেটলি সিকিং গরু' নামক একখানা গ্রুপে ঢুকিয়া লিখিলো, 'মহেশ টাইপ গরু কিনিতে কোথায় যাইবো?'
জনৈক ডেইরি ফার্মের মালিক লিখিলো, ‘বেনাপোল বন্দরের পাশে যশোর শহরে ভালো জাতের মহেশ পাওয়া যাইবে।'
কমেন্ট খানা পড়িয়াই গফুর যেন নতুন মহেশের কামনায় আরও ডেস্পারেট হইয়া উঠিল। গফুর দ্রুত হানিফ বাসের টিকিট কাটিয়া তাহাতে চাপিয়া বসিয়া মহেশ কিনিবার উদ্দেশে রওয়ানা হইলো।
তিন.
পথিমধ্যে খুলনায় আসিয়া গফুর চেকইন দেয়ার উদ্দেশ্যে রেস্টুরেন্টে ঢুকিলো। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! গফুর দেখিলো, মোবাইলটি অদ্ভুত চার্জহীনতায় ভুগিতেছে।
বিল পরিশোধ করিয়া গফুর আবারও হানিফের গাড়িতে চাপিয়া বসিলো। গফুরের মাথার ভিতরে দারুণ এক কবিতা ঘুরিতে লাগিলো...
যশোর যাইব আমি
মনে লাগে বেশ
কই আছো তুমি বলো
ও প্রিয় মহেশ!
চার.
গফুরের কন্যা আমেনা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সে অবাক হইয়া বলিলো, বাবা তো পূর্বেও বাজার করিতে বাহির হইয়াছে। এত বিলম্ব তো হয় নাই।
আমেনা তাহার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাবার নিখোঁজ সংবাদ লিখিয়া দিলো। থানা পুলিশ হইলো। ব্রেকিং নিউজ আসিলো, ‘গফুর নিখোঁজ’। ফেসবুক সেলিব্রেটিরা এই নিয়ে নানা রকম গরু খোঁজা অর্থাৎ গবেষণা করিতে থাকিলো। গফুর হইয়া উঠিলো টক অব দ্য টাউন!
পাঁচ.
অবশেষে থানা পুলিশ এবং নানারকম ফেসবুক স্ট্যাটাসাদি ও নানাবিধ গবেষণার পর পুলিশ যশোরের সন্নিকটে আসিয়া গফুরকে খুঁজিয়া পাইলো। গফুরের মহেশ কেনার আকুতি সাঙ্গ হইলো। গফুর এত করিয়া বোঝায়, আমি মহেশ খুঁজিতে যাচ্ছি। এ বেলা ক্ষান্ত দে বাপ।
কিন্তু পুলিশের কানে আর সে কথা ঢুকিবে কেন! মহেশের প্রতি তাহাদের মনোভাব ব্রাক্ষণ জমিদারের মতই। অবশেষে বিপরীত পথে গফুর ফিরিয়া আসিলো নিজ বাসভবনে।
বি:দ্র: বাজার না করে আনার জন্য সে বেলা গফুরের স্ত্রী এক চোট ক্ষেপিয়াছিলো।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন